অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দুবছর আগে চীনের সরকারি ব্যাংকিং নীতি নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য দেওয়ার পর হঠাৎ করেই নিভৃতে চলে যান বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা ও ধনকুবের জ্যাক মা। তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ফাইনানশিয়াল টাইমসের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান বলছে, পরিবারকে নিয়ে জাপানে বসবাস করছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এমনই দাবি করে দ্য ফাইনানশিয়াল টাইমস।
গণমাধ্যমটি বলে, প্রথমে অনেকে ভেবেছিলেন, ব্যাংকিং নীতির সমালোচনায় করায় জ্যাক মাকে গ্রেফতার করেছে শি জিনপিং প্রশাসন। পরে জানা যায়, তিনি গ্রেফতার ও অন্যান্য ঝামেলা এড়াতে চীন ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছেন। তবে সম্প্রতি তাকে নাকি দেখা গেছে জাপানের রাজধানী টোকিওতে।
দ্য ফাইনানশিয়াল টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ছয় মাস ধরে টোকিওতে অবস্থান করছেন জ্যাক মা। জাপানে অনেকটা নীরবে জীবন-যাপন করছেন তিনি। খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে জনসম্মুখে আসছেন না এ ধনকুবের। টোকিও থেকেই চালাচ্ছন ব্যবসায়িক কার্যক্রম।
এছাড়া জাপানে ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ও রাঁধুনিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন জ্যাক মা। জাপানের ঐতিহ্য মিশ্রিত দামি শিল্পকর্ম সংগ্রহ করছেন তিনি।
আরও জানা গেছে, দুবছর আগেও জ্যাক মার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার হলেও, বর্তমানে তা অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চীন সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার পর জ্যাকের সম্পত্তি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে বলে জানা গেছে।
আলি বাবার ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে প্রকাশ্যে আসা একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছেন জ্যাক মা। তবে মাঝেমাঝে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ভ্রমণে যান তিনি। তাছাড়া, জাপানের বিভিন্ন জায়গায় পরিবারকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে তাকে। এমনকি, চীনের ধনকুবেরদের যাতায়াত আছে এমন কিছু জাপানি প্রাইভেট ক্লাবেও নাকি যাতায়াত করেন জ্যাক।
২০২০ সালে আগে চীনের সাংহাইয়ে শি জিনপিং প্রশাসনের ব্যাংকিং ব্যবস্থার সমালোচনা করেন জ্যাক মা। এর পরপরই আলিবাবার সহযোগী আর্থিক সেবাদাতা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপের তিন হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের আইপিও স্থগিত করে দেওয়া হয়। পুঁজিবাজারে বড় ধাক্কা খায় আলিবাবা। তারপর থেকেই ছন্দপতন শুরু হয় জ্যাক মার।
অনেকেই বলছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে জ্যাকের দ্বন্দ্ব ছিল। আর চীন সরকার চায়নি, জ্যাক মার প্রতিষ্ঠান আলিবাবা এতটা ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করুক। ব্যাংক থেকে এত অর্থ সরকারের কাছে না গিয়ে কোনো ব্যক্তিগত কোম্পানির অধীনে যাওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেনি চীন কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জি২০-র সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করলো ভারত। এই নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বললেন, মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাতদিন ধরে ভারতের সব ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট-সহ একশটি ঐতিহসিক সৌধ আলোয় সাজানো থাকবে। আর তার মধ্যে দেখা যাবে, জি২০-র লোগো। এভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলির ফোরাম জি২০-র সভাপতি পদ পাওয়াকে কুর্নিশ জানাচ্ছে ভারত। আগামী এক বছর এই পদে থাকবে ভারত।
মোদি জানিয়েছেন, ভারত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলবে, নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত নেবে এবং কাজ করে দেখাবে। ভারতের লক্ষ্য হলো বিশ্বের সামনে আর্থিক মন্দা, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা এক হয়ে মোকাবিলা করা এবং সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী ব্যবস্থা নেয়া। বিপর্যয় মোকাবিলা ও যে কোনো পরিবেশে টিকে থাকতে পারে এমন পরিকাঠামো বানানোর ওপর জোর দেয়াও হবে ভারতের লক্ষ্য। সেই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে যে ডিজিটাল ক্ষেত্রে বিভাজন আছে, তাও মেটাতে চায় ভারত।
ভারতে এবার জি২০-র বিভিন্ন স্তরে দুইটি বৈঠক হবে। যার মধ্যে প্রথমটি হবে আগামী সপ্তাহে উদয়পুরে। আগামী বছর সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে জি২০ শীর্ষসম্মেলন হবে।
গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতে জি২০-র লোগো ও থিম প্রকাশ করেছেন। লোগো হলো পদ্ম ও বিশ্ব এবং থিম হলো এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ। এই থিমের মধ্যে বসুধৈব কুটুম্বকম বা বিশ্ব একটা পরিবারের ছায়া স্পষ্ট।
জি২০-তে আছে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ক্যানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইটালি, জাপান, রিপাবলিক অফ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, সাউথ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশ্বের জিডিপি-র ৮৫ শতংশ আসে এই সদস্য দেশগুলি থেকে।
জি২০ বৈঠকগুলির দায়িত্বে থাকা অমিতাভ কান্ত সাংবাদিকদের বলেছেন, এই প্রথমবার ভারত বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলির কর্মসূচি ঠিক করবে। এতদিন বিশ্বের উন্নত দেশগুলিই এজেন্ডা তৈরি করত।
প্রধানমন্ত্রী মোদি ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত প্রতিটি বিষয়ে মতৈক্যের চেষ্টা করবে। কাজটা সহজ নয়। বরং রীতিমতো কঠিন চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই জি২০-র সভাপতি হিসাবে পথচলা শুরু করছে ভারত।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা ভারতকে সব ধরনের সাহায্য করবে। বর্তমান খাদ্যসংকট দূর করা, এনার্জি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে বিশ্বের অর্থনীতিকে আরো জোরদার করতে হবে। সেই কাজেই ভারতকে সাহায্য করা হবে।
Leave a Reply