অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পিআর পদ্ধতিকে সামনে এনে গণতন্ত্রকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র, যা দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে আসছে। গণতন্ত্র মানে ভিন্নমতকে সহ্য করা, তা প্রকাশের সুযোগ দেওয়া এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে পিআর পদ্ধতিকে সামনে এনে এটিকে ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়; এমন বক্তব্য দেওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গণতন্ত্রকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, ‘পিআর পদ্ধতির বিষয়ে জনগণের তেমন কোনো আগ্রহ নেই, সাধারণ মানুষ এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানেও না। এটি জনগণের চেনা রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মানুষ চায় পরিচিত এলাকার প্রার্থীকে ভোট দিতে। অপরিচিত ‘দলীয় তালিকা’ ভিত্তিক ভোটিং সিস্টেম তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা অভিযোগ করেন, যখনই কোনো দল মনে করে যে একটি পদ্ধতি তাদের রাজনৈতিক সুবিধা এনে দেবে, তখনই তারা সেটিকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এটি রাজনৈতিক ঈর্ষা ও স্বার্থান্বেষী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। তার মতে, পিআর পদ্ধতির পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য হলো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা।
রিজভী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘ইসরায়েল, নেপালসহ অনেক দেশে পিআর পদ্ধতির কারণে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। এমনকি ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশেও এই পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো অপরিণত গণতন্ত্রে পিআর পদ্ধতি চালু করা হলে এটি আরও ধ্বংসাত্মক হতে পারে।’
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, অতীতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। একইভাবে পিআর পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগও বিপজ্জনক হতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ১৬/১৭ বছর ধরে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। বিএনপি ভবিষ্যতেও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথেই থাকবে। কিন্তু যদি পিআর পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় বা এটিকে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ নিয়ে যাওয়া হয়, তা কেবল শেখ হাসিনার রাজনৈতিক লাভের পথ প্রশস্ত করবে এবং দেশে পুনরায় ভয়াবহ অরাজক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।’
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হোক। পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে বরং বাস্তবসম্মত ও জনগণকেন্দ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার।’
রিজভী আরও বলেন, বিএনপি মনে করে, নির্বাচন হতে হবে; এমন একটি ব্যবস্থায় যা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায় এবং যার প্রতি মানুষের আস্থা আছে। পিআর পদ্ধতির মতো একতরফা প্রস্তাব গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেবে না, বরং আরও বিভ্রান্ত করবে। তিনি রাজনৈতিক শক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, জাতীয় স্বার্থে গঠনমূলক সংলাপ ও সমঝোতার পথে এগিয়ে আসার জন্য।
এ সময় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেনসহ দলের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।