28 Feb 2025, 11:00 am

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোয়ান বলেছেন,বর্তমানে বিশ্বে মাত্র দুইজন নেতা আছেন। এরা হচ্ছেন তিনি নিজে এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

এরদোয়ান বলেছেন, ‘বর্তমানে বিশ্বে অভিজ্ঞ নেতা আছেন মাত্র দুইজন। এরা হচ্ছেন আমি নিজে এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন আমি এটা বলছি না যে, কারণ তাদের মধ্যে আমি নিজেও আছি।

তিনি বলেছেন, কিন্তু আমি ২২ বছর ধরে ক্ষমতায় আছি, পুতিনের প্রায় কাছাকাছি। অন্যরা চলে গেছেন। এবং আমরা চাই আমাদের মধ্যে সংলাপ অব্যাহত থাকবে।

রাজনীতিতে সংলাপ অব্যাহত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ধরুন,জার্মান চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেলের পদত্যাগের পর জার্মানিতে রাজনীতিও শেষ হয়ে গেছে।’
রাশিয়ার বার্তা সংস্থা ‘তাস’ এই খবর জানিয়েছে।

এরদোয়ান আরো বলেছেন, জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর গারহার্ড শ্রোয়েডরকে তিনি খুব সম্মান করতেন।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিও তার সম্মান বোধ ছিল ভিন্ন রকমের এবং সত্যিই তিনি ছিলেন খুব ভালো একজন নেতা। যেমন ধরুন-রমজানের সময় (মানে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসে সন্ধার খাবারের সময়-তাস) তিনি আমাদের ইফতারির টেবিলে বসে কখনো বিয়ার পান করতেন না।

তিনি মুসলমানদের প্রতি খুব সম্মান দেখাতেন।

তুরস্কের নেতা বলেছেন, ‘শ্রোয়েডরের সঙ্গে আমাদের সংলাপ এখনো চলে এবং তিনি মাঝে মাঝে তুরস্ক সফরে এলে তখনো তার সঙ্গে আমাদের সংলাপ বা আলাপ-আলোচনা হয়।

বিশ্বে মাত্র দুইজন অভিজ্ঞ নেতা আছেন : এরদোয়ান

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যাপারে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর পরিকল্পনা সম্পর্কে ছয় মাস আগে থেকেই তুরস্ক সরকার জানতো। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট গতকাল (রোববার) ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আজ এই খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রায় ছয় মাস আগে সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর বিষয়ে বিদ্রোহী গেরিলারা তুরস্ক সরকারকে জানিয়েছিল। এ খবর প্রকাশের ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত একজন কূটনীতিক এবং সিরিয়ার সরকারবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর একজন সদস্যকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে রয়টার্স।

সিরিয়ার সূত্রটি রয়টার্সকে বলেছে যে, সশস্ত্র গেরিলারা তুরস্ককে তাদের বিস্তারিত পরিকল্পনা জানিয়ে এই হামলার বিরুদ্ধে কোনরকমের হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানিয়েছিল। সিরিয়ার আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, তুরস্ককে না জানিয়ে কোনো গেরিলা গোষ্ঠীরই সামনে এগুনোর পথ ছিল না।

এদিকে, বিভিন্ন খবর থেকে জানা যাচ্ছে যে, সিরিয়ায় যেসব সশস্ত্র গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করেছে তাদের প্রতি তুরস্ক এবং পশ্চিমা কয়েকটি দেশের জোরালো সমর্থন রয়েছে। ২০১১ সালে সিরিয়ায় বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব শুরুর পর এসব দেশ তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এসেছে।

গতকাল তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান জানতেন ‘নতুন কিছু আসছে’।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে উৎখাতের পরিকল্পনা আগে থেকেই জানতো তুরস্ক

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক ইউরোপের জলবায়ু পর্যবেক্ষক সোমবার জানিয়েছে, চলতি বছর যে উষ্ণতম বছর হবে তা ‘কার্যকরভাবে নিশ্চিত’ এবং এ বিপজ্জনক অতিরিক্ত উত্তাপ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।

