30 Nov 2024, 06:44 am

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের শাসক গোষ্ঠীর গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে মার্কিন শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক বর্তমানে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের শাসক গোষ্ঠীর গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। ছাত্রদের ক্লাস করার ওপর স্থগিতাদেশ, গ্রেপ্তার এবং চাকরির সুযোগ হারানোর মতো নানা ধরনের হুমকি সত্ত্বেও আমেরিকার শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে।

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে মার্কিন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ নিউইয়র্ক শহরের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়েছিল এবং এখন তা আমেরিকার আরও ৩২টি বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকার শিক্ষার্থীরা যারা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইহুদিবাদীদের সঙ্গে আর্থিক ও নৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানাচ্ছে তারা ঘোষণা করেছে যে তারা এই বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের ডানদিকে দাঁড়িয়ে আছে।

তারা আরো ঘোষণা দিয়েছেন যে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এই প্রতিবাদ আন্দোলনের জন্য নিজেদেরকে গর্বিত মনে করছেন। সবচেয়ে ইতিবাচক যে বিষয়টি বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তা হলো এই বিক্ষোভ এখন আর আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়,  এখন তা সমগ্র বিশ্বে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ সমাবেশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা হলো বিক্ষোভ সমাবেশে জড়িত ছাত্ররা গড় আমেরিকার মধ্যবিত্তের প্রতিনিধি নয়। এসব  ছাত্রদের বেশিরভাগই আমেরিকার সিনেটর, ধনী ব্যক্তি এবং উচ্চ-সমাজ পরিবারের সন্তান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী ইহুদিবাদী লবির সঙ্গে এদের ভালো যোগাযোগ রয়েছে এবং মার্কিন রাজনীতিতে প্রভাব বজায় রাখার জন্য এসব এলিট শ্রেণীর কাছ থেকে সমর্থন পাওয়াটা বেশিরভাগ রাজনীতিবিদদের জন্য জরুরী।

আমেরিকার ছাত্ররা কি বলে?

ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর নানা অপরাধযজ্ঞ এবং এদের প্রতি মার্কিন সরকারের সমর্থন নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের দাবিগুলো একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক রকম। শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান দাবিগুলিকে নিম্নরূপ সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে:

“সামরিক অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের সাথে ব্যবসা করা বন্ধ করুন যারা ইহুদিবাদীদের অস্ত্র সরবরাহ করে। ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর সামরিক প্রচেষ্টাকে সহায়তা করে এমন প্রকল্পের জন্য ইহুদিবাদীদের কাছ থেকে গবেষণার অর্থ গ্রহণ করা বন্ধ করুন।”

ইহুদিবাদী কোম্পানি বা ঠিকাদারদের কাছ থেকে লাভবান পরিচালকদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের এনডাউমেন্টে বিনিয়োগ করা এড়িয়ে চলুন। “ইহুদিবাদীদের কাছ থেকে কী অর্থ পাওয়া যায় এবং এগুলো কি কাজে ব্যবহার করা হয় সে সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ হন।” আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিন সমর্থকদের বিক্ষোভ নিয়ে নিম্নে ৫টি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে:

তরুণ আমেরিকান শ্রেণীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি

বয়স্ক আমেরিকানদের তুলনায় তরুণ আমেরিকানরা বৈশ্বিক সংকট এবং সমস্যা সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন। জেনারেশন জেড শিক্ষার্থীরা যারা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বন্দুকের নিরাপত্তার মতো যৌথ কর্মকাণ্ডের যুগে বড় হয়েছে তারা এখন ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার সমর্থনে বিস্তৃত জোট গঠন করছে যা আমেরিকার রাষ্ট্রনায়কদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ছাত্রদের দমন করার লক্ষ্যে তারা নতুন নতুন আইন পাস করছে  এবং তাদেরকে গ্রেফতার করছে।

ফিলিস্তিনের সমর্থনে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের অবস্থান কর্মসূচি

ছাত্রদের ওপর দমন পীড়ন

যুগ যুগ ধরে ইহুদিবাদীরা কোনো যুক্তি ছাড়াই ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা করে আসছে।  গাজা যুদ্ধ ইহুদিবাদীদের নজিরবিহীন বর্বরতা বিশ্বের সামনে উন্মুক্ত হয়েছে। খাদ্য সহায়তা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা ছোট ছোট শিশুরা ইহুদিবাদী সেনাদের বন্দুকের গুলিতে শহীদ হওয়া, কান্নারত মা এবং ক্ষুধার্ত মানুষের পোড়া লাশের ছবি বিশ্বজুড়ে বিবেকবান মানুষের আবেগকে আলোড়িত করেছে।

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের প্রতিবাদরত আমেরিকার ছাত্রদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা

মনে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার বা তাদের ছাত্রত্ব স্থগিত করার সিদ্ধান্তটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিপরীত প্রভাব ফেলেছে। কারণ আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত ফ্যাকাল্টির সদস্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, “আমরা ছাত্রদের সাসপেন্ড করব না”। গত সপ্তাহে, আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ ইউনিভার্সিটি প্রফেসরস ছাত্রদের শিক্ষা স্থগিতাদেশ ও তাদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা প্রেসিডেন্ট ও সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়েছি এবং আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ফিরিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

–  মার্কিন রাজনীতিবিদরা ইহুদিবাদীদের পক্ষ নিয়েছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং অন্যান্য আমেরিকান কর্মকর্তারা ইহুদিবাদীদের গোড়া সমর্থক। জো বাইডেন নিজেকে প্রকাশ্যে একজন কট্টর ইহুদিবাদী সমর্থক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নৃশংস ইহুদিবাদী যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য সমালোচনার মুখে পড়া বাইডেন ইহুদিবাদী বিরোধীতা উত্থানের বিষয়ে সতর্ক করে একটি বিবৃতি জারি করেছেন।

মার্কিন ছাত্রদের বিরুদ্ধে গিয়ে মার্কিন সরকার সেনাবাহিনী ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছে

আমেরিকায় ইহুদিবাদী তদবির অব্যাহত

যদিও ফিলিস্তিনপন্থী শত শত বিক্ষোভকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আইনি পদক্ষেপ এবং হুমকির সম্মুখীন হয়েছে জানা গেছে যে অল্প সংখ্যক ইহুদিবাদী বিক্ষোভকারী ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একটি ইউনিটের পতাকা “কেফির” বহন করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে স্লোগান দিয়েছে যে “ইসরাইলের জয় হয়েছে”।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দাবি

যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা প্রতিবাদী ছাত্রদেরকে সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই বিক্ষুব্ধ তরুণদের একটি দল হিসাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন বাস্তবতা হল আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভকারীরা আন্দোলনে তাদের দাবিগুলো স্পষ্টভাবে বলেছে। শিক্ষার্থীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকদের কাছ থেকে জবাবদিহীতা চাইছে, যাদেরকে তারা ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত বলে মনে করে। কারণ এই প্রশাসকরা যুদ্ধে সহায়তাকারী কোম্পানিগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ বন্ধ করেনি। বেশ কয়েকটি আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়তি তহবিল তাদের অর্থ ইহুদিবাদী কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করেছে যেগুলো জাতিসংঘের মতে, গাজা যুদ্ধে জড়িত।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 5351
  • Total Visits: 1350500
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২৭শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৬:৪৪

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018