25 Nov 2024, 02:26 am

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের বিবৃতির প্রতিক্রিয়া জানালো সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) বিবৃতির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ৩১ অক্টোবর ওএইচসিএইচআর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এরই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থাকে দেওয়া বিবৃতিতে।

সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের এক দফা অসাংবিধানিক দাবির নামে বিএনপি নজিরবিহীন সহিংসতা ও জনবিশৃঙ্খলা প্রদর্শনে বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে মর্মাহত। বিএনপির অনুরোধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সুনির্দিষ্ট শর্তে ২৮ অক্টোবর দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি দেয়। তবে বিএনপি কর্মীরা নির্বিচারে রাস্তায় সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ এবং ব্যক্তি ও সম্পত্তির উপর অন্যান্য হামলার আশ্রয় নিয়েছে। এ ধরনের ব্যাপক সহিংসতার মূল লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে- অরাজনৈতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচারবিভাগ, নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সম্পত্তি।

বিবৃতিতে বলা হয়, অসংখ্য ভয়াবহ চিত্র ও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের এক সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে- রাস্তায় প্রকাশ্যে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও কয়েক ডজন সদস্যের ওপর হামলা ও আহত করা হয়েছে। বাসসহ একজন বাস কন্ডাক্টরকে জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ট্রাকসহ বেশ কয়েকটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের অন্যান্য বিচারকদের বাসভবন ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বেশ কয়েকটি থানা ভাঙচুর করা হয়, সাংবাদিক ও ফটোকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এমনকি বিএনপির এ ধরনের অব্যাহত নৃশংসতার মুখেও বাংলাদেশ সরকার ও এর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সংযম ও ধৈর্য দেখিয়েছে এবং জনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ন্যূনতম ও সর্বোত্তম শক্তি প্রয়োগ করেছে।

মোটরসাইকেলে চড়ে আসা ‘মুখোশধারী ব্যক্তিরা’ ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক বলে মনে করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার। বিবৃতিতে বলা হয়, বহুল প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিএনপির সমাবেশ থেকে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুর করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়ন নামে এক ব্যক্তিকে প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরিহিত এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এজেন্ট পরিচয় দিয়ে গাড়িতে আগুন দেওয়ার বিষয়টি চিহ্নিত করা হয়েছে। আহত সাংবাদিকরা দাবি করেননি যে, তারা ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ ফেডারেল জার্নালিস্ট ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি কর্মীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

সরকারের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিএনপির কর্মকাণ্ড থেকে এটা স্পষ্ট যে, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, জীবন ও জীবিকা বিঘ্নিত করা, অর্থনীতি বিঘ্নিত করা, গণযোগাযোগ, পরিবহন ও লজিস্টিকস ভেঙে পড়া এবং দেশে সম্পূর্ণ নৈরাজ্য নিশ্চিত করার সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে তারা সহিংসতা, বিশেষ করে অগ্নিসংযোগের পথ বেছে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে এবং সহানুভূতি অর্জনের জন্য বিএনপি ভুল তথ্যের আশ্রয় নিয়েছে। বিএনপি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে ভুয়া ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা’ পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। জাতিকে আতঙ্কিত করা এবং বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার পেছনে বিএনপির উদ্দেশ্য হচ্ছে আসন্ন নির্বাচন ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করা। দুর্ভাগ্যবশত ওএইচসিএইচআর হয়তো বিএনপির ভুল তথ্য প্রচারণার শিকার হয়েছে।

মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কাজে অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা, নিরপেক্ষতা প্রতিফলিত করতে হবে। সরকার আশা করছে যে, ওএইচসিএইচআর তার ৩১ অক্টোবরের প্রেস ব্রিফিং নোটটি সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সংশোধন করবে। ওএইচসিএইচআর-এর বক্তব্য যদি অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ না হয়, তাহলে জনগণের সমর্থন, গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।

বাংলাদেশ সরকার যে কোনো মূল্যে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ অগণিত ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে যে গণতন্ত্র অর্জন করেছে, তার স্বার্থে বাংলাদেশ সরকার আমাদের সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে সমর্থন করবে। স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ করছে। নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিদেশি গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14466
  • Total Visits: 1298902
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ২:২৬

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018