25 Nov 2024, 10:28 am

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ-বিরতির আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ-বিরতি ও অঞ্চলটিতে অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত ও অবিলম্বে যুদ্ধ-বিরতির জন্য আমি সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমি এই ভয়াবহ যুদ্ধ, নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ ও অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধে ভুমিকা রাখার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি এখানে ‘ইসলামে নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে এ আহ্বান জানান।
সোমবার শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমি আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের পক্ষে আমার ভূমিকা অব্যাহত রাখব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির জন্য তাদের মুসলিম নারীদের আওয়াজ শুনতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা গাজায় নিরীহ নারী ও শিশুদের ওপর ইসরাইলি নৃশংসতার নিন্দা করছি। গাজার এ নৃশংসতা, ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় অমানবিক নির্যাতনের শিকার দুই লাখ নারীর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এ নৃশংস ঘটনাগুলো আমাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বাবা-মা এবং নারী ও শিশুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নৃশংস হত্যাকা-ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এটি মিয়ানমারের হাজার হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর নির্যাতনের দৃশ্যকেই ফুটিয়ে তোলে- যারা নৃশংসতার শিকার হলে ২০১৭ সালের আগস্টে আমাদের সীমান্তে আশ্রয় চেয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী মুসলিম নারীদের জন্য এক গুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছেন। পরামর্শগুলো হল :
প্রথমত, ফিলিস্তিনে অবিলম্বে সংঘাতের অবসান এবং সেখানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের- বিশেষ করে নারী ও শিশুদের উপর অপরাধের বিচার।
দ্বিতীয়ত, সমস্ত অপরাধ, সহিংসতা, বৈষম্য ও নারীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়াকে ‘না’ বলুন।
তৃতীয়ত, এসডিজি-৫ পূরণের লক্ষ্যে লিঙ্গ সমতা অর্জন ও নারীদের ক্ষমতায়নের দিকে যথাযথ মনোযোগ দিন।
চতুর্থত, মুসলিম নারীরা যেন ইচ্ছেমতো স্বাধীনভাবে জনসমক্ষে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারেন- তা নিশ্চিত করুন।
পঞ্চমত, নারী ক্ষমতায়ন ও মূল স্রোতে নারীদের ভূমিকার উজ্জ্বল উদাহরণ বাংলাদেশ, বন্ধুপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বিনিময়ে প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে এই বহুল প্রতীক্ষিত ইস্যুগুলোতে সংলাপ প্রত্যাসিত।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে এর সম্ভাবনা উপলব্ধি করে খুব তাড়াতাড়ি ওআইসি’র নারী উন্নয়ন সংস্থায় (ডব্লিউডিও) যোগ দেয়। তিনি বলেন, ‘ডব্লিউডিও এর যাত্রা শুরু করেছে এবং আমি আশা করি, ইসলামকে আরও ভালভাবে বোঝার মাধ্যমে আজকের চাহিদাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এ ম্যান্ডেটকে প্রসারিত করা যেতে পারে। আর তবেই আমরা একটি বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের স্বপ্ন দেখতে পারি। আমি এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সাফল্য কামনা করছি।’
শেখ হাসিনা এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইসলামে নারীর মর্যাদা তুলে ধরার জন্য সৌদি আরব ও ওআইসিকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নারীমুক্তির জন্য সৌদি আরবের যুগান্তকারী উদ্যোগগুলোকে আগ্রহের সাথেই লক্ষ্য করি। আমি মহামান্য বাদশাহ ও হিজ রয়েল হাইনেস যুবরাজের এই রূপান্তরমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করি।’ ইসলামকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লামের আহ্বানে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ছিলেন একজন নারী- বিবি খাদিজা। পবিত্র কুরআনের সূরা আন-নিসা’র আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা পরস্পরের এবং রক্ত সম্পর্কের অধিকার চাও। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বদাই তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারীর অধিকার ও লিঙ্গ সমতা রক্ষায় তাদের গর্বিত ঐতিহ্য রয়েছে। বাংলাদেশের রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের মতো পথপ্রদর্শক আছেন, যিনি ১৯০৫ সালে প্রকাশিত তার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ বইতে নারী নেতৃত্বাধীন বিশ্বের কল্পনা করেছিলেন। ইংরেজিতে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর, অর্ধেক তা করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমমর্যাদা নিশ্চিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে নারীদের জন্য ১৫টি সংরক্ষিত আসনের বিধান করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর মেয়ে হিসেবে তিনি নারী ক্ষমতায়নের এ কাজটি অব্যহত রেখেছেন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫০টিতে উন্নীত করেছেন। আমাদের জাতীয় সংসদে এখন ৭৩ নারী সাংসদ রয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীরা সব সময়ই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক সংস্কার ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রথম সারিতে থেকেছেন। তারা নিজেরাই যেন কাজের মাধ্যমে তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারেন, আমি তাদের প্রতি সেই আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বৈশ্বিক সূচকে বিশ্বের শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটি অনন্য উদাহরণ আছে- যেখানে জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা ও
সরকারি দলের উপনেতা সবাই নারী। এছাড়াও আমাদের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত রয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সর্বস্তরে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘যতবার আমি দায়িত্বে এসেছি, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের উন্নীত করার জন্য সমস্ত বাধা দূর করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রশাসন, বিচার বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্য সংস্থায় আমাদের নারীদের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হতে দেখে আমি গর্বিত বোধ করি।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তাদের মেয়েরা পাবলিক পরীক্ষা, প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ ও জাতীয় পর্যায়ের খেলায় অংশ নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির হোস্ট হিসাবে আমি ওআইসি সদস্য দেশগুলোর তরুণ মহিলাদের এই চমৎকার প্রতিষ্ঠানে পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে নারীদের জন্য সুবিধাসহ সারা দেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণ করছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিও আমাদের নারীদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের প্রমাণ।
বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রায় ৪৬% নারী কর্মী। নারী উদ্যোক্তারা আমাদের কুটির, ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পে বড় ধরনের অবদান রাখছেন। আইটি ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স এবং স্টার্ট-আপে নারীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি রয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকার অর্থ, বাজার, ধারণা ও প্রশিক্ষণে নারীদের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।’ সরকারী ক্ষেত্রে ছয় মাসের বেতনের মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুর করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অংশীদারদের সাথে যোগাযাগ রক্ষা করে যাচ্ছি- যাতে বিদেশে কর্মরত নারী কর্মীদের সুরক্ষা ও মঙ্গল নিশ্চিত করা যায়। সরকারের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র, বিধবা, পরিত্যক্ত, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক নারীরা উপকৃত হচ্ছে। সরকার বিনামূল্যের আবাসন ও আশ্রায়ন প্রকল্পে স্বামী ও স্ত্রী উভয়কে যৌথ মালিকানা দিচ্ছে, যাতে বিচ্ছেদ হলে সেটি স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। যৌতুক, বাল্যবিবাহ ও সাইবার হয়রানির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আইন অনুসারে সকল জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। আমরা নারী শান্তি ও নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। আমাদের নারী শান্তিরক্ষীরা গর্বের সাথে আফ্রিকায় জাতিসংঘের মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14690
  • Total Visits: 1303619
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১০:২৮

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018