অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতা আখতার হোসেসের উপর পঁচা ডিম নিক্ষেপ ও তাসনিম জারার ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এনসিপি। দলটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়েছে। একইসঙ্গে তিন দফা দাবি উত্থাপন করেছে এনসিপি।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্সের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি আমন্ত্রণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হয়েছেন আখতার হোসেন ও তাসনিম জারা।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘এ ঘটনা শুধু রাজনৈতিক সহিংসতার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার উদাহরণ। আমরা প্রশ্ন রাখছি—যদি সরকারি সফরের অংশগ্রহণকারীরা ন্যূনতম নিরাপত্তা না পান, তবে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কনস্যুলেট ও দূতাবাসগুলোর অস্তিত্বের যৌক্তিকতা কোথায়? তারা কাদের স্বার্থে কাজ করছে, আর কেন এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না?’
সরকারের সমালোচনা করে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয় সফররত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা প্রদানে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে অবিলম্বে দৃঢ় পদক্ষেপের দাবি জানাই।’
এনসিপির তিন দাবি হলো:
১. বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার ও নিউইয়র্ক সিটির প্রশাসনের কাছে সরাসরি অভিযোগ জানাতে হবে।
২. নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলসহ সম্পূর্ণ ফরেন সার্ভিস টিমকে অবিলম্বে চাকরিচ্যুত করতে হবে।
৩. সফরের বাকি অংশে অংশগ্রহণকারী নেতাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘উল্লেখযোগ্য যে, আখতার হোসেন ও তাসনিম জারার সাথে এই হামলার সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য সফরসঙ্গীরাও ছিলেন এবং তারাও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তোপের মুখে পড়েন, কিন্তু এই হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে মূলত এনসিপি নেতৃবৃন্দকে। জুলাই বিপ্লবের সময় যারা জীবনবাজি রেখে লড়েছিলেন, তাদের প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ হামলাকারীদের ক্ষোভ আজও থামেনি। আখতার হোসেনকে খুনি হাসিনা সরকার জুলাইতে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালায়। যিনি গণআন্দোলনের জন্য নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছিলেন, আজও সেই সংগ্রামের মূল্য দিতে হচ্ছে। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের চরম ব্যর্থতা।’
বিবৃতির শেষ অংশে দলটি স্পষ্ট করে জানায়, ‘বিদেশি মাটিতে আওয়ামী লীগের এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্যও হুমকিস্বরূপ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করছি।’
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সময় সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের কেনেডি বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়। এসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে তাকে লক্ষ্য করে ডিম ছুড়েন। এ সময় তিনি ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারার সঙ্গে। কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।
ঘটনার পর আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সেই প্রজন্ম যারা হাসিনার গুলির সামনে মাথা নত করিনি, ভাঙা ডিমে কিছু যায় আসে না। আওয়ামী লীগ আবারও প্রমাণ করল তারা সন্ত্রাসী সংগঠন।’
অন্যদিকে তাসনিম জারা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এটি ব্যক্তি আখতার হোসেনের ওপর আক্রমণ নয়, বরং তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে করা হয়েছে। এই হামলা স্পষ্ট করে দেয়, পরাজিত শক্তির ভয় ও হতাশা কতটা গভীর।’