অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাজনীতিতে তীব্র মতবিরোধ ও উচ্চ অংশীদারিত্ব থাকবে, তবে এটি কখনোই যুদ্ধক্ষেত্র বা হত্যার ক্ষেত্র হওয়া উচিত নয় বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
পেনসিলভানিয়ার সমাবেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গুলিতে আহত হওয়ার পর দেওয়া এক ভাষণে বাইডেন একথা বলেন।
সোমবার (১৫ জুলাই) এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, স্থানীয় সময় রোববার শান্তি ও ঐক্যের আহ্বান দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার ভাষণ শুরু করেন। তিনি বলেন, যতই উচ্চ ঝুঁকি থাকুক না কেন, যত আবেগই থাকুক না কেন, রাজনীতিকে সহিংসতার পর্যায়ে নামানো উচিত নয়।
তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা গভীরভাবে তীব্র মতবিরোধ অনুভব করেছি। এই নির্বাচনে অংশীদারিত্ব অনেক বেশি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী কয়েক দশকের জন্য আমেরিকা এবং বিশ্বের ভবিষ্যৎ গঠন হতে চলেছে।’
বিমার্কিন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কিন্তু রাজনীতি কখনোই আক্ষরিক ভাবে যুদ্ধক্ষেত্র বা সৃষ্টিকর্তা না করুক, হত্যার ক্ষেত্র হওয়া উচিত নয়। আমি বিশ্বাস করি রাজনীতি শান্তিপূর্ণ বিতর্কের ক্ষেত্র হওয়া উচিত… আমরা এমন একটি আমেরিকার পক্ষে দাঁড়িয়েছি যেখানে চরমপন্থা ও ক্রোধ নয়, বরং শালীনতা ও অনুগ্রহ থাকবে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আমাদের সকলেরই এখন পরীক্ষার সময়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাঁধাটা যতো বেশি হবে, আবেগ ততো বেশি উদগ্রীব হবে। এই বিষয়টি আমাদের প্রত্যেকের ওপরই অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় যাতে, এটিই নিশ্চিত করা যায় যে, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তা যেন কখনোই সহিংসতায় পরিণত না হয়।’
বুলেটের মাধ্যমে নয়, ব্যালট বাক্সে মতপার্থক্য মিটিয়ে নেওয়ারও আবেদন জানান জো বাইডেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকাকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা সর্বদা জনগণের হাতেই থাকা উচিত, কোনও হত্যাকারীর হাতে নয়।’
এর আগে স্থানীয় সময় গত শনিবার পেনসেলভেনিয়ায় জনসভায় হত্যাচেষ্টার শিকার হন আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। মূলত জনসভায় বক্তব্য রাখার সময় হামলার শিকার হন তিনি।
মাত্র ২০০ ফুট দূর থেকে ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে এই গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট নিচে লুটিয়ে পড়ে নিজেকে আড়াল করেন। এসময় সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা তার পাশেই ছিলেন। এরপর তাকে স্টেজ থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ট্রাম্পকে যখন ধরে স্টেজ থেকে নামানো হচ্ছে, সেই সময়ই কানের পাশ, গালে রক্ত লক্ষ্য করা যায়। স্টেজ থেকে নামার সময় হাত উঁচিয়ে, মুঠো করে হার না মানার ইঙ্গিত করে দেখান ট্রাম্প। পরে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হামলার ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত ওই হামলাকারী মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের গুলিতে নিহত হন। তার নাম থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস বলে জানানো হয়েছে।
মর্মান্তিক এই হামলার ঘটনা এমন এক সময়ে হলো যখন দুদিন পরই সাবেক এই প্রেসিডেন্টের রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। ওই সম্মেলনে ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে।
রোববারের বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্পের ওপর হামলা করা বন্দুকধারীর উদ্দেশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট বলেন, বন্দুকধারীর উদ্দেশ্য কী ছিল এবং সংশ্লিষ্টতা বা তার অন্য কারও সাহায্য ও সমর্থন ছিল কিনা তা এখনও জানা যায়নি।
এসব প্রশ্ন খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বাইডেন বলেন, ‘আজ রাতে, আমি যা জানি সে বিষয়ে কথা বলতে চাই। সাবেক একজন প্রেসিডেন্ট গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একজন আমেরিকান নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে, কেবল তার পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন করার জন্য, তার নাগরিক স্বাধীনতা অনুশীলন করার জন্য।’
প্রেসিডেন্ট বাইডেন এরপর যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটল হিলে ৬ জানুয়ারির দাঙ্গা, সাবেক হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্বামীর ওপর হামলা, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ভয় দেখানো এবং ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টাসহ রাজনৈতিক সহিংসতার কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, ‘ আমেরিকায় এই ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই, কোনো ধরনেরই সহিংসতার কোনো স্থান নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই সহিংসতাকে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হতে দিতে পারি না। আপনি জানেন, এই দেশের রাজনৈতিক রেকর্ড খুব উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এটি এখন ঠান্ডা করার সময়। এটা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের।’
Leave a Reply