অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে ১ টাকা ২১ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
রবিবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে সঞ্চালন সংস্থা ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি শেষে এ সুপারিশ করে বিইআরসির কারিগরি কমিটি।
এদিন শুনানিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর গড়ে ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির আবেদনের প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য গড়ে ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ (ইউনিট প্রতি ১ টাকা ২১ পয়সা) বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।
শুনানিতে যুক্তি উপস্থাপন শেষে বিইআরসির কারিগরি কমিটি যে সুপারিশ করেছে সেই হিসেবে গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা বিদ্যুতের গড়মূল্য ৭ টাকা ০২ পয়সা থেকে বেড়ে গড় মূল্য ৮ টাকা ২৩ পয়সা হবে। এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে গড়ে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে ১৫ দশমিক ৪৩ ভাগ।
এদিকে দাম বাড়ানোর বিষয়ে দরকষাকষি হলেও গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। দাম বাড়ানোর দাবিতে কথা বললেও মানসম্মত সেবার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেনি বিতরণ কোম্পানিগুলো।
এদিন শুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সদস্য আবু ফারুক, সদস্য মকবুল ই ইলাহীসহ সদস্য, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে গত বছরের ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি করার ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে পাইকারিতে ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা করে সরকার। এরপরই খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর জন্য ছয়টি বিতরণ কোম্পানি (বিপিডিবি, বিআরইবি, ডেসকো, ডিপিডিসি, নেসকো, ওজোপাডিকো) আবেদন জমা দিতে থাকে। সেই আবেদন কারিগরি কমিটিতে মূল্যায়ন শেষ করে এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের দাম সকল পর্যায়ে বৃদ্ধি করা হয়। সে সময় পাইকারি পর্যায়ে দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে ইউনিট প্রতি ৩৬ পয়সা বৃদ্ধিতে ৭ টাকা ০২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। এ হারই এখন চলছে। এবার নতুন সুপারিশ কার্যকর হলে বিদ্যুতের জন্য ইউনিট প্রতি ৮ টাকা ২৩ পয়সা গুণতে হবে গ্রাহকদের।
এদিকে মানসম্মত সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে না পারলেও এর কারণ হিসেবে শুনানিতে পিডিবির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, প্রতি টন কয়লার মূল্য ২৩০ ডলার এছাড়া প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ৭০ টাকা হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দরকার হবে।
কিন্তু বিআরসি পাইকারি মূল্য বৃদ্ধির পর ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নির্ধারণ করেছে। এর ফলে মূল্য কাঠামো ধরে দাম বৃদ্ধি হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে না।
শুনানিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) প্রস্তাবে দাবি করে, এখন খুচরা পর্যায়ে দাম না বাড়লে তাদের ক্ষতি হবে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা।
সেই তালিকায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) ২৩৪ কোটি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ১৫৫১ কোটি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ১৪০২ কোটি টাকা, নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ৫৩৫ কোটি টাকা ক্ষতি হবে বলে দাবি করা হয়।
সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ চায় মেট্রোরেল ও হাইটেক পার্ক:
মেট্রোরেল ও হাইটেক পার্কের জন্য কোনও লাভ ছাড়া সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ চাওয়া হয়েছে৷ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি ও হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এদিন খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানিতে এ আবেদন করে। এছাড়া ১০৯টি হাইটেক পার্কের জন্য আলাদা ক্যাটাগরিতে বিদ্যুৎ চাওয়া হয়।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে:
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হলে তা ২০২৩ সালের মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম। শুনানি চলাকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, সিস্টেম লস, অনিয়ম বন্ধে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না সরকার। অপরদিকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে জনগণের কষ্ট বাড়ছে।
Leave a Reply