অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়ার অন্যতম সাফল্য খেরসন দখল করা। কারণ রাশিয়ার দখলের মধ্যে এটিই একমাত্র প্রাদেশিক রাজধানী এবং বৃহত্তম ভূখণ্ড। তবে এ অঞ্চলে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তাই অঞ্চলটিকে ঘিরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের শঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
খেরসনে ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রস্তুতির ব্যাপারে দেশটির যান্ত্রিক পদাতিক ইউনিটের কমান্ডার ওলেহ রয়টার্সকে বলেন, খেরসনের পশ্চিমে পরিখা খনন করা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে রাশিয়ান শত্রুরা শীতের আবহাওয়া, লজিস্টিক লজজ্যাম এবং ঘেরাও করার হুমকির কারণে কৌশলগত বন্দরটি নিশ্চিত পরিত্যাগ করতে বাধ্য হবে।
কিন্তু তিনি বা তার লোকেরা কেউই এটা ভাবছে না যে, রাশিয়ানরা দ্রুত বা নীরবে জায়গাটি ছেড়ে দিবে। এছাড়া তারা তাদের যেতে দিতে চায় না।
ওলেহর এধরণের বক্তব্যে দিনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীরের গুরুত্বপূর্ণ শহরটিতে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধতে পারে তার কিছুটা পূর্ভাবাস পাওয়া গেছে। এই অঞ্চলটি ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়া উপদ্বীপের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে।
রুশ সেনাদের ব্যাপারে ওলেহ বলেন, ‘তারা লড়াই চালিয়ে যাবে। তারা তাদের অবস্থান রক্ষা করবে যতক্ষণ তাদের তা করার ক্ষমতা থাকবে। এটি একটি কঠিন লড়াই হবে।’
খেরসন অঞ্চলে রাশিয়ান-স্থাপিত প্রশাসনের উপপ্রধান কিরিল স্ট্রেমাসভ বৃহস্পতিবার বলেছেন, তিনি আশা করেন রুশ বাহিনী লড়াই করবে।
রাশিয়ার আরটি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত মন্তব্যে তিনি যোগ করেছেন, ‘যদি আমরা খেরসন ছেড়ে যাই, এটি একটি বিশাল ধাক্কা হবে।’
যদি খেরসনের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় তাহলে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য আগস্টের মাঝামাঝি থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির পর এটি আরেকটি ধাক্কা হবে।
দিনিপ্রোর পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর একটি স্প্রিংবোর্ড থাকবে যেখান থেকে ক্রিমিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য পূর্ব দিকে একটি ব্রিজহেড দখল করা যাবে।
ক্রিমিয়া রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগর নৌবহরের আবাসস্থল এবং কিয়েভ উপদ্বীপের পুনরুদ্ধারকে তার শপথ লক্ষ্যে পরিণত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি খেরসনে পাল্টা আক্রমণে পড়েন, তবে এটি পুতিনের জন্য একটি রাজনৈতিক অপমানও হবে। কারণ খেরসন ইউক্রেনের চারটি আংশিকভাবে অধিকৃত অঞ্চলের মধ্যে একটি যা গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অত্যন্ত ধুমধাম করে ‘চিরকাল’ রাশিয়ার অংশ হওয়ার ঘোষণা করেছিলেন।
ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র অফিসার ফিলিপ ইনগ্রাম বলেছেন, ‘প্রাথমিক দৃষ্টিতে রাজনৈতিকভাবে এটি একটি বিশাল ধাক্কা হবে এবং এর জন্য তাকে (পুতিন) সামরিকভাবে ব্যয় করতে হবে। ইউক্রেনীয়রা যদি দিনিপ্রোর পূর্ব দিকে একটি ব্রিজহেড পেতে সক্ষম হয় তবে এটি রাশিয়ানদের জন্য আরও খারাপ হবে।’
ইউরোপে মার্কিন সেনা বাহিনীর সাবেক কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন জেনারেল বেন হজেস বলেছেন, ইউক্রেনীয়রা ক্রিমিয়ায় পন্থা রক্ষাকারী রাশিয়ানদের পিষে ফেলতে সক্ষম হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, বর্তমানে মনে হচ্ছে রাশিয়ানরা ইতিমধ্যেই দিনিপ্রোর পশ্চিম তীর থেকে পর্যায়ক্রমে একটি সংগঠিত প্রত্যাহার শুরু করেছে।
Leave a Reply