27 Nov 2024, 06:57 pm

যারা অগ্রযাত্রায় সহায়তা করে বাংলাদেশ তাদের সঙ্গেই কাজ করবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কে কার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত তা বিবেচনা না করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে যে দেশগুলো বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে তাদের সঙ্গেই কাজ করবে। তিনি বলেন,‘আমার নিজের দেশের উন্নয়নটা আমার আগে দরকার। আমার দেশের  উন্নয়নে যারা সহযোগিতা করবে আমি তাদেরকে নিয়ে চলবো। সেভাবেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’ সেক্ষেত্রে কে কার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত সেটা দেখার দরকার নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ‘আমার চোখে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক এক মিনিটব্যাপী ভিডিও চিত্র তৈরী প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচিতদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন।
শান্তির স্বপক্ষে তাঁর বলিষ্ট অবস্থানের পুনরুল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবসময় শান্তি চাই। আমরা যুদ্ধ চাইনা। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। আর সেই বন্ধুত্ব রেখেই আমি এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, কার দেশের সঙ্গে কার দেশের ঝগড়া সেটা আমার দেখার দরকার নেই। আমার নিজের দেশের উন্নয়নটা আমার আগে দরকার। আমার দেশের উন্নয়নে যারা সহযোগিতা করবে আমি তাদেরকে নিয়ে চলবো। সেভাবেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সামনে কিন্তু অনেক কাজ। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বো। আর তোমরাই হবে সেই স্মার্ট বাংলাদেশের মূল সৈনিক এবং তোমরাই এদেশকে গড়বে। কারণ তোমরা ইতিহাসটাকে যেভাবে তুলে ধরেছ তাতে সত্যিই আমি চোখের পানি রাখতে পারিনি। তিনি অংশগ্রহণকারিদেরকে অনেক দোয়া ও অভিনন্দন জানিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদেরকেও ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আর এই বাংলাদেশকে কেউই পেছনে টানতে পারবেনা। ১৫ আগষ্টের পর যেভাবে আমাদের ভিক্ষুক জাতিতে পরিণত করা হয়েছিল, আর যেন কেউ এটা করতে না পারে সেজন্য আমাদের সবসময় সজাগ থাকতে হবে। দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারকারিদের মধ্যে সনদপত্র, ক্রেস্ট ও আর্থিক পুরস্কার প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর পর ইতিহাস বিকৃতির যে প্রচেষ্টা হয়েছিল তার থেকে বাংলাদেশ আজকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। সঠিক তথ্যটা সকলের সামনে চলে আসছে।
তিনি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জাতির পিতাকে নিয়ে ভিডিও চিত্র নির্মাণ প্রসঙ্গে আনন্দানুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘আজকের নতুন প্রজন্ম -তোমরাই একদিন এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু সেটা করতে হলে একটা আদর্শ লাগে। ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু আগামী দিনের পথচলা আমাদের নিজেদেরকেই খ্্ুঁজে বের করে আমরা যেন সুন্দরভাবে বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সেভাবেই নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষা ছাড়া কখনো এটা সম্ভব নয়। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতিকে দারিদ্র মুক্ত করা যায়না। শিক্ষাই হচ্ছে সব থেকে বড় অর্জন।
নিজের এবং ছোট বোন শেখ রেহানার সন্তানদের দেওয়া উপদেশের উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, তাদের জন্য তাঁরা কোন সম্পদ রেখে যেতে না পারলেও তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত করে যাবেন, যে সম্পদ কোনদিন কেউ তাদের কাছ থেকে চুরি করতে পারবে না বা কেড়ে নিতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যুগ হচ্ছে প্রযুক্তির যুগ। জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ। কাজেই ছেলে- মেয়েদের এটাই বলবো লেখাপড়া ও জ্ঞানার্জন ছাড়া নিজেদের যেমন তেরী করতে পারবেনা, দেশকেও তৈরী করতে পারবেনা।
’৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠনের পর কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এবং বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়ে মোবাইল ফোন ও তথ্য প্রযুক্তিকে জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার উদ্যোগের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সেখান থেকে আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়টার জন্য প্রস্তুতি চলছে কেননা একটি স্যাটেলাইটের মেয়াদ থাকে ১৫ বছর।
তিনি বলেন,‘যদিও আমি শুনি অনেকে বলে এই স্যাটেলাইটের কি দরকার ছিল! আমাদের বাংলাদেশের কিছু মানুষ রয়েছে যাদের সবকিছুতেই ‘কিছু ভাল লাগে না’। এই কিছু ভাল লাগেরা গ্রুপের আরও বক্তব্য হচ্ছে মেট্রোরেল,এটার কি দরকার ছিল? এক্সপ্রেসওয়ে করা শুধু শুধু পয়সা নষ্ট-এরকম লোকজন নেতিবাচক মনভাব নিয়ে সবময় চললেও এসবের সুবিধাগুলো আবার ঠিকমতই নিজেরা ভোগ করে।’
তিনি কোমলমতিদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদেরকে তৈরী হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা যাতে নষ্ট না হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ যে ক্ষুধা মুক্ত এবং উন্নত সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠবে সেটা তোমাদেরকেই গড়ে তুলতে হবে। আমরা কারো কাছে হাত পেতে চলবো না। নিজেরা নিজেদের আত্মমর্যাদা বোধ নিয়ে চলবো। এটাই আমাদের মাথায় সবসময় রাখতে হবে।
তিনি এ সময় জাতির পিতা যে বলেছিলেন-‘ভিক্ষুক জাতির কোন ইজ্জত থাকেনা’ সেই উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, ’৭৫ এর পর আমরা একটি ভিক্ষুক জাতিতে পরিণত হয়েছিলাম। বিদেশে বাংলাদেশের নাম শুনলেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হোত।
তিনি বলেন, তাঁরা সরকারে আসার পর খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সহ সবধরণের ব্যবস্থা যেমন করেছে তেমনি করো কাছে যেন হাত পাততে না হয় সেটাও নিশ্চিত করেছে।
‘নিজেরা উৎপাদন করবো, নিজেরা খাব প্রয়োজনে অপরকেও খাওয়াবো’ উল্লেখ করে দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসায় তাঁর প্রচেষ্টারও উল্লেখ করেন এবং বলেন, আমাদের জমি উর্বর ও বিরাট জনসংখ্যা রয়েছে এবং বর্তমান যুগ হচ্ছে যান্ত্রিক যুগ যেই যান্ত্রিকীকরণের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আর কোন কাজেই কোন লজ্জা নেই। এ প্রসঙ্গে তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে কোভিড-১৯ চলকালিন ছাত্রলীগের সদস্যদের ধানকাটায় অংশগ্রহণের কথাও উল্লেখ করেন।
করোনাকালীন প্রয়োজন পড়ায় প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা নিজেরাও নিজেদের গৃহস্থলী কাজ সামলেছেন উল্লেখ করে বলেন, আমরা কিন্তু নিজেরাই নিজেদের কাজ করেছি এবং কাজ করতে আমরা কখনই লজ্জারোধ করিনা। নিজের কাজটা নিজে করাটাই সবথেকে সম্মানের এবং অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা আমাদের কমাতে হবে।
তিনি ভিডিও চিত্র নির্মাণ ’আমার চোখে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক প্রতিযোগিতার আয়োজনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,এটা আমি মনে করি আমাদের ছোট্ট শিশুদের ভেতরে একটি আদর্শ (জাতির পিতার) এবং স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনাটাই গড়ে উঠবে। যাতে তারা লেখাপড়া শিখে এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 12847
  • Total Visits: 1332613
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বুধবার, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২৫শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৬:৫৭

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018