অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে— ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের তিনটি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন দেশটি সফর করছেন, এমন সময়ে এই আহ্বান এসেছে।
মঙ্গলবার (১০ জুন) এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), স্পটলাইট অন করাপশন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে।
তারা যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন বাংলাদেশের প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়—যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতিতে জড়িত থাকার সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একইসঙ্গে, যুক্তরাজ্যে অবস্থিত পাচার সম্পদ উদ্ধারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তৎপরতা বৃদ্ধিরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও জবাবদিহিমূলক শাসনের এই বিরল সুযোগ কাজে লাগাতে যুক্তরাজ্যের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”
তিনি আরও বলেন, “পাচারকৃত সম্পদ ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী সংস্কার উদ্যোগের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে যে, অর্থপাচারকারীরা শেষ পর্যন্ত উৎস দেশ ও গন্তব্য উভয় স্থানেই জবাবদিহির আওতায় আসছে।”
স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুজান হাওলি বলেন, “যুক্তরাজ্য সরকার যেন দেরি না করে দুর্নীতিবিরোধী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে—যাতে অনিয়ম ও ঘুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশের সম্পদ যুক্তরাজ্য ও এর আওতাধীন অঞ্চলগুলোতে জব্দ করা যায়।”
তিনি বলেন, “এতে মামলার তদন্ত ও সম্পদ পুনরুদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সময় পাবে, এবং এটি একটি শক্ত বার্তা দেবে যে, বড় দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তরা নির্বিচারে সম্পদ পাচার করে পার পাবে না।”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের নীতিনির্ধারণী পরিচালক ডানকান হেইমস বলেন, “যুক্তরাজ্য যখন অর্থপাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তখন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ তদন্ত ও দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো সম্পদ-ও বাজেয়াপ্ত করা উচিত।”
তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপই প্রমাণ করবে যে, যুক্তরাজ্যের জবাবদিহির প্রতিশ্রুতি শুধু কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নবজাগরণকেও সমর্থন করছে।”
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দ্য অবজারভার ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের যৌথ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন সম্পদের মূল্য অন্তত ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড।
এর মধ্যে ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি এসব সম্পদ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেবেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনীতির শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার করে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়েছে।
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। একইসঙ্গে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, “অর্থপাচারের সোনালী যুগ শেষ হয়েছে।”