কোপার্সনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস প্যারিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছে।

ইইউ সংস্থাটি তার মাসিক বুলেটিনে বলেছে, ‘এই মুহূর্তে, এটি কার্যকরভাবে নিশ্চিত যে ২০২৪ হতে চলেছে উষ্ণতম বছর।’

আরেকটি ভয়াবহ মাইলফলক হিসেবে, প্রাক-শিল্প সময়ের চেয়ে ২০২৪ হবে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরম। শিল্প বিপ্লবের সময় থেকেই বিপুল পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াতে শুরু করে।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে, এক দশক দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ১০ বছর ধরে চললে তা পৃথিবীকে বিপন্ন করে তুলবে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অধীনে বিশ্বের দেশগুলো উষ্ণতা সীমাবদ্ধ ও তাপমাত্রা নিরাপদ মাত্রায় রাখতে সম্মত হয়েছিল।

কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের উপ-পরিচালক সামান্থা বার্গেস বলেন, এক বছর এই তাপমাত্রা ১.৫ সি. এর উপরে হওয়া মানে, এই নয় যে প্যারিস চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়েছে। তবে এর মানে এই যে উচ্চাভিলাষী জলবায়ু পদক্ষেপ কঠোরভাবে মেনে চলা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি জরুরি।

বিশ্বকে কয়লা, তেল ও গ্যাস থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নির্গমন বাড়ছে। এগুলো যখন পোড়ানো হয়, তখন জীবাশ্ম জ্বালানি গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো ছেড়ে দেয়, যা পৃথিবীর মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডলকে উষ্ণ করে তোলে। এটা জলবায়ু প্যাটার্ন ও পানি-চক্রকে ব্যাহত করে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতা চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলোকে আরও ঘন ঘন ও প্রলয়ঙ্করী করে তুলছে।

২০২৪ স্পেন ও কেনিয়াতে মারাত্মক বন্যা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনে ভয়াবহ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় এবং দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে তীব্র খরা ও দাবানল দেখা দিয়েছে।

বীমা জায়ান্ট সুইস রে চলতি মাসে জানিয়েছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলোতে ২০২৪ সালে মোট ৩১০ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।

এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশেষভাবে দুর্বল এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বছরে তাদের ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা প্রয়োজন হবে।

নভেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনায় ধনী দেশগুলো  ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ মুহূর্তে যে সময়কাল চলছে, তা সম্ভবত গত ১২৫,০০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম।

এমনকি এই মানগুলোর দ্বারা ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে প্রত্যক্ষ করা অস্বাভাবিক তাপ বৈজ্ঞানিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

২০২৪ সাল এল নিনোর সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। একটি এমন একটি প্রাকৃতিক অবস্থা, যা উষ্ণ পানির চারপাশে ঘোরাফেরা করে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে এই ধরনের চক্রীয় পরিবর্তনশিলতা বায়ুমণ্ডল এবং সমুদ্রে রেকর্ড ভঙ্গকারী তাপ একা ব্যাখ্যা করতে পারে না।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ জলবায়ু উপদেষ্টা সংস্থা আইপিসিসি-র বিজ্ঞানী রবার্ট ভাটার্ড এএফপিকে বলেছেন, সর্বশেষ এল নিনোর পর তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। তবে ‘খুব’ ধীরে ধীরে। এর কারণগুলি বিশ্লেষণ করতে হবে।

কোপার্নিকাস জলবায়ু বিজ্ঞানী জুলিয়ান নিকোলাস বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলি ‘স্পষ্টতই ব্যতিক্রমী’ ছিল।

তিনি এএফপিকে বলেন, ‘আমরা যত বেশি তথ্য পাচ্ছি যে, কী ঘটেছে তা আরও ভালভাবে বুঝতে পারব বলে আমরা আশা করছি।’

 

