অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে একটি জনাকীর্ণ ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে যে তারা হামাসের একটি কম্পাউন্ডকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালিয়েছে।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
ইসলাইলের এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে হামাস লেবাননের ফিলিস্তিনি শিবিরে তাদের সামরিক স্থাপনা থাকার কথা অস্বীকার করেছে এবং ইসরায়েলের দাবিকে ‘মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছে।
এএফপি’র একজন সংবাদদাতা একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের নিচতলায় অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের আগুন নেভাতে দেখেছেন।
তখন বন্দুকধারীরা উপকূলীয় শহর সিডনের উপকণ্ঠে অবস্থিত লেবাননের বৃহত্তম ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবির আইন আল-হেলওয়েতে অ্যাম্বুলেন্সগুলোর যাওয়ার পথ থেকে জনতাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ফাঁকা গুলি চালাচ্ছিল।
হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহর সঙ্গে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা শত্রুতা বন্ধ করার লক্ষ্যে গত নভেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও ইসরাইল লেবাননে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
চুক্তি হওয়ার পরও দুপক্ষের মধ্যে দুই মাস ধরে সরাসরি যুদ্ধও হয়েছে।
ইসরাইল সাধারণত বলে যে তারা ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর কর্মী বা স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। তবে এবার তারা লেবাননে হামাস কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলায় ‘১৩ জন নিহত ও আরও বেশ কয়েকজন আহত’ হয়েছেন। মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, ‘অ্যাম্বুলেন্সগুলো এখনও আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।’
রাষ্ট্রীয় জাতীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে যে খালিদ বিন আল-ওয়ালিদ মসজিদের কাছে একটি পার্কিং লটে থাকা একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে।
‘পরবর্তীতে জানা গেছে যে এই অভিযানটি’ মসজিদ এবং একই নামের একটি কেন্দ্রকেও লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে।
এএফপি সংবাদদাতা মসজিদের কোনও ক্ষতি দেখতে পাননি। অন্যদিকে একজন চিকিৎসক বলেছেন যে উদ্ধারকর্মীরা এলাকা থেকে লাশের ছিন্নভিন্ন অংশ সরিয়ে নিচ্ছেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে যে তারা ‘দক্ষিণ লেবাননের আইন আল-হেলওয়ে এলাকায় হামাস প্রশিক্ষণ কম্পাউন্ডে কর্মরত সন্ত্রাসীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।’
তারা আরো দাবি করেছে যে তারা ‘লেবাননে হামাসের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।’
কিন্তু আইন আল-হেলওয়ে ক্যাম্পে এই ‘নৃশংস হামলার’ জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘লক্ষ্যবস্তু করা স্থানটিকে তাদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি প্রশিক্ষণ কম্পাউন্ড বলে দাবি করা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।’
হামাস আরো জানায়, ‘লেবাননের ফিলিস্তিনি ক্যাম্পগুলোতে কোনও সামরিক স্থাপনা নেই।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একটি ভবনে হামলার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে, গাজা যুদ্ধের সময় হিজবুল্লাহ হামাসের সমর্থনে ইসরাইলে রকেট হামলা শুরু করে। এরপর উভয়পক্ষই কয়েক মাস ধরে পরস্পরকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায়।
প্রচণ্ড মার্কিন চাপ ও ইসরাইলি হামলার আশঙ্কায়, লেবাননের সরকার হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ শুরু করেছে এবং সমস্ত অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এপ্রিল মাসে, ইসরাইল সিডনে ভোরবেলা এক হামলা চালিয়ে হামাসের একজন কমান্ডারকে হত্যা করে। এই হামলায় তার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ও মেয়েও নিহত হয়।
মঙ্গলবারের আগে, লেবানন বলেছিল যে দেশের দক্ষিণে অন্যত্র ইসরায়েলি হামলায় দুই জন নিহত হয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী এই অভিযানের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য এএফপি’র অনুরোধের তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ অনুসারে, লেবাননে প্রায় ২ লাখ ২২ হাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থী রয়েছে।