অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গত আমন মৌসুমটা ভালো কাটেনি কৃষকদের। বাড়তি দাম দিয়েও কোনো কোনো জেলায় চাহিদামতো মেলেনি সার। পরিবেশকদের কাছে রীতিমতো ধরনা দিতে হয়েছে। তারপরও যে পরিমাণ সার পেয়েছেন, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। যার প্রভাব পড়ে উৎপাদনেও। তবে চলতি বোরো মৌসুমে সে শঙ্কা নেই। দেশে এখন পর্যাপ্ত ইউরিয়া সারের মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।
দেশে ইউরিয়া সার উৎপাদন ও আমদানির দায়িত্ব রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিসিআইসির। সংস্থাটির তথ্য বলছে, বর্তমানে চাহিদার তুলনায় স্থানীয় বাজারে ইউরিয়া সারের সরবরাহ বেড়েছে। একইসঙ্গে বাড়ছে মজুতও। তাদের কাছে মজুত আছে ৯ লাখ ৬৪ হাজার টন ইউরিয়া। যা বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ লাখ ৪৪ হাজার টন বেশি।
এর মধ্যে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন বাজারে ডিলারদের সরবরাহ করা হয়েছে আড়াই লাখ টনের বেশি ইউরিয়া। গুদামে মজুত রয়েছে ৫ লাখ ৮২ হাজার টন। এর সঙ্গে ৩ লাখ ৮০ হাজার টন ইউরিয়া বন্দরে খালাসের অপেক্ষায়।
পাশাপাশি দেশে এখন ৪ লাখ ১১ হাজার টন টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), ৯ লাখ ৩১ হাজার টন ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়া ফসফেট) এবং ৩ লাখ ৩৮ হাজার টন এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) মজুত রয়েছে। সবগুলো সারের মজুতই গত বছরের তুলনায় এবং বোরো মৌসুমের চাহিদার চেয়ে বেশি।
সরকারের হিসাব বলছে, দেশে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত ইউরিয়ার চাহিদা হবে মোট ১৫ লাখ ৩৬ হাজার টন। সেখানে মজুত ৯ লাখ ৬৪ হাজার টন এবং আমদানি পাইপলাইনে রয়েছে আরও সাড়ে ১৩ লাখ টন। অর্থাৎ, মার্চের পরেও ইউরিয়া সারের বাড়তি মজুত থাকবে ৭ লাখ ৭৮ হাজার টন। একইভাবে এসময় দেশে ২ লাখ ১ হাজার টন টিএসপি, ২ লাখ ৭৮ হাজার টন ডিএপি ও ১ লাখ ৮২ হাজার টন বাড়তি এমওপি সার থাকবে।
সংস্থাটি জানায়, শেষ দফায় সৌদি আরব থেকে দুই ধাপে জিটুজি পদ্ধতিতে মোট ছয় লাখ টন সার আমদানি করা হয়েছে। মাঝে ডলার সংকটে কিছু চুক্তির এলসি বাতিল হলেও সরকারের নির্দেশনায় স্বাভাবিক হয়েছে সে পরিস্থিতি। ফলে সার আমদানি ও মজুত পরিস্থিতি রয়েছে স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে।
বিসিআইসির পরিচালক সাইফুল ইসলাম খান বলেন, আমদানির পরেও আমরা পাঁচ লাখ টন সার কর্ণফুলী সার কারখানায় উৎপাদন করছি। বাকি চারটি সার কারখানা যমুনা, শাহাজালাল, আশুগঞ্জ ও চিটাগং ইউরিয়া কারখানায় আরও সাত লাখ টন সার উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে চলতি অর্থবছরে। সার্বিকভাবে আর সার নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
এ বছরের মাঝামাঝি থেকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দেশের স্থানীয় ইউরিয়া উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ থাকায় আমদানির উপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছিল। আমদানি যখন বাড়তি গুরুত্ব পায় তখনই আবার ডলার সংকটের কারণে সরবরাহ পরিস্থিতি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। দেশে সার নিয়ে হাহাকার শুরু হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব বলাই কৃষ্ণ হাজরা বলেন, এখন আর সার নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কৃষকরা বোরোর জন্য পর্যাপ্ত সার পাবে। বর্তমানে চাহিদার চেয়ে বেশি মজুত রয়েছে। পর্যাপ্ত সার সরবরাহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে কোথাও সারের সংকট না হয়।
জানা যায়, দেশে প্রতি বছর ২৬ লাখ টন ইউরিয়ার প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে সরকারি সার কারখানাগুলো প্রায় ১০ লাখ টন যোগান দেয়। তবে চলতি বছর গ্যাস সংকটে এ যোগান অর্ধেকে নেমেছে। চাহিদার বাকি সার সরকার জিটুজি প্রক্রিয়ায় সৌদি আরব, কাতার ও দুবাই থেকে আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে।
এছাড়া বছরে সাড়ে ৭ লাখ টন টিএসপি, সাড়ে ১৬ লাখ টন ডিএপি এবং সাড়ে ৮ লাখ টন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। এ তিন ধরনের সারেরও বড় অংশ আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা হয়।
যদিও কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছে, গত মৌসুমেও প্রকৃতপক্ষে সারের খুব বেশি সংকট ছিল না। যেটুকু ঘাটতি ছিল, সেটি পূঁজি করে সারাদেশের সার ডিলররা কারসাজি করেছে। এ মৌসুমেও সে ধরনের পরিস্থিতির আশঙ্কা থেকে যায়।
Leave a Reply