27 Nov 2024, 11:18 am

এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উচ্চাভিলাষী নয় উল্লেখ করে এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
তিনি বলেন, “আমি এই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী মনে করি না। ‘এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।”

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট আমরা দিয়েছি। বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ২.৬৫ লাখ কোটি টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এবং ৬.৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ কেউ বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলেছেন। কেউ বলেছেন ঘাটতি বাজেট। এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে কি না?
চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই তো আমাদের কাজ। আমরা তো চ্যালেঞ্জ নিয়েই চলতে চাই এবং চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, হ্যাঁ, একটা লক্ষ্য আমরা স্থির করি, শতভাগ কখনো পূরণ হয় না, হওয়া সম্ভব নয়। তারপরও আমাদের সুনির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য থাকে যে এখানে আমরা যাবো। সেটা আমরা যেতে পেরেছি।
তিনি বলেন, কোথায় ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট, আর কোথায় ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট। আমরা তো এই জায়গায় আসতে পেরেছি। চ্যালেঞ্জ নিয়েছি বলেই না সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ইচ্ছাটা কি? দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। সেজন্যই তো উন্নয়নটা হয়। আমাদের উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে সে লক্ষ্যেই আমরা এই বাজেট প্রণয়ন করেছি, এবং উন্নয়ন বাজেট দিয়েছি এখানে কমানোর কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র মুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা আমরা যে গড়ে তুলবো তারই পদক্ষেপ হিসেবে এই বাজেটে বিভিন্ন যে লক্ষ্যগুলো আমরা স্থির করেছি সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। আমি মনে করি এই বাজেটের মধ্যে দিয়ে আগামী দিনে আমরা যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি ২০৪১ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো। সেই ধারাবাহিকতা আমাদের আছে।
আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী ইশতেহার ভুলে যায় না এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন। বিরোধী দলের নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরও অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন।

