অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গতকাল বুধবার পবিত্র হজ বিষয়ক কর্মকর্তা, প্রতিনিধি এবং হজযাত্রীদের একটি দলের সঙ্গে বৈঠকে হজ্বের কিছু রাজনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
হজ হল ইসলামে সামর্থবানদের জন্য একটি ফরজ বা আবশ্যিক কর্তব্য যার ধর্মীয় কার্যাবলী ছাড়াও এর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও রয়েছে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা সবসময় ধর্মীয় দিক ছাড়াও হজের রাজনৈতিক কার্যাবলীর উপর জোর দিয়ে আসছেন। সর্বোচ্চ নেতার আজকের ভাষণে হজের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বেশ কিছু বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
প্রথম দিকটি হল হজের দায়িত্ব হচ্ছে ইসলামি জাতিগুলোকে একত্রিত করা। ইসলামি বিশ্বের প্রতি পশ্চিমা শক্তি এবং বিশেষ করে আমেরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা। হজের মৌসুমে যেহেতু বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ সৌদি আরবে আসে সেহেতু মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সংলাপ এবং একে অপরের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি আদান প্রদান এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কৌশলকে ব্যর্থ করে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই বিষয়ে বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা জোর দিয়ে বলেন, হজে একটি বৈশ্বিক ও সভ্যতামূলক বিষয় যার লক্ষ্য হল ইসলামী উম্মাহকে উন্নীত করা, মুসলমানদের হৃদয়কে একত্রিত করা এবং ইসলামী উম্মাহকে কুফর, অত্যাচার, অহংকার এবং মানব মূর্তি ও মানব-বহির্ভূত মূর্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা।
হজের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দ্বিতীয় দিক যা সর্বোচ্চ নেতার ভাষণে জোর দেয়া হয়েছে তা হল ইসলামের মানবাধিকারের প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিকে বিশ্ব সমাজে তুলে ধরা। একদিকে পশ্চিমা দেশগুলো মানবাধিকারের মানদণ্ডে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করে অন্যদিকে তারা অন্যান্য দেশগুলো বিশেষ করে ইসলামিক দেশগুলোকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করে। এছাড়াও, পশ্চিমাদের হজ সম্পর্কে একটি নিজস্ব এবং হ্রাসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তারা একদিকে ইয়েমেনে মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহায়তা করছে অন্যদিকে তারা ইউক্রেনে মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কে তাদের উদ্বেগকে অতিরঞ্জিত করছে।
হজে মৌসুম এমন একটি সুযোগ যা পশ্চিমাদের এসব ভন্ডামির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং বর্ণ, জাতি, শ্রেণী ও ভূগোল নির্বিশেষে মানুষের মর্যাদাকে সমানভাবে তুলে ধরে। এ প্রসঙ্গে বিপ্লবের নেতা বলেছেন: “সভ্যতার দাবিদার দেশগুলো যারা প্রকৃতপক্ষে সভ্যতার গন্ধ পায়নি তারা এখনও কালো এবং সাদা জাতিতে এবং ইউরোপীয় এবং অ-ইউরোপীয় জাতিতে বিভক্ত। এমনকি তারা তাদের পোষা প্রাণীকে কিছু লোকের চেয়ে অনেক বেশি মূল্য দেয় এবং সাগরে অভিবাসীদের ধারাবাহিকভাবে মৃত্যুতে ইউরোপীয়দের বিবেক নাড়া দেয়া না। আর এসবই হচ্ছে তাদের মানবাধিকারের আসল চরিত্র।
হজের রাজনৈতিক কার্যক্রমের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন এবং দখলদার ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণা। হজে মৌসুম এমন একটি উপলক্ষ্য যখন ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন এবং ইসরাইলের অপরাধ যজ্ঞের বিরুদ্ধে নিন্দার স্লোগান মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উচ্চারিত হয়। এছাড়াও হজের মৌসুমে ঔদ্ধত্যকামী শক্তিগুলোর বিরোধিতা এবং আমেরিকা বিরোধী স্লোগানও দেয়া হয়। তাই সর্বোচ্চ নেতা ইসলামি উম্মাহর মধ্যে ঐক্য এবং অহংকারী শয়তানদের মোকাবিলাকে হজ্বের প্রধান লক্ষ্য বলে উল্লেখ করে আরও বলেন, হজের বহু পার্থিব সুবিধার মধ্যে একটি হল এই বিশাল সম্প্রদায়ের মুসলমানদের উচিত ইহুদিবাদী শাসক ও দাম্ভিক শক্তির বিরুদ্ধে নিজেদের উপস্থিতির জানান দেয়া এবং বিশ্বের অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে নিজেদের বুককে পেতে দেয়ার শিক্ষা গ্রহণ করা। ”
পরিশেষে হজের এই ঐক্যবদ্ধ, তথ্যপূর্ণ এবং শত্রু-বিরোধী কার্যাবলীর কারণে কিছু পশ্চিমা শক্তি এবং ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী হজের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে আসছে এবং হজের কিছু অনুষ্ঠান না করার জন্য বিশেষ করে “মুশরিকদের কাছ থেকে মুক্তি” যার গুরুত্ব ইসলামে ব্যাপক ও গভীর তা না করতে তারা সৌদি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে।
Leave a Reply