অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ভোটারদের সমর্থন ইস্যুতে। তিনি প্রয়োজনীয় এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান।
রবিবার (১৮ জুন) আগারগাঁওয়ের নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘যে কোনও সংসদীয় আসনে নির্বাচন করতে হলে এক শতাংশ ভোটারের নাম ও স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর নিতে পারেননি তিনি। রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রতিনিধি দল সরেজমিন ঘুরে হিরো আলমের দেওয়া এক শতাংশ ভোটারের হদিস পায়নি। এজন্যই তার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, এই উপ-নির্বাচনে মোট ১৫ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে বাছাইয়ে সাত জনের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। বাকি আট জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। যাদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, তারা চাইলে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন– জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদপন্থি মো. মামুনুর রশিদ, মো. তারিকুল ইসলাম ভূঁঞা (স্বতন্ত্র), আবু আজম খান (স্বতন্ত্র), আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম), মুসাউর রহমান খান (স্বতন্ত্র), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মো. মজিবুর রহমান ও শেখ আসাদুজ্জামান জালাল।
তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ জুন। পরদিন হবে প্রতীক বরাদ্দ। ১৭ জুলাই সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়া হবে।
গত ১৫ মে এই আসনের সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠানের (ফারুক) মৃত্যু হলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
এদিকে মনোনয়ন বাতিলের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হিরো আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওনারা যে ভোটারের সংখ্যার কথা বলেছে, তা আমি দিয়েছি। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, ঋণ খেলাপি ও মামলাসহ কোনও কিছুতেই আমার দোষ খুঁজে পায়নি। বের করেছে কি? তারা (নির্বাচন কমিশন) ১০ জন ভোটার নাকি খুঁজে পায়নি। কিন্তু আমার ভোটাররা এখানে উপস্থিত আছেন, তারা স্বাক্ষরও করেছেন। আপনারা যদি চান তাহলে ভোটারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তারা নাকি আমার ১০টা ভোটার খুঁজে পায়নি। নির্বাচন কমিশন থেকে আমাকে ফোন করা হয়, তারা নাকি আমার ভোটার খুঁজে পায় না। তখন আমি তাদের নিজেই সহযোগিতা করি। আমরা এক মাস ধরে ৩ হাজার ৩০০ ভোটারের নাম সংগ্রহ করেছি। অথচ তারা পেলো না। আমার ভোটারদের তারা ভালো করে খোঁজেনি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, ‘কমিশন গুলশান, নিকেতন ও বনানী এলাকার ভোটারদের কাছে যায়নি। তারা গেছে বস্তি এলাকায়। বস্তি এলাকার মানুষ পুলিশ দেখলে এমনিতেই ভয় পায়। কমিশন কড়াইল বস্তি এলাকায় গেছে। সিভিল ড্রেসে যেতে পারতো, অথচ পুলিশ নিয়ে গেছে। সেখানে চায়ের দোকানদার যখন শুনেছে তাকে খুঁজতে পুলিশ আসছে, তখন সে কিছু না ভেবেই পালিয়ে গেছে। ছয়জন পুলিশ সঙ্গে নিয়ে গেলে কে আপনাকে তথ্য দেবে? আমার সাথে তারা অন্যায় করলো।’
আদালতে যাবেন কিনা— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভোটে পাস করলেও কেন আমাকে ক্ষমতায় বসানো হয় না? প্রতিবার আমার প্রার্থিতা বাতিল করছে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, কোর্টে গেলে আমার প্রার্থিতা ফিরে পাবো। কারণ সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমি অবশ্যই আদালতে যাবো প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার জন্য।’
এর আগেও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে ন্যূনতম ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরসহ সমর্থনসূচক তালিকায় গরমিল থাকায় হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল। পরে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পান।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এর ১২(২)(৩এ)(এ) ধারা অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহের বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী যে নির্বাচনি এলাকা হইতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে ইচ্ছুক, কেবল সেই এলাকার ভোটারদের সমর্থন ফরম (ক)-তে উক্ত প্রার্থীর প্রার্থিতার অনুকূলে সংগ্রহ করতে হইবে।
এতে আরও বলা হয়, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী বা তদকর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধি কর্তৃক তফসিলের ফরম ক-তে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার এক শতাংশ ভোটারের তথ্য লিপিবদ্ধপূর্বক ভোটারগণের স্বাক্ষর কিংবা টিপসহি সংগ্রহ করতে হবে। ভোটারদের স্বাক্ষর যথাযথ কিনা রিটার্নিং কর্মকর্তা তা যাচাই করেন।’
Leave a Reply