অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কয়েক দফা দাম বাড়ানোর পরও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য চিনি নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসজির কারণে কৃত্রিম সংকটের মুখে চিনির বাজার। সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে শত শত বস্তা চিনি উদ্ধার করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ওই অভিযানে মজুতকারী ব্যবসায়ীদের জরিমানা করে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়। কিন্তু সব ধরনের বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে চিনি বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
রমযান মাস টার্গেট করে চিনির মজুত গড়ে তুলছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকার নিত্যপণ্যের খুচরা বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আগের মতোই খোলা চিনি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্যাকেট চিনি বাজারে ছাড়ছে না রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলো। রাজধানীর কোনো একটি দোকানো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্যাকেট চিনি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্যদিকে চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের প্যাকেটকৃত লাল চিনি কালে-ভদ্রে মিললেও ভোক্তাকে নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
এদিকে নির্ধারিত দাম কার্যকর হলে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি খোলা চিনি ১০২, প্যাকেটি চিনি ১০৮ এবং চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশন বা বিএসএফআইসি’র লাল চিনি প্রতি কেজি ৯৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। সর্বশেষ বেসরকারি খাতের চিনির দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং সরকারি চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয় বিএসএফআইসি।
এর আগে বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের অনুমোদন নিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেয়। সেই সময় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এখন থেকে নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি হবে। কিন্তু দাম নির্ধারণের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বাজারে নতুন দরে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।
মূলত কারসাজি করে বাজারে কৃত্রিম সংকট জিইয়ে রাখা হয়েছে। এতে প্রতি কেজি খোলা চিনিতে অতিরিক্ত মুনাফা করা হচ্ছে ১৮-২০ টাকা। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে ভোক্তাদের। মিলার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা একে অপরের ঘারে দোষ চাপিয়ে পার পেতে চাচ্ছেন।
তথ্যমতে, গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার পরও মিল মালিকরা চিনির উৎপাদন বাড়ায়নি। এমনকি প্যাকেট চিনি বাজারে ছাড়া হচ্ছে না। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ডিও বা এসও অনুযায়ী চিনি পাচ্ছে না বলে তাদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু সেটি নিয়মিত হচ্ছে না। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম নিষ্ক্রিয় রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নিয়ে ইচ্ছে মতো চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে না, এটা ঠিকই। আর এ কারণে বাজারে অভিযান চলছে।
আগামী দিনগুলোতে অভিযান আরও জোরদার করার বিষয়ে কাজ চলছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকাসহ সারাদেশে বেশ কয়েকটি অভিযানে বস্তায় বস্তায় চিনি উদ্ধার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ঢাকার মোহম্মদপুর কৃষি মার্কেটে সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ৫৩০ বস্তা চিনি উদ্ধার করে প্রশাসন। অভিযানে সততা ট্রেডার্স ও বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ঢাকার কাওরান বাজার, ফকিরাপুল বাজার, মুগদা বড় বাজার, খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, গোড়ান বাজার এবং মালিবাগ রেলগেট বাজার ঘুরে দেখা যায়-কিছু দোকানে খোলা চিনি চিনি বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। আবার অনেক দোকানে চিনি নেই। প্যাকেট চিনির সরবরাহ নেই কোনো বাজারে। এতে করে ভোক্তারা আগের মতো বেশি দাম দিয়ে চিনি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
মালিবাগ রেলগেট কাঁচা বাজারের মুদিপণ্যের একটি দোকানে চিনির খোঁজ করছিলেন বাগানবাড়ির বাসিন্দা আসিফ মাহমুদ। তিনি জানান, কয়েক দোকান ঘুরেও চিনি পাওয়া যায়নি। অবশেষে পাওয়া গেলেও নির্ধারিত দামের ২০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। খিলগাঁও তিলপা পাড়ার কামাল স্টোরের ম্যানেজার সৈকত জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে চিনির সঙ্কট আছে।
এছাড়া কোম্পানি থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেট চিনির সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে তারা বাধ্য হয়ে খোলা চিনি বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। উল্লেখ্য, দেশে প্রতিবছর ১৮-২০ লাখ টনের চাহিদা রয়েছে। সরকারি তথ্যমতে, আগামী ৩ থেকে ৪ মাস চলার মতো পর্যাপ্ত পরিমানে চিনির মজুদ রয়েছে দেশে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে এখন চিনির দাম পড়তির দিকে। এ অবস্থায় দেশে চিনির দাম বেশি নেয়ার যৌক্তিতা নেই বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
Leave a Reply