অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয়ের নতুন রূপ নিয়েছে খাদ্যসংকট। ইসরাইলি সামরিক অভিযানে বিধ্বস্ত এই ভূখণ্ডে এখন খাবার পাওয়া যেন স্বপ্নের মতো। একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে অবরোধ—এই দুইয়ের চাপে সাধারণ মানুষ আজ ক্ষুধার্ত, অসহায়, আর নিঃস্ব।
গাজায় খাদ্য সরবরাহের প্রাকৃতিক পথগুলো প্রায় পুরোপুরি বন্ধ। সীমান্ত পারাপারে নিষেধাজ্ঞা, ত্রাণবাহী যানবাহনের বাধা, এবং অব্যাহত বোমাবর্ষণ পরিস্থিতিকে চরমে পৌঁছে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বিমান থেকে খাদ্য ফেলা হলেও তাতে চাহিদার একটি ক্ষুদ্র অংশও মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে হাজার হাজার মানুষ এখন ভাগাড়ে ছুটছেন একমুঠো খাবারের আশায়।
বার্তা সংস্থা আনাদোলু-এর চিত্রসাংবাদিক দাউদ আবু আলকাস-এর তোলা একটি ছবি বিশ্ববাসীর চোখে আঘাত হেনেছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গাজা সিটির ফিরাস মার্কেটের পাশের একটি ভাগাড়ে কয়েকজন ফিলিস্তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে খাবার খুঁজছেন। সেখানে পচা খাবার, ছেঁড়া থলে, পুরনো সবজি বা খালি ক্যানের মধ্যেও তারা সম্ভাব্য কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছেন, কারণ তাদের সামনে আর কোনো উপায় নেই। এই দৃশ্য শুধু ক্ষুধার নয়, এটি মানবতার মৃত্যু দৃশ্য।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ ইতিমধ্যেই জানিয়েছে—গাজা এখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় প্রতি তিনজন মানুষের মধ্যে একজনের হাতে আজ কোনো খাবার নেই। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে শিশুরা।
গত শুক্রবার সংস্থার উপ-নির্বাহী পরিচালক টেড চাইবান বলেন, আজ আমি গাজার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চাই। কারণ গাজায় দুর্ভোগ এখন সবচেয়ে তীব্র এবং মানুষ নজিরবিহীনভাবে মারা যাচ্ছে। আমরা একটি সন্ধিক্ষণে আছি। আমাদের এখনকার সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করবে—হাজারো শিশু মরবে, না বাঁচবে।
চাইবানের এই বক্তব্য শুধু সতর্কতা নয়—এটি একটি মরিয়া আবেদন।
গাজার এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ইসরাইলি অবরোধ ও সামরিক অভিযান। অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে গাজার বহু হাসপাতাল, খাদ্যগুদাম, স্কুল ও সরবরাহ রুট ধ্বংস হয়ে গেছে। ২০২৫ সালের আগস্টে এসে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে ক্ষুধা এখন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, বলছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
ইসরাইলের তরফে বলা হচ্ছে, তারা হামাস দমন করছে। কিন্তু বাস্তবে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ নারী, শিশু ও বয়স্করা।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব লীগসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজায় মানবিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। সীমান্তে সহায়তা আটকে যাচ্ছে, কখনও নিরাপত্তার নামে, কখনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বিশ্ববাসীর সামনে গাজার পরিস্থিতি আজ স্পষ্ট। তবু কার্যকর চাপ সৃষ্টি না হলে এ মানবিক বিপর্যয় রোধ করা অসম্ভব।
গাজায় খাদ্য নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই—তবু মানুষ বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ভাগাড়ে খুঁজে পাওয়া একটি শুকনো রুটি বা পচা সবজি আজ তাদের কাছে সোনার চেয়েও দামি।
এই পরিস্থিতি আর কতদিন চলবে? কত শিশু না খেয়ে মারা যাবে? কত মা সন্তানকে খাওয়াতে না পেরে নিজের কান্না চেপে রাখবে?
এ প্রশ্ন আজ বিশ্ববাসীর কাছে। এখনই সময়, মানবতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানোর। তীব্র খাদ্য সংকটে ফিলিস্তিনিদের জীবন এখন মৃত্যুর মুখোমুখি। বিশ্ব বিবেক কি এবার জাগবে?