অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : নতুন বছর ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভোগ্যপণ্যের বাজারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে কয়লার সরবরাহ। অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদন বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেশ কিছু দেশ। এসব কারণে ২০২৩ সালে এশীয় থার্মাল কয়লার দাম অনেকটাই কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
কয়লা ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও খনি সংশ্লিষ্টদের বরাতে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল জানিয়েছে, নতুন বছরে নিজেদের চাহিদা মেটাতে অভ্যন্তরীণভাবে কয়লা উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, চীন ও ভারত। এর কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর চাপ কমে আসবে।
২০২২ সালে থার্মাল কয়লার দাম রেকর্ড পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল ইউরোপের বাড়তি চাহিদাও। ইউক্রেন আগ্রাসনের কারণে রুশ জ্বালানি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর মরিয়া হয়ে বিকল্প উৎসের সন্ধানে নামে ইউরোপীয়রা।
যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম কমে এসেছে, তবু এখনো তা গত দুই বছরের গড়ের তুলনায় বেশি।
গত ৯ মার্চ ইন্দোনেশিয়ার এফওবি কালিমান্তান ৫০০০ কিলোক্যালরি/কেজি জিএআর কয়লার দাম প্রতি মেট্রিক টন ১৯০ মার্কিন ডলারে (১৯ হাজার ৬০০ টাকা প্রায়) পৌঁছেছিল, যা এ বছরের মধ্যে ওই তারিখ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর পরের দিনই, অর্থাৎ গত ১০ মার্চ ৪২০০ কিলোক্যালরি/কেজি এফওবি কালিমান্তান কয়লার দাম ওঠে প্রতি মেট্রিক টন ১৩৬ ডলার। এটিও ওই দিন পর্যন্ত এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম।
তবে এরপর থেকে দুটি কয়লার দামই কমেছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাদের গড় দাম ছিল যথাক্রমে প্রতি মেট্রিক টন ১২৮ দশমিক ৬৫ ডলার ও ৮৬ দশমিক ৫০ ডলার।
ইন্দোনেশিয়ার এক খনি ব্যবসায়ী বলেন, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের মতো দেশগুলোর শক্তিশালী অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে (২০২৩ সালে) সামগ্রিক চাহিদা শক্তিশালী থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুদ্ধের প্রভাব ধীরে ধীরে কমে আসবে। কারণ দেশগুলো নতুন বাণিজ্য প্রবাহের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে… ভারত ও চীন অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ালেও রাশিয়া থেকে কয়লা কেনা চালিয়ে যেতে পারে।
চাহিদা বাড়বে ইন্দোনেশিয়ার
ওই ব্যবসায়ী বলেন, ইন্দোনেশিয়া নিম্ন থেকে মধ্যম ক্যালরির কয়লা উৎপাদন বাড়াবে। কারণ শিল্প ও আবাসন খাতে প্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়তে পারে।
ইন্দোনেশিয়ায় খনি ব্যবসায়ী ও সরকারের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে আগামী বছর দেশটির কয়লা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৬৯ কোটি থেকে ৭০ কোটি মেট্রিক টন, যা ২০২২ সালের ৬৬ কোটি ৩০ লাখ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি।
ইন্দোনেশিয়া-ভিত্তিক আরেকজন কয়লা উৎপাদক বলেন, তিনি আশা করছেন, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কয়লার দাম স্থিতিশীল থাকবে। তার ধারণা, এফওবি কালিমান্তান ৪২০০ কিলোক্যালরি/কেজি কয়লার দাম প্রতি মেট্রিক টন ৬০ থেকে ৭০ ডলারের মধ্যে দেখা যাবে।
চীন–ভারতের চাপ কমবে
সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক এক ব্যবসায়ী বলেছেন, আমরা মনে করি, ২০২৩ সালে কয়লার দাম কম থাকবে। ইউরোপ ও এশিয়ায় মৃদু মন্দার আশঙ্কা চাহিদার পাশাপাশি দামের ওপর প্রভাব ফেলবে। তাছাড়া, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বেশি হলে চীন ও ভারতের (আমদানি) চাহিদা কম হতে চলেছে।
সূত্রগুলোর আশা, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে চীনে কয়লার চাহিদা কম থাকবে। কারণ তাদের চন্দ্র নববর্ষ পড়ছে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে। তবে এর পরের দুই মাসে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের পূর্বাভাস বলছে, ২০২৩ সালে ভারতের কয়লা আমদানি ১৭ কোটি মেট্রিক টনে দাঁড়াতে পারে, যা ২০২২ সালের তুলনায় পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ বেশি। অবশ্য ২০২২ সালে দেশটির বার্ষিক কয়লা আমদানি বৃদ্ধির সম্ভাব্য হার ধরা হয়েছিল ১১ শতাংশের বেশি।
গত এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে ভারতে কয়লা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল মোট ৪৪ কোটি ৮১ লাখ মেট্রিক টন, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি। দেশটি ২০২৪ সালের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে প্রায় ১২০ কোটি মেট্রিক টন থার্মাল কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক ও রাশিয়ার কয়লার দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় নতুন বছরে অস্ট্রেলিয়ার ৫৫০০ কিলোক্যালরি/কেজি কয়লার চাহিদা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের তথ্যমতে, গত ২ ডিসেম্বর ২৩ শতাংশ ছাইসহ নিউক্যাসল ৫৫০০ কিলোক্যালরি/কেজি এনএআর কয়লার দাম মূল্যায়ন করা হয়েছিল ১৩৪ ডলার প্রতি মেট্রিক টন। ওইদিন পর্যন্ত এ ধরনের কয়লার গড় দাম ছিল ১৭৮ দশমিক ৯০ ডলার। তবে সম্প্রতি এর চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমে গড় ১৩৩ দশমিক ৫৫ ডলারে নেমে এসেছে। সূত্র: এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল
Leave a Reply