অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার পর গত শুক্রবার ছিল ১২তম দিন। সেদিনও বহু বাংলাদেশি তুর্কি জনগণের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন টার্কিশ কো–অপারেশন অ্যান্ড কো–অর্ডিনেশন এজেন্সি বা টিকা’র ঢাকা অফিসে। এই সংস্থার মাধ্যমেই ত্রাণ সহায়তা গ্রহণ করছে তুরস্ক।
তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, প্রায় দুই কোটি মানুষের শহর ঢাকায় পিক আওয়ারে প্রচণ্ড যানজট নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। কিন্তু এর মধ্যেও বহু মানুষ পায়ে হেঁটে অথবা সাইকেল চালিয়ে টিকা অফিসে হাজির হতে দেখা যাচ্ছে।
মাহবুব উদ্দিন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি আধা ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে এখানে এসেছি এবং আমার বন্ধু, নিকটাত্মীয় ও সহকর্মীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অনুদান হস্তান্তর করেছি।
তিনি বলেন, এখানে অনেক বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী ও কোম্পানিকে বড় কার্টনে করে বিপুল উপকরণ দান করতে দেখেছি। তারপরও বলতে পারি, আমার উপকরণগুলো হয়তো পরিমাণে নগণ্য, কিন্তু এতে রয়েছে অফুরন্ত ভালোবাসা ও সংহতি।
মাহবুব উদ্দিনের মতো আরও অনেকেই তুর্কি জনগণের প্রতি একইভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন এবং টিকার ঢাকা অফিসে অনুদান পৌঁছে দিয়েছেন।
টিকা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই মুহূর্তে কেবল তাঁবু, কম্বল ও স্লিপিং ব্যাগ গ্রহণ করছে। এ জন্য কাউকে খাদ্য, ওষুধ, পাওয়ার ব্যাংকের মতো জিনিসপত্র না নিয়ে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। শিপমেন্ট অগ্রাধিকারের কারণে আপাতত এ ধরনের পণ্য তুরস্কে পৌঁছানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে তারা।
এছাড়া নগদ অর্থ সহায়তাও নিচ্ছে না টার্কিশ কো–অপারেশন অ্যান্ড কো–অর্ডিনেশন এজেন্সি বা টিকার ঢাকা অফিস।
টিকা বাংলাদেশের সমন্বয়কারী সেভকি মের্ট বারিস বলেছেন, একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে টিকা। এটি খোলা হলে মানুষ সহজেই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নগদ অর্থ পাঠাতে পারবে।
আনাদোলুর খবর অনুসারে, শুক্রবার রাতে আরেকটি বিশেষ কার্গো ফ্লাইটে আনুমানিক ১০০ টন এবং একটি নিয়মিত ফ্লাইটে প্রায় ১০ টন ত্রাণ ঢাকা থেকে তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার কথা।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে আঘাত হানে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ এক ভূমিকম্প। এর কয়েক ঘণ্টা পরে ফের ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয় ওই অঞ্চলে। এতে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় তুরস্কের দক্ষিণ এবং সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল।
ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে ৪৬ হাজার ছাড়িয়েছে। উদ্ধারকাজ শেষ না হওয়ায় এটি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তুর্কি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, তুরস্কে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার ৬৪২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আর সিরিয়ার সরকার ও জাতিসংঘের তথ্য বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫ হাজার ৮০০ জন।
Leave a Reply