25 Nov 2024, 07:41 am

মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার সংক্রমণে আমেরিকায় আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে ‘মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবা’র সংক্রমণে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত ওই ব্যক্তি দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা। মিঠা পানির হ্রদ বা পুকুরে সাঁতার কাটতে গিয়ে তিনি এই অ্যামিবাতে সংক্রমিত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মগজ খেকো এই অ্যামিবা নেগেলেরিয়া ফাউলেরি নামে পরিচিত। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

এবিসি নিউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার এক ব্যক্তি মস্তিষ্কের বিরল এক সংক্রমণে মারা গেছেন, যা সাধারণত ‘মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবা’ নামে পরিচিত। জর্জিয়ার জনস্বাস্থ্য বিভাগের মতে, মিঠা পানির হ্রদ বা পুকুরে সাঁতার কাটতে গিয়ে ওই ব্যক্তি সম্ভবত সংক্রমিত হয়েছিলেন।

স্বাস্থ্য বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘জর্জিয়ার এক বাসিন্দা নেগেলেরিয়া ফাউলেরি সংক্রমণে মারা গেছেন। এটি এক ধরনের বিরল সংক্রমণ যা মস্তিষ্কের টিস্যু ধ্বংস করে এবং এর ফলে মস্তিষ্ক ফুলে যায় ও সাধারণত মৃত্যু ঘটায়। জর্জিয়ার মিঠা পানির হ্রদ বা পুকুরে সাঁতার কাটার সময় ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি সম্ভবত সংক্রামিত হয়েছিলেন।’

অবশ্য মৃত ওই ব্যক্তির নাম, বয়স, লিঙ্গ এবং গোত্রসহ রোগী সম্পর্কে বিশদ তথ্য প্রদান করা হয়নি। এই ঘটনার আগে ১৯৬২ সাল থেকে জর্জিয়ায় নেগেলেরিয়া ফাউলেরির আরও পাঁচটি ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছিল।

এর আগে গত জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে ‘মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবা’র সংক্রমণে ২ বছর বয়সী এক ছেলে শিশুর মৃত্যু হয়। মৃত ওই শিশুর নাম উড্রো বান্ডি এবং তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদায় বসবাস করে। পানিতে খেলা করার সময় শিশু উড্রো এই অ্যামিবার সংক্রমণের শিকার হয়েছিল।

তারও আগে ‘মস্তিষ্ক খেকো এই অ্যামিবা’র সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মৃত ওই ব্যক্তি দেশটির ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা ছিলেন। ফ্লোরিডার শার্লট কাউন্টির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সেসময় জানিয়েছিলেন, ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি সম্ভবত কলের পানি দিয়ে নাক পরিষ্কারের পর মস্তিষ্ক খাওয়া এই অ্যামিবাতে সংক্রমিত হয়েছিলেন।

সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, নেগেলেরিয়া ফাওলেরি হলো এক ধরনের অ্যামিবা (এককোষী জীবন্ত জীব) যা হ্রদ, নদী এবং উষ্ণ প্রস্রবণের মতো উষ্ণ মিঠা পানির পরিবেশে পাওয়া যায়। অ্যামিবাযুক্ত পানি নাক দিয়ে চলে গেলে এটি মস্তিষ্ককে সংক্রামিত করতে পারে এবং তাই এটি ব্রেন-ইটিং অ্যামিবা নামেও পরিচিত। এই ধরনের রোগ বিরল হলেও প্রায় সবসময়ই এটিকে মারাত্মক বলে মনে করা হয়।

নেগেলেরিয়া ফাউলেরি নামে পরিচিত এই অ্যামিবা নাক দিয়ে মস্তিষ্কে সংক্রমিত হয়ে থাকে। কর্মকর্তারা বলছেন, তবে পানির মাধ্যমে এটি পান করা বিপজ্জনক নয়। দূষিত পানি নাক দিয়ে না উঠলে মানুষ আক্রান্ত হয় না।

নেগেলেরিয়াযুক্ত পানির সংস্পর্শে আসার এক থেকে ১২ দিনের মধ্যে সংক্রমণের লক্ষণগুলো দেখা দেয়। সিডিসি অনুসারে, সংক্রমণের লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার এক থেকে ১৮ দিনের মধ্যে আক্রান্ত লোকেরা মারা যায়। এই রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব, বমি, বিভ্রান্তি, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, খিঁচুনি এবং/অথবা হ্যালুসিনেশন।

চলতি বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছিল, অ্যামিবা সাধারণত সুইমিং পুল, হ্রদ এবং পুকুরের মতো উষ্ণ মিষ্টি পানিতে বাস করে। এটি নাক দিয়ে প্রবেশ করলে মানুষের মস্তিষ্কে গুরুতর সংক্রমণ হতে পারে, তবে এটি সাধারণত মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে সেটিকে নিরাপদ বলেই মনে করা হয়। কারণ পাকস্থলীর অ্যাসিড একক কোষের এই অণুজীবকে মেরে ফেলে।

সিডিসির পরিসংখ্যান বলছে, শীতের মাসগুলোতে এই অ্যামিবার সংক্রমণ অবিশ্বাস্যভাবে বিরল। কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, সংক্রমণ এড়াতে লোকেদের তাদের নাকের ভেতরের অংশ অপরিশোধিত কলের পানি দিয়ে ধোয়া বা পরিষ্কার করা উচিত নয়।

এক্ষেত্রে জীবাণুমুক্ত বা ডিস্ট্রিল্ড পানি ভালো বিকল্প হতে পারে। এছাড়া ট্যাপের পানিও ব্যবহার করা যেতে পারে যদি এটি কমপক্ষে এক মিনিট সিদ্ধ করা হয় বা ফোটানো হয় এবং ব্যবহারের আগে ঠান্ডা করা হয়।

একইসঙ্গে সুইমিং পুলে সাঁতার বা গোসল করার সময় বা ঝর্ণার পানি ব্যবহার করার সময় নাকের ভেতরে পানি না দিতেও লোকদের সতর্ক করা হয়ে থাকে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *