অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ঢাকায় ইতোমধ্যেই উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল শুরু করেছে মেট্রোরেল। উড়াল পথে চলাচলের মধ্য দিয়ে মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হলেও এবার মেট্রোরেল চলবে পাতালপথেও। চলতি মাসের শেষে বা পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে এর নির্মাণকাজ। এমন তথ্যই জানিয়েছেন ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট- এমআরটি কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমআরটি-১ এর আওতায় ২৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মিত হবে হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত, কুড়িল, যমুনা ফিউচার পার্ক, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ, কমলাপুর পর্যন্ত এবং কুড়িল হয়ে কাঞ্চন সেতুর পশ্চিম পাশ পর্যন্ত। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৬.৪ কিলোমিটার হবে পাতাল রেল। আর কুড়িল থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত ১০.২ কিলোমিটার হবে উড়াল রেল। মোটকথা এমআরটি-১ এর আওতায় রেলপথ হবে উড়াল ও পাতালের সমন্বয়ে।
এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চেয়ারম্যান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘এমআরটি-১-এর প্রাথমিক কাজ আমরা শেষ করেছি। এখন আমরা মূল কাজ শুরু করব। আমরা চেষ্টা করছি, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেলে চলতি মাসের (জানুয়ারি) শেষের দিকে অথবা ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে কাজ শুরু করতে। আশা করি, এ কাজ আমরা যথাসময়েই শেষ করব। আমাদের টার্গেট ২০৩০ সালের মধ্যে সব এমআরটি চালু করা।’
এদিকে রাজধানীবাসীকে যানজট থেকে স্বস্তি দিতে ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় মোট ছয়টি মেট্রোরেলের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে নির্মাণযজ্ঞ। এরই মধ্যে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট-৬ (এমআরটি-৬) এর আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথে চালু করা হয়েছে মেট্রোরেল।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছে মেট্রোরেলের প্রাথমিক কাজ। ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এমআরটি-১ প্রকল্পটি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মেট্রোরেল দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেছে। এ ছাড়া এমআরটি লাইন-১-এর পিতলগঞ্জ ডিপোর ভূমি উন্নয়নের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি শেষ করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর এমআরটি-১ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাপানের বহুজাতিক কনসোর্টিয়ামের নিপ্পন কোয়াই করপোরেশন কোম্পানি জেভির সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। এই কনসোর্টিয়ামে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দেশি-বিদেশি আটটি প্রতিষ্ঠান। চুক্তিতে সই করেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক এবং নিপ্পন কোয়াই কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধি নাও কি কুদো।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫১৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা অর্থায়ন করছে ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করছে ৩৯৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
গেল ২৩ নভেম্বর এমআরটি লাইন-১-এর ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এর আওতায় নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জের মৌজায় ৩৫ দশমিক ৯০ হেক্টর বা ৮৮ দশমিক ৭১ একর ভূমিতে উন্নয়নকাজ করা হবে। এ কাজের ঠিকাদারিতে রয়েছে জাপানের টকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
১২ প্যাকেজে শুরু হবে কাজ : এমআরটি-১ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এম এন ছিদ্দীক বলেন, ‘এই এমআরটি-১ আমরা ১২টি প্যাকেজের মাধ্যমে কাজ শুরু করব। এসব প্যাকেজ এখন বিভিন্ন পর্যায়ে আছে। অনেক প্যাকেজ এগিয়ে আছে, আবার অনেক প্যাকেজ একটু পিছিয়ে আছে। কিছুদিন পরই আমরা বলতে পারব এই রুটের আন্ডারগ্রাউন্ডের যে খননকাজ হবে, সেটা আমরা কবে থেকে শুরু করতে পারব। তবে আমরা আশা করি, এই অর্থবছরের ভেতরেই কাজ শুরু করতে পারব।’
ছিদ্দীক বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি মাটি খনন করার টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) আমাদের এখানেই প্রস্তুত করার। তাহলে আমাদের নিজেদের ক্যাপাবিলিটি বাড়বে। এই কাজটি কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মাটির নিচে ৩০ মিটার আবার কোথাও কোথাও ৭০ মিটার নিচে করা হবে।
এই খননকাজ করার সময় জনসাধারণের চলাচলে কোনো অসুবিধা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘টিবিএম মেশিন যখন মাটির নিচে কাজ করবে, তখন রাস্তার ওপর বোঝা যাবে না যে মাটির নিচে কাজ হচ্ছে। সমস্যা একটু হবে স্টেশন নির্মাণের সময়।
‘এই রুটের যে ১২টি স্টেশন থাকবে, সেখানে আমরা ওপেন কাট পদ্ধতিতে কাজ করব। ওই স্টেশন এলাকায় সর্বোচ্চ ছয় মাস কাজ চলবে। এ সময় আমরা রাস্তার অর্ধেকটা অংশ চালু রেখে বাকি অর্ধেক অংশে কাজ শেষ করব। পরে এই অংশ মাটি ভরাট করে পরের অংশ ধরব। এই ছয় মাস এসব জায়গায় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করতে হবে। এ ছাড়া এই কাজে অন্য কোনো জায়গায় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করতে হবে না। এমআরটি-৬ নির্মাণে দীর্ঘ সময় যে ভোগান্তি হয়েছিল এমআরটি-১-এ সেটা হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই কাজ যেহেতু মাটির ৩০ মিটার নিচে করা হবে, সেহেতু এখানে ইউটিলি লাইন সরানোরও কোনো প্রয়োজন হবে না। আর স্টেশন এলাকায় আমরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করব। এই পদ্ধতির মাধ্যমে স্টেশন এলাকা দিয়ে সামান্য যেসব ইউটিলি গেছে, এই ইউটিলি যে অবস্থায়ই আছে তাকে সেই অবস্থায়ই রেখে মাটির নিচের দিকে চলে যাব এবং মাটি ভরাট করে দেব।’
Leave a Reply