অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি)। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে কেন্দ্র কেন্দ্রে পৌঁছতে শুরু করেছে। দুই উপজেলার বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছে বিজিবি ও পুলিশ।
এতকিছুর মাঝেও ভোটারদের মাঝে তেমন কোন আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ভোট নিয়ে উৎসবের কোন আমেজ নেই। ভোটারদের উপস্থিত বাড়াতে রাত-দিন কাজ করছে আওয়ামী লীগ।
ভোটের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে দলের ও তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারপরও আশানুরূপ ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। নিরুত্তাপ এই ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন।
এদিকে, মঙ্গলবার বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া, জাপা প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাসানী এবং জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জুয়েল কেন্দ্রে কেন্দ্রে এজেন্ট নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করলেও অপর স্বতন্ত্র প্রাথী আবু আসিফ ‘নিখোঁজ’ থাকায় তার কর্মী-সমর্থকদের মাঝ তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
এই ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে উকিল আবদুস সাত্তার (কলার ছড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফ আহমেদ (মোটরগাড়ি), জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানী (লাঙ্গল) মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত বিজয়ের পথে উকিল আব্দুস সাত্তার ভুইয়াকে এগিয়ে রাখছেন ভোটাররা।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ১৭টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে সরাইলে ৯টি ও আশুগঞ্জে রয়েছে ৮টি ইউনিয়ন। উপনির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে সরাইলে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯ এবং আশুগঞ্জ উপজেলার মোট ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার।উপনির্বাচনে মোট কেন্দ্র ১৩২টি। এর মধ্যে সরাইলে ৮৪টি ও আশুগঞ্জে ৪৮টি কেন্দ্র করা হয়েছে।
এদিকে, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উপ-নির্বাচন করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। নির্বাচনে সংসদীয় আসনে অফিসারসহ ১ হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার কথা রয়েছে। এছাড়া থাকবে ৪ প্লাটুন বিজিবির সদস্য, র্যাবের ৯টি টিম, পুলিশের ৯টি মোবাইল টিম ও ৪টি স্ট্রাইকিং টিম।
প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন ৩ জন পুলিশ, অস্ত্রধারী ২ জন আনসার, লাঠিধারী ১০ জন আনসার ও ২ জন গ্রাম পুলিশ। উপ-নির্বাচনে ১৭টি ইউনিয়নে ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ব্যাপারে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, প্রতিটি কেন্দ্রেই ইভিএম মেশিনসহ ভোটের সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার ছাড়াও প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার সদস্যরাও পৌঁছে গেছেন।
জেলা নির্বাচন অফিসার ও উপ-নির্বাচনে সহকারি রিটার্নিং অফিসার জিল্লুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইভিএমের মাধ্যমে ভোট করা হবে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, উপনির্বাচন উপলক্ষে আমরা ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কোন বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনে অফিসারসহ ১ হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। এছাড়া থাকবে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের একাধিক মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। ১৭টি ইউনিয়নে ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনটি উম্মুক্ত রেখেছে আওয়ামী লীগ। এই আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় কোন প্রার্থী দেয়নি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। জেলা আওয়ামী লীগ, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ ও আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়ার (কলার ছড়ি) পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা আজাদ ওরফে শিউলী আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকারের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে কলার ছড়ির পক্ষে প্রচার চালিয়েছে।
Leave a Reply