22 Nov 2024, 09:36 pm

কুষ্টিয়ায় ১ লাখ ৭৮ হাজার গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ঈদুল আযহা উপলক্ষে জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। এবার জেলায় ১ লাখ ৭৮ হাজার গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
এবারো নানা আকৃতির বড় গরুগুলো বাহারি নাম নজর কেড়েছে সবার। তেমনই কুষ্টিয়ার কোরবানির পশুরহাটে নজর কাড়ছে বাহারি নামের একটি গরুর নাম ‘রাজাবাবু’। কালো রঙের ২২ মণ ওজনের ষাঁড়টির দাম ৮ লাখ টাকা চাচ্ছেন মালিক।
কোরবানি উপলক্ষে বিক্রির জন্য বেশ আদর-যত্নে রাজাবাবুকে প্রস্তুুত করেছেন ভেঁড়ামারা উপজেলার মোকাররমপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের খামারি শারমিন আক্তার ইতি। ইতি ওই গ্রামের দুবাই প্রবাসী শাহাবুল ইসলাম সান্টুর স্ত্রী। গড়ে প্রতিদিন ৬০০ টাকার খাবার লাগে রাজাবাবুর। গরুটিকে দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ভিড় করছে। খামারি ইতি বলেন, ফ্রিজিয়ান শাহীওয়াল ক্রস জাতের ষাঁড়টি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আমার ভাশুরে কাছে থেকে ৭৫ হাজার টাকায় কিনেছি। আদর করে তার নাম রাখা হয়েছে রাজাবাবু। ৫ ফুট উচ্চতার ষাঁড়টি লম্বায় ৭ ফুট। ২২ মণ অর্থাৎ ৮৮০ কেজি ওজনের ষাঁড়টিকে শুরু থেকেই ঘাস ও দানাদার খাবার খাওয়াচ্ছি। বেশির ভাগ সময় ঘাস খায়। আমি নিজে ঘাস চাষ করি। তাছাড়া গম, ছোলা ও ভুট্টার ভুসিসহ প্রতিদিন ৬০০ টাকার দানাদার খাবার লাগে তার। রাজাবাবু খুবই শান্ত প্রকৃতির। সন্তানের মতো লালন-পালন করে এবার কোরবানিতে বিক্রির জন্য প্রস্তুুত করেছি। দাম চাচ্ছি ৮ লাখ টাকা। তিনি আরও বলেন, রাজাবাবুর আকর্ষণীয় নাম আর আকারে বড় হওয়ায় ষাঁড়টিকে দেখতে প্রতিদিন উৎসুক মানুষ আমার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। ষাঁড়টির খাবারের পেছনে প্রতিদিন যে টাকা খরচ হয়েছে, তাতে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারলে কিছুটা লাভ হবে। এরইমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী ষাঁড়টি কেনার জন্য যোগাযোগ করেছেন। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম বলেননি কেউ। ভালো দামে বিক্রি করতে পারলে আমারও পরিশ্রম সার্থক হবে। সকালে ঘাস খায়। দুপুরে ভুট্টার গুড়া, আটা, ধানের গুড়া, খৈল, গমের গুড়া, ছোলার গুড়া, গুড় ও পানি দিয়ে খাবার খেতে দিই। বিকেলে ও রাতে ঘাস, তারপর পানি খেতে দিই। প্রতিদিন সকাল ও বিকেল গোসল করিয়ে দিই। আমার স্বামী দুবাই থাকেন, এজন্য যাবতীয় সবকিছু আমাকেই করতে হয়। বাড়ির পাশে লিবিয়া ঘাস চাষ করি। নিজেই কাটি ও খেতে দিই। সবসময় খেয়াল রাখতে হয়। মাঝেমধ্যে আমার ৮ বছর বয়সী ছেলে ও আমার ভাশুর আমাকে হেল্প করে। আমি গরু পালনের পাশাপাশি মাঠে সবজির চাষ করি। এক প্রশ্নের জবাবে ইতি আরও বলেন, ২০২১ সালের প্রথম দিকে ৬-৭ মাস বয়সী বাছুরটিকে ৭৫ হাজার টাকায় কিনি। শখের বশে গরু পালন শুরু করেছি। তবে এখন আমার একটা খামার দেয়ার স্বপ্ন আছে। রাজাবাবুকে আমি অনেক ভালোবাসি। তাকে বিক্রি করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে, তবুও বিক্রি করতেই হবে। রাজাবাবুকে বিক্রি করে একটা খামার দিবো। খামারি ইতির মা আম্বিয়া বেগম বলেন, আমার মেয়ে কয়েক বছর আগে এই গরুর বাছুর কিনেছিলো। প্রথম থেকেই নিজের সন্তানের মতো আদরযতœ করে রাজাবাবুকে। রাজাবাবুর জন্য অনেক পরিশ্রম করে। বাচ্চা ছেলেকে কোলে নিয়ে কাজ করে। গরুটা অনেক বড় হয়েছে। আমার মেয়ে শখ করে গুরুটি কিনেছিলো। এটি বিক্রি করে একটা খামার দিতে চায় ইতি। প্রতিবেশীরা বলেন, ইতি খুবই পরিশ্রমী নারী। তার স্বামী বিদেশে থাকে। বাড়িতে তার ৮ বছর ও ১১ মাস বয়সী দুই ছেলে সন্তানের মা। সে নিজেই সংসারে কাজকর্ম করে, গরু পালন করে, মাঠে ঘাস ও সবজির চাষাবাদ করে। গরুটি অনেক বড় হয়েছে। রাজাবাবুকে দেখার জন্য অনেকে ভিড় করছে তাদের বাড়িতে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় ৭১ হাজার গরু, ১ লাখের বেশি ছাগলসহ ১ লাখ ৭৮ হাজার গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। বিভিন্ন খামারে বড় বড় গরু আছে। কোরবানি উপলক্ষে খামারিদের সঙ্গে আমরা সবসময় যোগাযোগ রাখছি। সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *