অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবিত ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক আগেই বিশ্ব দরবারে সুনাম কুড়িয়েছে।
আগে এই কমিউনিটি ভিত্তিক ক্লিনিকগুলো গ্রামীণ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ প্রদান করা হলেও সম্প্রতি একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় ৪টি উপজেলায় যোগ হয়েছে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধ। স্বাস্থ্য খাতে বেড়ে চলা অসংক্রামক রোগের চাপ কমাতে এবং জনগণের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকের ওষুধের তালিকায় যুক্ত করেছে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের সব মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশে এই অনন্য কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, যা তৃণমূল পর্যায়ের সরকারের মানুষের দোরগোড়ায় সারাদেশের স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি সিলেট জেলার ৪টি উপজেলার (গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিশ্বনাথ এবং বিয়ানীবাজার) ৮৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক যুক্ত হয়েছে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ।
আগামী বছর থেকে দেশের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকেএসব ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অধীনে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের (সিবিএইচসি) লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই চেয়েছেন কমিউনিটি ক্লিনিকে যেসব ওষুধ দেয়া হবে সেগুলো যাতে ঠিকভাবে রোগীরা পায়।
তালুকদার বলেছেন,গত ২৫ জুন উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের এই দু’টি ওষুধ কেনার বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। ইতোমধ্যে, মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে। তিনি জানান, চলতি অর্থ বছরেই এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে।
ইতোমধ্যে বিষয়টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডিসিএল) জানানো হয়েছে। টেন্ডারের কাজ সম্পন্ন করে আমরা অর্ডার দিলেই ইডিসিএল ওষুধ উৎপাদনে যাবে। তখন কাজটা খুব দ্রুতই করতে পারব। দেশজুড়ে ১৪ হাজার ২৫০টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। সেখান থেকে রোগীরা ওষুধ পাবেন।
এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানী লিমিটেড (ইডিসিএল) এর উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) মো. জাকির হোসেন জানান, আগামী অর্থবছরে সকল কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
জানা যায়, গত ১৪ মে কমিউনিটি ক্লিনিকে ব্যবহৃত ওষুধের তালিকা হালনাগাদকরণ কমিটির সভায় তালিকায় উচ্চ রক্তচাপের জন্য এমলোডিপিন ৫ মিলিগ্রাম ও ডায়াবেটিসের জন্য মেটফরমিন ৫০০ মিলিগ্রাম ওষুধ সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের উপস্থিতিতে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) ইনসুলিন ইনজেকশন কীভাবে দিতে হয় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার সুপারিশও করা হয়।
অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, দেশব্যাপী এই কর্মসুচি দেশব্যাপী সম্প্রসারিত করা গেলে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের প্রকোপ অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে। অসুস্থতা ও মৃত্যু কমবে সরকারের এ খাতে চিকিৎসা ব্যয় কমবে।
২০২২ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির এক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, দেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগী মোট জনসংখ্যার ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সি প্রতি ৪ জনে একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। প্রতি বছর নতুনভাবে ১৫ লাখ ৩০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক উচ্চ রক্তচাপের রোগী বাড়ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ৪৫ শতাংশই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
২০১৮ সাল থেকে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ ্যবিষয়ক অলাভজনক সংস্থা রিজলভ টু সেভ লাইভসের (আরটিএসএল) সহযোগিতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনসিডিসি) ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ (এনএইচএফবি) যৌথভাবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। যার উদ্দেশ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা, চিকিৎসা দেয়া এবং ফলোআপ কার্যক্রম শক্তিশালী করা। কার্যক্রমটি দেশের ২৩টি জেলার ১৮২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হাটর্স টেকনিক্যাল প্যাকেজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ সেবা দিয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা ও ওষুধের পিছনে ১ টাকা ব্যয় করলে সামগ্রিককভাবে ১৮ টাকার সুফল পাওয়া যায়।
কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলেই এই ওষুধ মিলবে- বিষয়টি এমন নয় উল্লেখ করে ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ওষুধ মিলবে ঠিকই; কিন্তু এর জন্য কিছু শর্ত আছে। সিএইচসিপিরা চাইলেই কাউকে ওষুধ দিতে পারবেন না। প্রথমে রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (এনসিডি কর্নারে) চিকিৎসক দেখাতে হবে। চিকিৎসক যদি মনে করেন রোগীর ওষুধের প্রয়োজন এবং প্রেসক্রিপশনে তা উল্লেখ করেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ওষুধ প্রাপ্তির বিষয়ে সুপারিশ করেন সেই প্রেসক্রিপশন দেখে সিএইচসিপিরা ওষুধ সরবরাহ করবেন।
Leave a Reply