22 Nov 2024, 09:38 pm

ভূমিকম্পের খবর প্রকাশ করায় তুর্কি সাংবাদিক আটক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্প নিয়ে প্রতিবেদন করা এবং এসব ঘটনা সম্পর্কে মতামত দেওয়ার জন্য সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের আটক করা হচ্ছে। ‘ভুয়া খবর’ ছড়ানোর জন্য তাদের তদন্ত করা হচ্ছে। কিছু সাংবাদিককে হয়রানি করা হয়েছে এবং রিপোর্ট করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্পের খবরটি প্রকাশ করেছেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মীর আলী কোসের। তার অবস্থান ছিল ৬ ফেব্রুয়ারিতে আঘাত হানা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ২০০ মাইল দূরে। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর খবর শোনার পরও তিনি ছুটে যান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়।

সেখানকার পরিস্থিতি প্রতিবেদন করার পাশাপাশি তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করেন। তিনি উদ্ধারকারী ও ধ্বংসস্তূপের নিচে বেঁচে থাকা মানুষের গল্প সংগ্রহ করে টুইটারে পোস্ট করেছেন। সাংবাদিক মীর আলী কোসের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি ‘ভুয়া খবর’ ছড়ান।

ঘটনার তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। দুই দেশেই অন্তত ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তুরস্কের ভূমিকম্প নিয়ে প্রতিবেদন বা মন্তব্য করার জন্য তদন্তাধীন অন্তত চার সাংবাদিকের একজন হলেন মীর আলি কোসার।

প্রেস ফ্রিডম গ্রুপগুলো জানিয়েছে, আরও কয়েক ডজনকে আটক করা হয়েছে এবং হয়রানি করা হয়েছে বা ঘটনার রিপোর্ট করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। তবে আটকের বিষয়ে তুর্কি কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করেনি। সাংবাদিক মীর আলী কোসের কুর্দি জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তিনি বিনেট ও দুভারের মতো বিরোধী মিডিয়ার জন্য কাজ করেছিলেন।

তিনি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দিয়ারবাকিরে থাকেন। ভূমিকম্পের রাতের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রবল কম্পন অনুভব করেছি। ঘর কাঁপছে, টিভি কাঁপছে। আমি আমার দুইটি পোষা কুকুর নিয়ে ডাইনিং টেবিলের নিচে লুকিয়েছিলাম। তারপর দৌড়ে বেরিয়ে যাই।’

এই ঘটনার কিছুক্ষণ পর মীর আলী দিয়ারবাকির ছেড়ে গাজিয়ানটেপ শহরে চলে যান। সেখানকার ধ্বংসাবশেষ দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান। এ শহরে অন্তত তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মীর আলী বলেন, ‘মাইক্রোফোনে কথা বলতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।’

পশ্চিম তুরস্ক থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবক ও উদ্ধারকারী দলের দ্বারা মীর আলী গভীরভাবে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি টুইটারে তাদের গল্প শেয়ার করেছেন। বেঁচে যাওয়া কয়েকজন তাকে জানিয়েছে, তারা কয়েকদিন ধরে কোনো সাহায্য পায়নি। বিরোধী গণমাধ্যমেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে।

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং জনগণকে জানিয়েছেন, তিনি শহরটি পুনর্নির্মাণ করবেন। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন, যারা ‘ভুয়া খবর’ ছড়ায় ও ‘সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে’ তাদের ‘উস্কানিদাতা’ বলা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

মির আলী জানিয়েছেন, তিনি যখন ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা থেকে খবর সংগ্রহ করে তা প্রকাশ করছিলেন, দিয়ারবাকির পুলিশ তার বাড়িতে একটি নোট রেখে যায়। তাকে থানায় গিয়ে জবানবন্দি দিতে বলা হয়েছে। মীর আলীকে থানায় বলা হয়েছিল, সম্প্রতি প্রবর্তিত বিভ্রান্তিকর আইনে তাকে তদন্ত করা হচ্ছে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে তথ্য প্রকাশের বিষয়ে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ আনে। গত অক্টোবরে তুরস্ক ভুল তথ্যের বিস্তার রোধে একটি নতুন আইন গ্রহণ করেছে। এই আইন রাষ্ট্রকে মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের অনেক ক্ষমতা দেয়।

ইউরোপের আইনি নজরদারি সংস্থা কাউন্সিল অফ ভেনিস কমিশন জানিয়েছে, আইনটি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে। আর বিরোধী দলগুলো এই আইনকে ‘সেন্সরশিপ আইন’ বলে অভিহিত করেছে। মীর আলি তার কাজের ব্যাপারে অত্যন্ত স্পষ্টবাদী ও সৎ ছিলেন।

তিনি বিপর্যয়ের চারপাশের লোকেদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, বেঁচে যাওয়া থেকে শুরু করে পুলিশ ও উদ্ধারকর্মী পর্যন্ত। তিনি বলেন, ‘আমি পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা ও বিশ্লেষণ ছাড়া কোনো তথ্য শেয়ার করিনি।’

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) কর্তৃপক্ষকে মীর আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে, এটিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে। ডভোকেসি গ্রুপ কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) অনুসারে, কমপক্ষে আরও তিনজন সাংবাদিক ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন।

আরএসএফ জানিয়েছে, মেরদান ইয়ানারদা ও এনভার আইসেভার হলেন ইস্তাম্বুলে অবস্থিত বিশিষ্ট রাজনৈতিক আলোচক। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের প্রচুর ফলোয়ার রয়েছে। তারা দুইজনেই ভূমিকম্পে সরকারের উদ্ধার তৎপরতার সমালোচনা করেন। আর মেহমেত গুল মির আলীর মতো দিয়ারবাকিরে থাকেন।

এই তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। সরকারের উদ্ধার প্রচেষ্টার সমালোচনাকারী একজন স্বেচ্ছাসেবকের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর মেহমেত গুলকে আটক করা হয় এবং পরে ‘ঘৃণা ছড়ানোর’ সন্দেহে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঠিক কতজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তা এখনও জানা যায়নি।

গত মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ জানিয়েছে, তারা ‘উস্কানিমূলক পোস্ট’ পোস্ট করার জন্য ১৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে ২৫ জনকে পরে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে আটক ও গ্রেফতারকৃতদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

সমালোচকরা বলছেন, যে কোনো সমালোচনার বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন মিথ্যা তথ্যের বাইরে চলে গেছে। ইস্তাম্বুল বিলগি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাইবার অধিকার বিশেষজ্ঞ ইয়ামান আকদেনিজ বলেছেন, ‘সরকার ভূমিকম্প অঞ্চল থেকে তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছে।’

তুরস্কের প্রেসিডেন্টের যোগাযোগ পরিচালক উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে জানান, ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করার পরে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিভাগটি একটি স্মার্টফোন অ্যাপও চালু করেছে, যা মানুষকে ভূমিকম্প সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর পোস্ট রিপোর্ট করতে উত্সাহিত করে।

ইস্তাম্বুলের সাংবাদিক আরজু গায়েবুল্লাহ বলেছেন, ‘যে কোনো সময় [তুর্কি] কর্মকর্তা ও সরকারের সমালোচনা করা হয়, তারা এটা পছন্দ করেন না। তবে এবার সম্ভবত তারা আরও সোচ্চার।’ তুরস্কের প্রেসিডেন্সিয়াল ডিরেক্টরেটের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পায়নি বিবিসি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 9151
  • Total Visits: 1271419
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২০শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ৯:৩৮

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018