অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : টানা ১৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত। অবশ্য সম্মুখ সমরে ইউক্রেনীয় সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ ছাড়াও পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার চলছে অদৃশ্য লড়াই। এই পরিস্থিতিতে দু’টি বিদেশি সংস্থার রাশিয়ান সম্পদ দখলের ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এর ফলে প্রয়োজনে মস্কো অন্যান্য কোম্পানির বিরুদ্ধে একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেল। বুধবার (২৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার দু’টি বিদেশি জ্বালানি সংস্থার রাশিয়ান সম্পদের ওপর অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর এই পদক্ষেপে যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তা হলো- প্রয়োজনে অন্যান্য কোম্পানির বিরুদ্ধেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে মস্কো।
রয়টার্স বলছে, পুতিনের স্বাক্ষরিত ডিক্রি অনুযায়ী- মস্কো ইতোমধ্যেই ইউনিপার এসই’র রাশিয়ান বিভাগ এবং ফিনল্যান্ডের ফোর্টাম ওইজ-এর সম্পদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। মূলত বিদেশে রাশিয়ান সম্পদ জব্দ করা হলে সেটির প্রতিশোধের সম্ভাব্য রূপরেখা ঠিক কি হবে তা এই ডিক্রিতে দেখা যাচ্ছে।
ডিক্রিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদের কাছ থেকে ‘অবন্ধুসুলভ এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি’ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানাতে রাশিয়াকে জরুরিভাবে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সম্পদের ওপর অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য বিদেশি ওই দু’টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার রাশিয়ার ফেডারেল সরকারি সম্পত্তি সংস্থা রোসিমুশচেস্টভোর অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে বলেও ডিক্রিতে বলা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন বলেছিলেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির খরচ মস্কোকেই বহন করা উচিত। যদিও রাশিয়ার প্রধান প্রধান হিমায়িত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য ‘উল্লেখযোগ্য আইনি বাধা’ রয়েছে বলেও সেসময় মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
অবশ্য রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ‘ব্যাংক ভিটিবি পিএও’-এর সিইও গত সোমবার বলেন, রাশিয়ার উচিত ফোর্টামের মতো বিদেশি সংস্থাগুলোর সম্পদ গ্রহণ এবং পরিচালনার বিষয়টি বিবেচনা করা। এছাড়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেই কেবল সেগুলো ফেরত দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে রুশ বার্তাসংস্থা তাস জানিয়েছে, ইউনিপার এসই এবং ফিনল্যান্ডের ফোর্টাম ওইজ-এর পর আরও বিদেশি সংস্থা অস্থায়ী রাশিয়ান নিয়ন্ত্রণে তাদের সম্পদ দেখতে পারে বলে জানিয়েছে রুশ ফেডারেল সরকারি সম্পত্তি সংস্থা রোসিমুশচেস্টভো। আর এসব সম্পদ রুশ অর্থনীতির গুরুত্ব অনুসারে পরিচালিত হওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করবে সংস্থাটি।
সংস্থাটির উদ্ধৃতি দিয়ে তাস জানিয়েছে, ‘পুতিনের স্বাক্ষরিত এই ডিক্রিটি মালিকানার সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করবে না এবং মালিকদের তাদের সম্পদ থেকে বঞ্চিতও করবে না। তবে সম্পদের বাহ্যিক ব্যবস্থাপনা অস্থায়ী এবং এর অর্থ হলো- মূল মালিকের এখন আর ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই।’
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল বলেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পুনর্গঠনের জন্য মস্কোর বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার অধীনে জব্দ করা রুশ সম্পদ ব্যবহার করার কথা চিন্তা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।