07 Oct 2024, 10:23 pm

গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ গুণ ; মৃত্যু তিন গুণ বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, গত বছরের থেকে এবার বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ ১০ গুণ এবং মৃত্যু প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (এনআইপিএসএম)-এর কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম ছারোয়ার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনার বলেন, ‘২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ডেঙ্গু পজিটিভ কেস ১০ গুণ এবং  মৃত্যু তিন গুণ বেড়েছে।’
এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ ‘বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন ড. আর. এ গনি ও মিসেস হোসনে আরা গণি ট্রাস্ট ফান্ড এবং এশিয়াটিক সোসাইটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. একেএম আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া।
মূল প্রবন্ধে ডা. ছারোয়ার ব্যাখ্যা করে বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের দেশের পরিবেশগত কারণগুলো যেমন-তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত বাড়ছে, এগুলো এডিস মশার প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, এখানে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং আনুষঙ্গিক কর্মকান্ড, যেমন-বহুতল ভবন নির্মাণ, জলপথ রুদ্ধ করা, পুরনো গাড়ি ডাম্পিংয়ের মাধ্যমে শহরগুলোকে মশার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
ছারোয়ার বলেন, “সুতরাং আমরা সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ আজ অসহায় হয়ে পড়েছি। যেহেতু আমরা  প্রজনন এলাকা এবং মশার প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করছি, কিন্তু সেভাবে আমরা কখনই এর প্রতিরোধ সম্পর্কে একইভাবে চিন্তা করছি না।”
তিনি আরও বলেন, আমাদের অজান্তে বিভিন্ন কর্মকান্ড এবং এডিস মশার আকারগত, জৈবিক ও আচরণগত পরিবর্তন হওয়ার ফলে এই মশার প্রজনন বৃদ্ধির মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
ফলে, সারা দেশে অপ্রত্যাশিতভাবে ডেঙ্গু আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাই প্রচন্ড চাপের মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে ছারোয়ার বলেন, দেশব্যাপী জরিপের মাধ্যমে এডিস মশার ঘনত্ব এবং ডেঙ্গুর তীব্রতা পরীক্ষা করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
এই কীটতত্ত্ববিদ তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, একটি সাধারণ একক পদ্ধতির পরিবর্তে একটি সমন্বিত ভেক্টর ব্যবস্থাপনা বা আইভিএম পদ্ধতির প্রয়োজন। একইভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রতিবেশী দেশগুলো যেভাবে সফল হয়েছে আমাদের সেই ধারণা নিয়ে কাজ করতে হবে এবং সমরয়াপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে ডেঙ্গু সমস্যা  সমাধানে এগিয়ে যতে হবে।
ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস) জানিয়েছে, ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৬৪ জন ডেঙ্গু পজিটিভ  এবং ৭৯০ জন ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ করেছে।
ডিজিএইচএস-এর এক তথ্যে বলা হয়েছে, দেশে ২০০০ সালে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে এক মাসে সর্বোচ্চ আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, আর চলতি মাসে ৩৪২ জন ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০০০ সালে ঢাকা শহরে ভেক্টরবাহিত রোগটি দেখা দেয়, পরবর্তীতে শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই ডেঙ্গু পজিটিভ কেস শনাক্ত হয়। কিন্তু ডেঙ্গু রোগটি তার প্রকৃতি পরিবর্তন করছে এবং এটি ধীরে ধীরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘দেশের ৬৪টি জেলায় ডেঙ্গু পজিটিভ কেস দেখা গেছে।’
ডিজিএইচএস জানিয়েছে, শুধুমাত্র জুলাই মাসে ৪৩ হাজার ৮৫৪জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এবং এতে  ২০৪ জন মারা গেছে।
আর ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৮ হাজার ১৫৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এবং একই সময়ে  মশাবাহিত এই রোগে ১৯৭ জন মারা গেছে।
ডিজিএইচএস-এর তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে, যা ২০০০ সালে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এছাড়া ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪০৫জন, ২০২০ সালে ২৮ হাজার ৪২৯ জন এবং ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, ২০২০ সালে সাত জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 3173
  • Total Visits: 1134937
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1639

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ৭ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
  • ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
  • ৪ঠা রবিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১০:২৩

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018