অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দখলদার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর মসনদে আবারও ফিরছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে গত বৃহস্পতিবার আল-আরাবিয়া টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মিশনে নামবেন বলে নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দিয়েছেন। নেতানিয়াহু ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একটানা বর্ণবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি এ সময় আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালান এবং ২০২০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগিতায় চারটি আরব দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো ও সুদানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হন। এবার মন্ত্রিসভা গঠনের দায়িত্ব পেয়েই সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন।
অবশ্য সৌদি আরবের পক্ষ থেকেও এ পর্যন্ত বহু বার এ ধরণের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সৌদি আরবের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদিল আল জুবায়ের বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে এবং দুই পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া চলছে। তবে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আরও বেশি সময় প্রয়োজন বলে তিনি জানিয়েছেন। ২০২০ সাল থেকে দুই পক্ষ সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে তৎপরতা চালাচ্ছে। সৌদি আরবের সবুজ সংকেতে তার দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। সৌদি সরকার তাদের আকাশসীমা ব্যবহারের জন্য দখলদার ইসরাইলকে অনুমতি দিয়েছে। কোনো কোনো সূত্র মতে, ইসরাইলের কয়েক জন কর্মকর্তা সৌদি আরব ঘুরে গেছেন।
তবে সৌদি আরব যে কারণে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের ঘোষণা দেয়নি তাহলো জনমতের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং মুসলিম বিশ্বে নিজের অবস্থান হারানোর ভয়। কাতারে চলমান ফুটবল বিশ্বকাপে প্রমাণ হয়েছে আরব জনগণের কাছে ইহুদিবাদী ইসরাইল এখনও চরম ঘৃণার পাত্র। সৌদি আরব, তিউনিশিয়া ও মরক্কোসহ আরব দেশগুলোর জনগণ কাতারে সম্মিলিতভাবে ইসরাইলের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছেন এবং ফিলিস্তিনের প্রতি নিজেদের সমর্থন ঘোষণা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, জনমতকে অগ্রাহ্য করেই শেষ পর্যন্ত সৌদি শাসক গোষ্ঠী ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক স্থাপন করবে। সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটা উপযুক্ত সময়ে তারা এই ঘোষণা দিয়ে বসবে।
যারা নিরপরাধ ও নিরস্ত্র মানুষকে নিজের ঘরবাড়ি থেকে বের করে সেখানে বসতি স্থাপন করে এবং নারী ও শিশুসহ অসহায়দের হত্যা করে, তাদেরকে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুমতি ইসলাম ধর্মে নেই। যারা ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিচ্ছে তারা আসলে ইসলাম ধর্মের ধার ধারেন না। ঈমানদার মুসলমান কখনোই আমেরিকা বা ইউরোপকে নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকার অবলম্বন মনে করতে পারে না। ১৯৪৮ সালে ইউরোপ ও আমেরিকা মিলে ফিলিস্তিনি মুসলমানদেরকে তাদের ভিটেমাটি থেকে তাড়িয়ে অবৈধ ও কৃত্রিম রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করেছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ইহুদিবাদীরা ফিলিস্তিনের আদি অধিবাসীদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। পাশ্চাত্য এটা করতেই পারে, এটা তাদের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। তারা উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় আদি অধিবাসীদের হত্যা করে সেখানে বসতি স্থাপন করেছে। তারা রেড ইন্ডিয়ান, মায়া ও ইনকা সভ্যতা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। আফ্রিকা মহাদেশের অনেককে দাস বানিয়েছে সাদা চামড়ার ইউরোপীয়রা। আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে একই ধরণের আচরণ করা হচ্ছে। মুসলমানেরা এ ধরণের কাজ করতে পারে না, এ ধরনের কাজকে স্বীকৃতিও দিতে পারে না।
Leave a Reply