অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বদলে গেছে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। মসৃণ হয়েছে চলাচলের পথ। শঙ্কা আর ঝুঁকি কাটিয়ে এখন সহজ হয়েছে জেলার সেতুগুলো। গাড়ি উঠলেই সেতুর পাটাতনের শব্দে ভয়ে আঁতকে উঠেন না যাত্রীরা। দুর্ঘটনাপ্রবণ সেই দিনগুলো এখন অতীত। গত এক যুগের ব্যবধানে জেলার সড়ক ও সেতুতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। এক দশক আগেও অস্থায়ী ‘বেইলি সেতু’ই ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র ভরসা।
পাটাতন ভেঙে প্রায়ই ঘটত দুর্ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ সেইসব সেতু এখন অতীত। সময়ের ব্যবধানে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার প্রায় সবকটি সেতুই এখন স্থায়ী পাকা। গত ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ১০০টি সেতু উদ্বোধন করেন। যার মধ্যে ৪২টি সেতুই খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের আওতাধীন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি তা উদ্বোধন করেন। পাকা সেতু হওয়ায় খুশি খাগড়াছড়ির মানুষ। বিশেষ করে গাড়ি চালক, যাত্রী-পথচারী ও এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে।
সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, ১৮৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে খাগড়াছড়ি জেলার ১০ সড়কে নির্মিত হয়েছে ৪২টি সেতু। এসব সেতুর মধ্যে রয়েছে পিসি গার্ডার সেতু ও আরসিসি সেতু। এরমধ্যে দীর্ঘতম সেতুটি হচ্ছে ‘খাগড়াছড়ি-পানছড়ি-লোগাং সড়কের লোগাং সেতু’। আর সবচেয়ে ছোট সেতু হচ্ছে চারটি। এক কথায় পাহাড়ি সড়কে এখন ‘অস্থায়ী বেইলি সেতু’ আর নেই বললেই চলে। খাগড়াছড়ির প্রায় সবগুলো বেইলি সেতু অপসারণ করে সেখানে পাকা স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে গতিশীলতা।
খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা জানান, এসব সেতুর মধ্যে রয়েছে পিসি গার্ডার সেতু, আরসিসি সেতু। এতে ব্যয় হয়েছে ১৮৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এরমধ্যে দীর্ঘতম সেতুটি হচ্ছে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি-লোগাং সড়কের ‘লোগাং সেতু’। এটির দৈর্ঘ্য ১৪৩ দশমিক ০৫৪ মিটার। আর সবচেয়ে ছোট সেতু হচ্ছে ৪টি। এগুলোর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৬ দশমিক ৫৯ মিটার।
সেগুলো হলো- জেলা সদরের কৃষি গবেষণা সেতু, দীঘিনালার হাতিমাড়াছড়া সেতু, মাটিরাঙ্গার তাইন্দং সেতু ও তবলছড়ি সেতু। এই প্রকৌশলী জানিয়েছেন, এসব সেতুর নির্মাণ কাজ ২০১৬ সালে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে শেষ হয়। ৪২টি সেতুর মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে ৯টি, দীঘিনালায় ৫টি, পানছড়িতে ১০টি, মহালছড়িতে ৫টি, লক্ষ্মীছড়িতে ৪টি, মাটিরাঙ্গায় ৩টি, গুইমারায় ২টি, রামগড়ে ২টি, মানিকছড়ি ১টি ও রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে ১টি সেতু।
সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, বর্তমান সরকারের আমলে এর আগেও খাগড়াছড়ি জেলায় ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮টি স্থায়ী পিসি গার্ডার সেতু নির্মিত হয়েছিল। এতে জেলার সড়ক ও মহাসড়কের যোগাযোগ মাধ্যম আরও নিরাপদ ও উন্নত হয়েছে। সড়ক বিভাগসূত্র জানায়, ১৯৭৬ সালে খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর আর কখনোই এত বড় বাজেটের সেতু নির্মিত হয়নি। একযোগে হয়নি এত সেতুও। এ ছাড়াও গত কয়েক বছরে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কে বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু অপসারণ করে সেখানে ইস্টার্ন ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে আরসিসি ও পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
পাকা সেতু হওয়ায় খুশি খাগড়াছড়ির মানুষ। বিশেষ করে গাড়ি চালক, যাত্রী-পথচারী ও এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। চট্টগ্রাম সড়কে চলাচলকারী বাস গাড়ির চালক রহমত উল্লাহ জানালেন, ‘বেইলি সেতুতে উঠতে ভয় লাগত। কখন ভেঙে পড়ে এমন আশঙ্কার মধ্যেই গাড়ি চালাতাম। এখন আর আগের দিন নেই। সব পাকা স্থায়ী সেতু হওয়ায় আমরা খুশি। খুশি যাত্রীরাও।’
খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় দাশ জানান, ‘এক যুগ আগেও যা ছিল কল্পনার। অস্থায়ী ‘বেইলি সেতু’ই ছিল একমাত্র ভরসা। পাটাতন ভেঙে প্রায়ই ঘটত দুর্ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ সেইসব সেতু এখন জাদুঘরে। যাত্রীরা নিরাপদে পৌঁছাতে পারছেন।’
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কংজরী চৌধুরী বলেন, ‘স্থায়ী সেতু হওয়ায় ব্যবসায়ীদের ভীতি কেটে গেছে। দুশ্চিন্তামুক্ত থেকে পণ্য পরিবহন করতে পারছেন। যা সামগ্রিক অর্থে জেলাবাসীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এটি সরকারের সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল।’
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বললেন, ‘পাকা সেতু নির্মিত হওয়ায় আন্তঃ জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বদলে যাবে জীবনযাত্রার মানও। সড়কে দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটবে। বিশেষত দুর্গম এলাকায় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতে সুবিধা বাড়বে।’
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আলনূর সালেইন জানায়, খাগড়াছড়ি জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে ১৮৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি সড়কে ৪২টি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুগুলো ইতোমধ্যে যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে গাড়ি চালক, পথচারী ও এলাকাবাসী পাকা সেতু নির্মিত হওয়ায় আন্তঃ জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বদলে যাবে জীবনযাত্রার মানও। সড়কে দুুর্ভোগ কমার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটবে। বিশেষত দুর্গম এলাকায় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতে সুবিধা বাড়বে।
সচেতন মহলের প্রত্যাশা, এ সেতুগুলো নির্মিত হওয়ায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়কের পাশাপাশি জেলার আভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, খাগড়াছড়ির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের আরও প্রসার হবে।
Leave a Reply