২০২৪ হবে উষ্ণতম বছর : ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনিটর

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক সিরিয়ার সরকার-বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দেশটিতে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি ও কূটনৈতিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ক্রেমলিন সূত্রের বরাত দিয়ে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস এ খবর দিয়েছে।

হায়াত তাহারির আশ-শাম বা এইচটিএস এবং মার্কিন সমর্থনপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠী ফ্রি সিরিয়ান আর্মির গেরিলারা গতকাল (রোববার) দামেস্ক দখল করে নেয় এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন।

সাবেক আল-কায়েদা কমান্ডার এবং বর্তমানে এইচটিএসের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি গতকাল টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে বিজয় ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “ভবিষ্যৎ আমাদের।”

এরপর ক্রেমলিনের একটি অজ্ঞাত সূত্র বার্তা সংস্থা তাসকে জানিয়েছে যে, সিরিয়ার বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে রাশিয়ার কর্মকর্তারা যোগাযোগ রাখছেন। এই প্রতিনিধিরা সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি ও কূটনৈতিক মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই সাথে ওই সূত্র বলেছেন, “সিরিয়ার জনগণের স্বার্থ এবং সিরিয়া ও রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে আমরা রাজনৈতিক সংলাপ অব্যাহত রাখবো বলে আশা করি।”

সিরিয়ায় ২০১১ সালে বিদেশী মদদপুষ্ট উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর তাণ্ডব শুরুর পর ২০১৫ সালে বাশার আল-আসাদ সরকারকে সাহায্য করার জন্য রাশিয়া উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে। কিন্তু এবার রুশ সেনারা হায়াতে তাহরির আশ-শাম এবং ফ্রি সিরিয়ান আর্মির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অগ্রাভিযান শুরুর পর বাশার আল-আসাদ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে রাশিয়া এই অবস্থানে চলে যায়। ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে পেছনের দরজা দিয়ে কয়েকটি গোষ্ঠীর সাথে বাশার আল-আসাদের বৈঠক হয় তবে সেসব বৈঠকে রাশিয়া অংশ নেয়নি বলে দাবি করেছে মস্কো।

রাশিয়ার ঘাঁটিগুলো রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সিরিয়ার সশস্ত্র গেরিলারা

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক রাশিয়ার প্লেখানভ ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক্সের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অ্যানাস্তাসিয়া প্রিকলাডোভা বলেছেন, আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রিকসের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে এর সদস্য দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া মূল্যায়নের পাশাপাশি এই সংস্থার দুর্বল দিকগুলো যাচাই-বাছাই করার চেষ্টা করছেন।

তিনি আরও বলেছেন, আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীন এবং ব্রিকসের অন্যান্য দেশকে হুমকি দিয়ে ডলারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মার্কিন কর্তৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছেন।

বার্তা সংস্থা ইরনা-কে উদ্ধৃত করে পার্সটুডে’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যানাস্তাসিয়া প্রিকলাডোভার মতে বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে আমেরিকার একতরফা পদক্ষেপ যেমন রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করার মতো পদক্ষেপগুলো ডলারের প্রতি বিশ্বের আস্থা কমাবে যা আমেরিকার অর্থনীতিকে দুর্বল করে ফেলবে।

রাশিয়ার এই অধ্যাপকের মতে, চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধে আমেরিকার সাম্প্রতিক কৌশল থেকেও এটা স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা ও হুমকির ভাষা একটি অকার্যকর পন্থা হয়ে উঠেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রিকস গ্রুপের সদস্য দেশগুলোকে হুমকি দিয়ে বলেছেন,  ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো যদি মার্কিন মুদ্রার পরিবর্তে অন্য মুদ্রা ব্যবহার করে তাহলে তিনি এসব দেশের পণ্যের উপর শতভাগ বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করবেন।

এই বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, আমেরিকার নানা কর্মকাণ্ডের কারণে ডলার এখন আর চার বছর আগের অবস্থায় নেই।

 