সরকার প্রধান আশা প্রকাশ করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের হাব হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, সরকার সারাদেশব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছে বলেই অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে। আমার লক্ষ্য কেবল বাংলাদেশ নয়, আমরা এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবো। প্রতিবেশী দেশসমুহের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে।
মেট্রোরেল নির্মাণের বিরোধীতাকারী তথাকথিত বৃদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলছে। তিনি বলেন, এমআরটি লাইন-১, লাইন-২, লাইন-৪ ও লাইন-৫ এর কাজ পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করলে, ঢাকা শহরে আর যানজট বলে কিছু থাকবে না। মানুষ খুব আরামে চলাচল করতে পারবে। তাদের জীবন মান উন্নত হবে। আমরা সবগুলো বিভাগীয় শহরে মেট্রোরেল চালু করে দেবো, সেই পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ তৈরির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তিনি বলেন, এটা হলে সাগরপাড় দিয়ে গাড়ীতে করে একেবারে কক্সবাজার পৌছে যাবে। সেই ব্যবস্থা করার ইচ্ছে আমাদের আছে। এতে করে মীরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত শিল্প বাণিজ্য ও পর্যটন বিকশিত হবে।
তাঁর সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি, সে যেই হোক দুর্নীতি করলে কারো রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে ধরবো।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, কালো টাকা সাদা না। এখন সব দেশে দাম বেড়ে গেছে। এখন এক কাঠা জমি যার আছে, সেই কয়েক কোটি টাকার মালিক, ঢাকা শহরে একটা কাঠা জমি থাকলে কয়েক কোটি টাকার মালিক। এভাবে অনেক সময় কিছু করতে গেলে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে। সেটা তারা বাজেটে দেখাতে পারেন না। সেটা তারা আয় কর দিতে পারেন না। আয়কর দিয়ে যাতে তারা মূল ধারায় ফিরে আসে, মানে আয়কর দিয়ে মূল জনগোষ্ঠীতে ফিরে আসে, আর এই ধরনের কর্মকান্ড যাতে না করে, সেই জন্যই মাঝে মাঝে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়। অতীতে খালেদা জিয়া ,সাইফুর রহমান এবং ড. কামাল হোসেনসহ আরও অনেকে এই সুযোগ নিয়েছিলেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন,  মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তার ফল বাজারে দ্রুত পড়বে। আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী হ্রাস করতে পারব।
দেশে বেকারত্বের হার তিনভাগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেটাও যদি সবাই চায় কাজ করতে পারে। সেই সুযোগ সৃষ্টি করেছি। শিক্ষা ব্যবস্থায় যুগোপযোগী করে প্রযুক্তি শিক্ষায় জোর দিয়েছি।
তিনি বলেন, ঋণের চাহিদা, অর্থের যোগান, ব্যাংক আর গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুদের নির্ধারণ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। মুদ্রানীতি- এসব পদক্ষেপকে ফলপ্রসূ করতে রাজস্ব নীতিতে সংকোচন নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। যার প্রতিফলন এ বাজেটে রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি। পদক্ষেপের কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছর নাগাদ মূল্যস্ফীতি আরও নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হব। তাই উৎপাদন বাড়াতে হবে, সরবরাহ বাড়াতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কিছু আঁতেল আছেন, তারা সবকিছুতেই সমালোচনা করেন। ঋণ খেলাপি নিয়ে অনেক কথা, মন্দ ঋণ নিয়ে অনেক কথা। ২০০৯ সালে জিডিপি’র আকার ছিল ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণ ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে জিডিপি’র পরিমাণ ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণের হার হচ্ছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ এটা কিন্তু হ্রাস পেয়েছে। সেটাকে বলার সময় উল্টো টাকার অংক বলে কিন্তু শতাংশ বলা হয় না। সেখানে শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন,“এইভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। যারা এটা করে, তা খুবই দুঃখজনক”।
বিদ্যুত নিয়ে সমালোচনার জবাবে সংসদ নেতা বলেন, বিদ্যুত নিয়ে অনেক কথা। যে বিশেষ আইন করেছি, সেটা নিয়েও সমালোচনা শুনছি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিশেষ আইন যদি না করতাম, বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ না করলে, আজকে বিদ্যুতটা আসতো কোথায় থেকে? আমরা ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। ভবিষ্যতে বিদ্যুত যাতে পরিবেশবান্ধব হয়, আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। নেপাল ও ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানীর উদ্যোগ নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোডশেডিং! আমি বলে দিয়েছি, গ্রামে লোডশেডিং যেন না দেয়। যে যত বেশি ব্যবহার করবে, তাকে উৎপাদনের খরচটা অবশ্যই দিতে হবে। তবে আমরা হঠাৎ করে এটা করছি না। সহনশীল করে ধীরে ধীরে এটা করা হচ্ছে।
জ্বালানী তেল মজুদ রাখার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর জ্বালানী উন্নয়ন তহবিলে একশো কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুত ও জ্বালানী খাতে বর্তমানে যে বিপুল পরিমান ভর্তুতি দিতে হচ্ছে, এই ভর্তিুকি ধীরে ধীরে কমাতে হবে।
২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এর মাধ্যমে শ্রেণিপেশা নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এখানে রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী, কৃষক-শ্রমিক, সকলেই এটাতে যুক্ত হতে পারেন। যেটা তাদের বয়সকালে সুরক্ষার ব্যবস্থা করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবসময় শান্তিতে বিশ্বাস করি, সংঘাতে নয়। জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতিবেশিসহ সকল দেশের সঙ্গে অত্যন্ত সফলভাবে এ নীতি মেনে চলছি। হয়তো অনেকের কাছে বিস্ময়। সেই নীতি নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনীকে উন্নত করেছি। যুদ্ধ-সংঘাতের জন্য নয়। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক হিসাবে। যে কোন ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে না থাকি, সে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে উন্নত, সমৃদ্ধ করেছি, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন গড়ে তুলছি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 11387
  • Total Visits: 1327966
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বুধবার, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২৪শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১১:১৮

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018