অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ উপকূলীয় কয়েকটি এলাকা। এসব এলাকার ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উপড়ে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে আঘাতের পর বড় বিপদের শঙ্কা কেটে গেছে। সেইসঙ্গে ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। যা ক্ষতি হয়েছে, এর চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে জেলা আবহাওয়া অধিদফতর।
রবিবার (১৪ মে) বিকাল ৩টার দিকে সেন্টমার্টিন উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মোখা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিকাল ৩টার দিকে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। এতে ওসব এলাকার ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ভেঙে গেছে।’
মূলত সকাল ৯টা থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শুরু হয় উল্লেখ করে আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিকাল ৩টার দিকে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে গতিপথ বদলে মিয়ানমারের দিকে চলে গেছে ঘূর্ণিঝড়টি। এখন ভয়ের কিছু নেই, এটি কিছুটা দুর্বল হয়ে গেছে। আগামী তিন ঘণ্টা উপকূলজুড়ে আঘাতের প্রভাবে ঝড়বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রভাব কমে এটি পুরোপুরি দুর্বল হয়ে যাবে। এখন শেষ অংশের প্রভাব চলছে। আমাদের উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা নেই।’
প্রচণ্ড গতিতে প্রথমে মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড়টি উল্লেখ করে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আঘাতে সেন্টমার্টিন-টেকনাফসহ উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি ভেঙেছে ও গাছপালা উপড়ে গেছে। এক নারীর মৃত্যুর কথা শুনেছি। কয়েকজন আহতের খবর পেয়েছি। ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে। তবে, জলোচ্ছ্বাস হয়নি।’
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সেন্টমার্টিন উপকূলের ঘরবাড়ির টিন, ছাউনি, কাঠ ও বাঁশ উড়িয়ে নিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড়। গাছপালা ভেঙে পড়েছে, দোকানপাট উড়ে গেছে। বাতাসের তীব্রতা বেশি থাকায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সাবরাং ইউনিয়ন, সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপের ঘরবাড়ি ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও প্রচণ্ড বেগে বাতাস বইছে, কোথাও কোথাও গাছপালা ও কাঁচা বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। তবে জলোচ্ছ্বাস হয়নি।’
এখন পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ‘বেলা ২টা থেকে ঝোড়ো বাতাস শুরু হয়েছিল। বিকাল ৩টার দিকে উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়। আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজন নিরাপদে আছেন। হতাহতের কোনও খবর পাইনি।’
জেলা আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের শেষাংশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি। সেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০-৫৫ কিলোমিটার। যা ক্ষতি হয়েছে, এর চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
জেলা আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্র বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে মিয়ানমারের দিকে যাচ্ছে। ঝড়ের ব্যাস বড় হওয়ায় পুরোপুরি অতিক্রম করতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় লাগবে। বাংলাদেশের উপকূলে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০-৫৫ কিলোমিটার। যা ক্ষতি হয়েছে, এর চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আমাদের যে বড় বিপদের শঙ্কা ছিল, এখন তা আর নেই।’
Leave a Reply