অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বগুড়ায় তৈরি অটো ফিল্টার দেশের চাহিদার অধিকাংশ পূরণ করে এখন বিশ্বের বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ফিল্টারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফিল্টারের বাজার ধরতে বগুড়ায় আরো একটি কারখানা স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের নাম বগুড়া মোটরস। এই প্রতিষ্ঠান ১১ হাজার ২৫০ মার্কিন ডলারের ফিল্টার রপ্তানি করেছে যুক্তরাজ্যে। বগুড়া মোটরস ইঞ্জিন ফিল্টার তৈরিতে তাদের আধিপত্য ধরে রেখেছে গত ৩০ বছর ধরে। দেশে ও বিদেশে তাদের তৈরি এয়ার, ওয়েল এবং ফুয়েল—এই তিন ধরনের ফিল্টারের চাহিদা রয়েছে। উভয় জায়গায়ই সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে তারা। মানসম্পন্ন ফিল্টারের কারণে দেশের বাজারেও ক্রমাগত চাহিদা বাড়ছে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা পাওয়ার ফিল্টার তৈরিতে বগুড়া মোটরস কারখানায় ১২৬ জন শ্রমিক কাজ করছেন। এই ফিল্টার মোটরসাইকেল থেকে দেশের সব ধরনের গাড়িতে ব্যবহার করা যায়।
১৯৬৫ সালে বগুড়ার বিসিক শিল্পনগরী (বিসিক) এলাকায় দুই বিঘা জমিতে শুরু হয় বগুড়া মোটরসের যাত্রা। প্রথমে এখানে পুরাতন মোটরগাড়ি মেরামত করা হতো। মূলত ইঞ্জিনের ক্র্যাঙ্কশ্যাফেটর কাজ হচ্ছিল। পরে চাহিদার প্রেক্ষাপটে ১৯৮৯ সালে ব্যবসার ধরন পালটে ফিল্টার তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়। লক্ষ্য নেওয়া হয় আন্তর্জাতিক মানের ফিল্টার তৈরি করার। ২০০৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানে উত্পাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মান সংস্থা (আইএসও) থেকে সনদ পাওয়ার পর ২০০৭ সালে বিশ্ববাজারে এই ফিল্টার পরিচিতি লাভ করে। ঐ বছর কানাডায় রপ্তানি করা হয় পাওয়ার ফিল্টার। সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে আরো এগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানটি এখন স্পেন, পর্তুগাল, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির দুয়ার উন্মোচনের পরিকল্পনা করছে। একই সঙ্গে দেশে পাওয়ার প্ল্যান্টের ফিল্টারের বাজার ধরতে বগুড়ায় তারা নতুন আরেকটি কারখানাও স্থাপন করতে যাচ্ছে। এই কোম্পানির ফিল্টারসহ বগুড়া থেকে ২০২২ সালে রপ্তানি হয়েছে ৫ কোটি ৭২ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৬০৭ কোটি টাকার ওপরে।
প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রধান পরিচালক ডা. তাহমিদুল ইসলাম জানান, দেশে সেনাবাহিনী, বিজিবি, প্রাণ-আরএফএল কোম্পানিসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানে পাওয়ার ফিল্টারের চাহিদা ব্যাপক। তিনি বলেন, বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে শুধু তাদের প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশ থেকে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ফিল্টার বিদেশে রপ্তানি করে।
বগুড়া মোটরসের ব্যবস্থাপক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এখানে ফিল্টারগুলো সাধারণত ইঞ্জিনের কাজে লাগে। বিভিন্ন ধরনের গাড়ির ফিল্টার, জেনারেটরের ফিল্টার, কিছু কৃষি যন্ত্রপাতির ফিল্টার তৈরি করা হয়। ‘যেখানে ইঞ্জিন ও তেলের কাজ আছে, সেখানে এই ফিল্টার কাজে লাগে।’
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে এমন ফিল্টার তৈরির মোট আটটি কারখানা রয়েছে। এরমধ্যে বগুড়ায় চারটি; রাজশাহী, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে রয়েছে একটি করে এবং আরেকটি রয়েছে ঢাকায়। দেশে চাহিদার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ফিল্টার এই আট প্রতিষ্ঠান উত্পাদন ও সরবরাহ করে। এই ৩০ শতাংশ চাহিদার অধিকাংশই পূরণ করে বগুড়া মোটরসের পাওয়ার ফিল্টার।
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি মাহফুজুল ইসলাম রাজ বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে ক্রমাগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বগুড়া। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ আর বগুড়া বিমানবন্দর হলে এই অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। তখন বগুড়া মোটরসের মতো আরো বহুমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে বলে জানান তিনি।