ফারুক আহমেদ, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি : মাগুরাতে সর্বোচ্চ প্রভাব খাটিয়ে এখনো সরকারী নীতিমালা কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বছরের পর বছর একই কর্মস্থলে থাকার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মাগুরা সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ঝুমুর সরকার। সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার হিসেবে মাগুরা সদরে যোগদান করার পরই একের পর এক দ্বায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
একই স্থানে বছর পর বছর চাকরি করলেও তাকে তার কর্মস্থল সদর উপজেলার কেউ চিনে না বললেই চলে। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী বয়স্ক বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা ও উপবৃত্তি সহ সব ধরনের ভাতা বাস্তবায়ন হয়ে থাকে ইউনিয়ন কমিটির (রেজুলেশনসহ) সুপারিশের ভিত্তিতে উপজেলা ভাতা বাস্তবায়ন কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদনের পর। কিন্তু উক্ত অফিসার যোগদানের পর থেকে এ কার্যালয়ের নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে ক্ষমতাসীন সরকারের দলীয় লোকজনের ভাতা বাস্তবায়ন করতেন। প্রভাব খাটিয়ে সফটওয়্যারে নিজে কাজ না করে ভাতাভোগীদের তথ্য ভিত্তিক সফটওয়্যার (MIS) ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য ভান্ডার (DIS), নিজের (অফিসারের) আইডি ও পাসওয়ার্ড কার্যালয়ের অফিস সহকারী আশিকুল কায়েসের কাছে রেখেছেন দীর্ঘদিন। অফিসারের আইডি ও পাসওয়ার্ড শেয়ার না করার ব্যাপারে সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক বার বার পত্র জারি করা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট অফিসার তা অগ্রাহ্য করেছেন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছর থেকে শুরু করে ২০১৯-২০, ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২, ২০২২-২০২৩, ২০২৩-২০২৪ ও ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রকার ভাতার ইউনিয়ন কমিটি ও উপজেলা কমিটির অনুমোদনকৃত কোন তালিকা অফিসে নেই। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মারা যাওয়া বিভিন্ন ভাতাভোগীর প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও করেছেন চরম অনিয়ম। ভাতা প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও কোন অনুমোদিত তালিকা সংশ্লিষ্ট অফিসে নেই। সংশ্লিষ্ট অফিসার তার অফিস সহকারীর মাধ্যমে নিজের খেয়াল খুশিমত লিস্ট অনুযায়ী ভাতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেন। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সারা বাংলাদেশে ভাতাভোগিদের লাইভ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়। এ কার্যালয় এর ভাতাভোগিদের লাইফ ভেরিফিকেশন করা হলেও তা ছিল নিতান্তই লোক দেখানো। লাইভ ভেরিফিকেশনে অসংখ্য ভাতা ভোগী মৃত, নিরুদ্দেশ, অনুপস্থিত পাওয়া গেলেও নিয়ম অনুযায়ী তাদের প্রতিস্থাপন করা হয়নি। যার ফলে একদিকে যেমন হাজার হাজার মৃত, নিরুদ্দেশ ভাতা ভোগীদের মোবাইল একাউন্টে পেরোল প্রদান করে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করেছেন। অন্যদিকে উপজেলার হাজার হাজার বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতাপ্রত্যাশীদের প্রাপ্ত ভাতা থেকে বঞ্চিত করেছেন। অফিসে কোন ভাতাভোগী ভাতা সংক্রান্ত প্রশ্ন নিয়ে আসলে তাকে সরাসরি উপজেলা পোস্ট অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অসহায় ভাতাভোগিরা অনেক সময় পোস্ট অফিস থেকে তাদের প্রশ্নের সঠিক সমাধান না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়িতে ফেরেন। এছাড়াও প্রতিবছর অফিসের বিভিন্ন কোডে সরকারী অর্থ বরাদ্দ করা হলেও সে অর্থ বরাদ্দ অনুযায়ী সঠিকভাবে খরচ না করে ভুয়া বিল করে টাকা তুলে নেওয়া হয়। অফিসের রেজিস্ট্রার ও নথিপত্রের সাথে ক্রয়কৃত দ্রব্যের ব্যাপক অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়।
গত ১৫/১২/২০২৪ ইং তারিখে সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রশাসন-১ শাখা (গেজেটেড) পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) উপসচিব শাহেদ পারভেজ সাক্ষরিত এই কর্মকর্তা ঝুমুর সরকার কে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়, মাগুরা সদর হতে সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) মাগুরাতে উপতত্ত্বাবধায়ক করে বদলী করা হয়। বদলীর আদেশে ২২/১২/২০২৪ তারিখের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তরপূর্বক বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি আজও দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি। বরং নানাবিধ তৎপরতা চালাচ্ছেন তার বদলির অর্ডার বাতিল করার জন্য। ইতিমধ্যেই এই ঝুমুর সরকার এজেন্ডা বাস্তবায়নের এ বিষয়টি মাগুরা সদর উপজেলার বিভিন্ন স্তরে জানাজানি হওয়ায় তার প্রতি স্থানীয় মানুষদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
অত্র মাগুরা সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কাজী মোঃ জয়নুর রহমান অফিসে নতুন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করলেও তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এমনকি ভাতা বাস্তবায়নের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাতাভোগীদের তথ্য ভিত্তিক সফটওয়্যার (MIS) ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য ভান্ডার (DIS), (অফিসারের) আইডি ও পাসওয়ার্ড কার্যালয়ের আইডি ও পাসওয়ার্ড নিজের কাছে রেখেছেন। এতে করে অত্র কার্যালয়ের বিপুল সংখ্যক ভাতাভোগী প্রতিদিন অফিসে এসে প্রাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়া প্রায় ৩২ হাজার ভাতাভোগীর মোবাইল একাউন্ট পরিবর্তনের আশঙ্কাও রয়েছে। গত ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ সালের তারিখ থেকে ৯ জানুয়ারি ২০২৫ সালের তারিখ পর্যন্ত মাগুরা সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সেবা দিতে ব্যাহত হচ্ছে বর্তমান সদ্য সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কাজী মোঃ জয়নুর রহমান।
ঝুমুর সরকারের এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় বিগত ২৪ সালের নির্বাচনেও তার পরিবারের লোকজন স্থানীয়দের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোট সেন্টারে গিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করে। এ বিষয়ে ঝুমুর সরকারের সাথে, আরও তথ্য জানার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মাগুরা সমাজসেবা অধিদপ্তর উপপরিচালক মোঃ জাকির হোসেন কে ভাতাভোগীদের তথ্য ভিত্তিক সফটওয়্যার (MIS) ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য ভান্ডার (DIS), আইডি ও পাসওয়ার্ড না পাওয়ার কারণে সেবা ব্যাহত হচ্ছে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন অফিসার জয়নুর আমাকে বলেছে MIS ও DIS সম্পর্কে তাকে চিঠি দিতে বলেছি এরপর সে অনুযায়ী ঝুমুর সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো ও নিচ্ছি।
Leave a Reply