অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর, গৃহহীন প্রান্তিক ও অতি-দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ অনুধাবন করে, তাদের পুনর্বাসনে ‘আশ্রয়ণ’ নামের যে প্রকল্পের স্বপ্ন দেখেছিলেন, আজ তা বহূলাংশে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী আর্থ-রাজনৈতিক সেই চিন্তা-চেতনার সুফল ভোগ করছে গ্রাম বাংলার লাখো মানুষ।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী এমনই একজনের নাম মনিরা বেগম। মনিরা বেগমের ভাষায় ‘সমস্ত জরাজীর্ণ আবহাওয়ায় বিশেষ করে বর্ষা ও শীতকালে, আমাদের সীমাহীন দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয়েছিল, কারণ আমি কার্যত খোলা আকাশের নিচে বাস করতাম।’ আর এখন? রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১৯০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্মীপুর জেলায় আশ্রায়ন প্রকল্পের স্বপ্নের বাড়ি পেয়ে মনিরার মুখে হাসি ফুটেছে। মনিরার মতে, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া বিনামূল্যে ‘উপহার’ হিসেবে এক টুকরা জমি ও বাড়ি হাজার হাজার আশ্রয়হীন মানুষকে খুশি করেছে। মনিরা বললেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প আমার পরিবারের জীবনধারাকে বদলে দিয়েছে, কারণ বাড়িটি আমাকে জীবিকার উৎস এবং সেইসাথে পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটেশনের মতো কিছু অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তৈরি করেছে।’
গ্রামীণ বাংলাদেশে, হাজার হাজার মানুষ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তাদের জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভাসমান জীবনযাপন করত। তাদের কোনো স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহৎ উদ্যোগে হাজার হাজার মানুষ তাদের স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প হচ্ছে- অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য একটি ‘শেখ হাসিনা মডেল’ । এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ পরিবার সারা দেশে এই ধরনের বাড়ি পেয়েছে। ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। সরকারি হিসেবে, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে মোট ৬৩,৯৯৯টি ঘর দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩,৩৩০টি এবং তৃতীয় ধাপে ৫৯,১৩৩টি ঘর দেওয়া হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প-১-এর সাফল্যের সাথে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর উদ্যোগ নেয়। আর প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত মোট ৩৯৩৬৫টি ঘর দরিদ্রদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তাদের মোট বাড়ির সংখ্যা ২,১৫,৮২৭ এ পৌঁছেছে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দরিদ্রদের আবাসন কর্মসূচির সূচনা করেছিলেন। কিন্তু, ১৯৭৫ সালে তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যার পর, শাসকরা কর্মসূচিটি স্থগিত রাখে, যার ফলে নদী ভাঙ্গন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাই শেখ হাসিনার পরিকল্পিত আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ছিল- মেহনতি মানুষের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর পদচিহ্নের অনুকরন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সরকার ৫,৫৪,৫৯৭ পরিবারকে পুনর্বাসন করেছে এবং তাদের মধ্যে ২,১৬,৭০৪ পরিবারকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন কর্মসূচিতে পুনর্বাসন করা হয়েছে। অতি-দরিদ্রদের আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র জনগণকে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে মৌলিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার, তাদের দারিদ্র্য বিমোচন এবং সমাজে সম্মানের সাথে বসবাসের আস্থা বৃদ্ধি করেছেন।
বাড়ি পাওয়ার পর, সুবিধাভোগীরা তাদের স্বপ্নকে সত্য ও জীবনকে অর্থবহ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি প্রতিনিয়ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। এই প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী তাদের দুই ডেসিমেল জমির দলিল এবং আলাদা রান্নাঘর ও বারান্দাসহ দুই কক্ষের বাড়ির চাবি সুবিধাভোগীদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
জেলার ৪৯ বছর বয়সী আমেনা বেগম অসুস্থ ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে তার দীর্ঘ যন্ত্রণার কথা বাসস’কে বর্ণনা করেছেন। অস্থায়ী বস্তিতে সন্তানদের নিরাপত্তাহীন রেখে ঘরে ঘরে দাসীর কাজ করত আমেনা। এখন আশ্রয়ণ প্রকল্পে তার আশ্রয় রয়েছে। প্রমীলা কর্মকার ৩০ বছর আগে রঞ্জিত কর্মকারকে বিয়ে করে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। পেশায় দিনমজুর এই দম্পতি তাদের তিন মেয়ের বিয়ে দিলেও তাদের সংগ্রামী জীবনে নিজেদের ঘর গুছিয়ে নিতে পারেন নি। তিনি বলেন, ‘আমার জামাইরা আমার বাড়িতে এলে আমি তাদের বসার জায়গা দিতে পারিনি। এখন আমি একটি বাড়ির মালিক হিসাবে খুব খুশি’। দাউদকান্দির দোলনারচরের ৪২ বছর বয়সী আরেফিন বলেন, আমার নিজের জমিতে স্থায়ী বাড়ি হবে তা কল্পনাও করিনি। আরেফিন তার বাড়ির আশেপাশে সবজি ও ফলের গাছ লাগান। তিনি বাড়ির এক কোণে একটি দোকানও চালান এবং তার একমাত্র মেয়ে এবং মাকে নিয়ে থাকেন। ‘আমি এই বাড়িটিকে খুব পছন্দ করতাম এবং এখানে আসার পর আমি এক মুহুর্তের জন্যও কোথাও যাইনি’- গাল বেয়ে আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়া আরেফিন বললেন।
দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলী সুমন বাসস’কে বলেন, প্রতিটি মানুষের বাসস্থান পাওয়ার মৌলিক অধিকার রয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প মানুষের অধিকার আদায়ের বাস্তব প্রকাশ। তার এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে হিজড়া, চা বাগানের শ্রমিক, কুষ্ঠ রোগীসহ অনেক সুবিধাবঞ্চিত মানুষ তাদের আশ্রয় পেয়েছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান এই মহান সংস্কারমূলক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিনুল হাসান মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার কথা স্মরণ করে বলেন, দেশে কেউ যেন ঘরছাড়া না হয়, সে জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দাউদকান্দি উপজেলায় মোট ৪৮৭ জন গৃহহীনকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৩০০টি ঘর ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ঘরগুলো জুন মাসে বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও।
Leave a Reply