বিশ্বে ডলারের প্রতি আস্থা কমেছে ; হুমকি-ধমকির যুগ শেষ : রুশ অধ্যাপক

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর রাজধানী দামেস্ক অভিমুখী অগ্রাভিযানের মুখে শনিবার রাতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হওয়ার পর রোববার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিরিয়ার চলমান পরিস্থিতির ব্যাপারে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।

সিরিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একথা জানাতে চায় যে, সিরিয়ার জনগণের ঐক্য, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি তেহরান সব সময় সম্মান জানিয়ে এসেছে। ইরান মনে করে, সিরিয়ার ভবিষ্যতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা একমাত্র দেশটির জনগণের রয়েছে। এ কাজে কোনো বিদেশি শক্তির ধ্বংসাত্মক হস্তক্ষেপ কিংবা চাপিয়ে দেয়া কোনো কিছু মেনে নেয়া সিরিয়ার জনগণের উচিত হবে না।

এই মুহূর্তে যেটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে অবিলম্বে ধ্বংসাত্মক সামরিক সংঘাত বন্ধ করা এবং সব ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। এরপর সিরিয়ার সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় সংলাপ শুরু করা যাতে দেশটির সকল মত ও পথের অধিকারী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকারী একটি জাতীয় সরকার গঠন করা যায়।

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৫৪ নম্বর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সিরিয়ার রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে অতীতের মতো জাতিসংঘকে সহযোগিতা করে যাবে।

সিরিয়া যখন তার ইতিহাসের একটি বিপজ্জনক সন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছে তখন সেদেশের প্রতিটি নাগরিকের পাশাপাশি দেশটিতে অবস্থানরত সকল বিদেশি নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে দেশটির পবিত্র ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা যেমন রক্ষা করতে হবে তেমনি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সকল দূতাবাস ও বিদেশি মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং দু’দেশের সম্পর্ক সব সময় বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। আশা করা যায়, দু’দেশের জনগণের যৌথ স্বার্থ রক্ষা করার কথা বিবেচনা করে উভয় দেশের নেতৃবৃন্দ প্রজ্ঞাপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতিগুলো মেনে চলবেন।

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সিরিয়াকে পশ্চিম এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী দেশ বলে মনে করে। কাজেই সিরিয়ায় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার কাজে যেকোনো ধরনের সাহায্য করতে তেহরান সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এ লক্ষ্যে ইরান পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের প্রভাবশালী পক্ষগুলোর সঙ্গে সংলাপ ও আলোচনা অব্যাহত রাখবে।

নিঃসন্দেহে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সিরিয়াসহ আঞ্চলিক পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সিরিয়ার রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারকারী পক্ষগুলোর কার্যক্রম ও আচরণ বিবেচনায় নিয়ে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তেহরান।

সিরিয়ার সাম্প্রতিক বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৫তম দফা নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ বাস্তবায়নে একটি ঐক্যমতে পৌঁছানোর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়া ভেটো দেয়ার কারণে তা ব্যর্থ হয়েছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৫তম ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের বিরুদ্ধে লাটভিয়া এবং লিথুনিয়া ভেটো দেয়ার পর মস্কোর ওপর আরও চাপ বাড়ানোর লক্ষ্যে এই ইউনিয়নের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা অন্য একটি তারিখ পর্যন্ত  স্থগিত করা হয়েছে। পার্সটুডে অনুসারে, ইউক্রেনে যুদ্ধের পরে কিয়েভকে সমর্থন করতে এবং রাশিয়ার উপর চাপ দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২২ সাল থেকে মস্কোর বিরুদ্ধে একাধিক নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দিয়েছে।

রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে এই নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজগুলো রাশিয়ার জ্বালানি খাতের ওপর বেশি জোর দিয়েছে। এই বিষয়ে,ইউরোপীয় দেশগুলো সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়ার তেল ট্যাঙ্কারের বহরকে লক্ষ্য করে একটি নতুন নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ প্রস্তুত করে যাতে রাশিয়ার উপর আরো চাপ বাড়ানো যায়। নতুন ইইউ নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের খসড়া প্রস্তাব অনুসারে ব্রাসেলস আরও ট্যাঙ্কারকে কালো তালিকাভুক্ত করতে চেয়েছিল। এর ফল নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া রুশৃ ট্যাঙ্কারের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৫। তবে এই ইউনিয়নের দুই সদস্য লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়ার বিরোধিতার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের বৈঠকে এই প্যাকেজটি অনুমোদিত হয়নি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছরেরও বেশি সময় পরে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা একদিকে রাশিয়ার উপর ইউরোপের চাপ বৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠেছে এবং  অন্যদিকে জ্বালানি ইস্যুত এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বিভেদ ও বিরোধকে তীব্রতর করে তুলেছে।

ইউরোপীয় দেশগুলো যারা কয়েক দশক ধরে তাদের তেল এবং গ্যাসের চাহিদার একটি বড় অংশ রাশিয়া থেকে সংগ্রহ করে আসছিল ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে রাশিয়ার জ্বালানি খাতকে টার্গেটকে করা এসব নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর জন্য কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজে পেতে অক্ষমতার কারণে ইউরোপের কিছু দেশের তীব্র জ্বালানি সংকট থাকার কারণে চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া এবং হাঙ্গেরির মতো দেশগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে এই ছাড় রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রাখার পথ খুলে দিয়েছে। অতএব নতুন নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ ঘোষণার সময়ও এই দেশগুলো তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি করলে আলোচনা ব্যর্থ হয়।

প্রকৃতপক্ষে, যখন ইউরোপীয় দেশগুলো একই সঙ্গে রাশিয়ার ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে তখন সমস্ত চাপ সত্ত্বেও রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রি থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে।

এই প্রসঙ্গে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিয়ার্তো কিছুক্ষণ আগে এক বক্তৃতায় বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইইউ’র বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থা কোনোভাবেই ইউক্রেনের সংঘাতের অবসান ঘটাতে সাহায্য করবে না এবং রাশিয়ার চেয়ে ইউরোপীয় অর্থনীতির বেশি ক্ষতি করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বুদাপেস্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা নীতিকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ প্রচেষ্টা বলে বলে মনে করে।”

ইউরোপীয় দেশগুলো যারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর থেকে কয়েক দশক ধরে অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্র ইস্যুতে এই ইউনিয়নের সদস্যদের মধ্যে ঐক্য এবং  অভিন্নতা ধরে রাখার নীতি  প্রমাণ করার চেষ্টা করে চলেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা ভিন্ন পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। কেবল রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়ে নয় বরং  অভিবাসন নীতি, গাজা যুদ্ধ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত এবং ইউক্রেন সংকটসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও মতের তীব্র পার্থক্য রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের ব্যাপারে  লাটভিয়ার মতো দেশগুলোর বিরোধিতা এই ক্ষেত্রে সর্বশেষ ঘটনা।

এই বিষয়ে মনে হয় যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে পার্থক্য আগের চেয়ে আরও তীব্র হয়েছে এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ আর ইউরোপের স্বার্থ ও লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিতে ইচ্ছুক নয়। এখন ১৫তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ আরোপের বিরুদ্ধে দুটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রের অবস্থান সম্বলিত এই প্যাকেজটি আগামী ১৬ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পরবর্তী বৈঠকে আবার আলোচনা হতে চলেছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলো মনে করছেন যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আসন্ন ১৫তম নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজেরৃ ব্যাপারে একটা ঐক্যমতে তারা পৌছাতে সক্ষম হবেন এবং অন্যদিকে এই নিষেধাজ্ঞার বৃত্তকে সংকুচিত করে এমন কোনো অনুরোধকে আমলে নেয়া অসম্ভব বলেই মনে করছেন তারা।

 

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে স্পষ্ট বিভক্তি