অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইউএস কংগ্রেসের একটি প্যানেল দ্বারা প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মালিকানাধীন বিস্তৃত ব্যবসায় ক্ষতির কথা বলে কোনো আয়কর দেননি। কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক বছর ধরে আইনি লড়াইয়ের পর মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) গণতান্ত্রিক নেতৃত্বাধীন হাউস ওয়েজ অ্যান্ড মিনস কমিটি কিছু নথি প্রকাশ করেছে। নথিগুলি হোয়াইট হাউসে তার চার বছরের সময় ট্রাম্পের আয় এবং করের ব্যাপক ওঠানামাও দেখায়।
এই নথিগুলো একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে ট্রাম্পের দীর্ঘস্থায়ী ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণ্ণ করে বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য তার বিড শুরু করার সময় নথিগুলো প্রকাশ্যে আসে।
নথির তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই চার বছরের তিনটির জন্য আয়কর দিয়েছেন। তবে এই দম্পতি ব্যবসায়িক লোকসান দেখিয়ে এবং কর কর্তন করে ২০১৫ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের মোট ট্যাক্স বিল তুলনামূলকভাবে কম রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
তাদের মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের নেতৃত্বে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের ওয়েস অ্যান্ড মিনস কমিটি ৯১.৬ মিলিয়নের কর কর্তনসহ বেশ কয়েকটি ছাড়ের বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। কমিটি কয়েক দিনের মধ্যে ট্রাম্পের সম্পূর্ণ আয়কর রিটার্নের একটি সম্পাদিত সংস্করণ প্রকাশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কয়েক দশক ধরে, প্রধান দলের প্রার্থীরা সবাই তাদের ট্যাক্স রিটার্ন প্রকাশ করতে পেরে খুশি, কিন্তু ট্রাম্প দুই মেয়াদের প্রেসিডেন্টের প্রচারণার সময় তার ট্যাক্স রিটার্ন প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন।
হাউস ওয়েজ অ্যান্ড মিনস কমিটি বছরের পর বছর আইনি লড়াইয়ের পর ট্রাম্পের ট্যাক্স রিটার্ন পায়। কমিটি মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে কিনা তা নিয়েও ভোট দিয়েছে। কমিটিতে ডেমোক্র্যাটদের আধিপত্য থাকায়, ভোটটি শেষ পর্যন্ত সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের আয়কর রিটার্ন প্রকাশের দিকে নিয়ে যায়।
ট্রাম্পের একজন মুখপাত্র নথি প্রকাশকে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের মুখপাত্র স্টিভেন চিউং বলেন, ‘এই অবিচার যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে হতে পারে, তা বিনা কারণে যেকোনো আমেরিকানের সঙ্গে ঘটতে পারে।’
প্রতিনিধি পরিষদের ওই কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্যরা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের জটিল আয়কর রিটার্ন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে কর কর্তৃপক্ষ তাদের সঠিকভাবে অডিট করেনি।
প্রেসিডেন্টের প্রত্যেক বছরের আয়কর বিবরণী যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগের (আইআরএস) অডিট করার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে ডেমোক্র্যাটদের চাপের আগে তা করা হয়নি।
আইআরএস প্রায়ই এই অডিটগুলোর জন্য শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিকেই নিয়োগ করে। হাউস প্যানেলের পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কর কমানোর বেশিরভাগই প্রয়োজনীয় ছিল না। আইআরএস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং ট্রাম্পের ব্যবসা সংক্রান্ত নানান মামলার শুনানি অনুযায়ী, তার প্রেসিডেন্সির আগেও ট্রাম্প ব্যবসায়িক ব্যাপক ক্ষতি দেখানোর পর মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স ব্রেক পেয়েছিলেন। প্রকাশিত নথি অনুসারে, হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনও এই প্যাটার্ন অব্যাহত ছিল।
হোয়াইট হাউসের ওই চার বছরে ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়াকে তাদের ব্যক্তিগত আয় ও পারিবারিক আয়ের ওপর কর দিতে হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তারা মোট তিন মিলিয়ন ডলার কর দিয়েছে।
কর ছাড়ের কারণে তারা ন্যূনতম কর দিয়ে বহু বছর পার করেছেন। মঙ্গলবার প্রকাশিত নথী অনুসারে, ২০১৭ সালে ট্রাম্প ও তার স্ত্রী ১.২৯ মিলিয়নের মোট ক্ষতির কথা জানিয়েছেন, যার ফলে তাদের আয়কর মাত্র ৭৫০ ডলার ছিল।
পরের বছর ট্রাম্প দম্পতি ২.৪৩ মিলিয়ন ডলার আয়ের কথা জানিয়ে প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স পরিশোধ করেছেন। ২০১৯ সালে তারা ৪.৪ মিলিয়ন ডলার আয়ের বিপরীতে ১ লাখ ৩৪ হাজার ডলার কর দিয়েছেন।
কিন্তু ২০২০ সালের বিবৃতি তাদের মোট ক্ষতি দেখায় ৪.৮ মিলিয়ন ডলার এবং এ বছর তারা কোনো করই দেননি।
Leave a Reply