অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কোনো জামানত লাগবে না। নেই কোনো সুদ। শুধু কিস্তিতে আসল টাকা পরিশোধ করলেই হবে। লাগবে না কোনো কাগজপত্র। কেবল জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ফটোকপি জমা দিলেই মিলবে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত! আর এ টাকা ঋণ দেবে সুইস ব্যাংক!
কিশোরগঞ্জে এমন অভিনব প্রতারণায় নেমেছে একটি সিন্ডিকেট। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এক লাখের মতো এনআইডি কার্ড।
আর এমন প্রতারণায় নেমেছে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি কথিত এনজিও। এনআইডি কার্ডের ফটোকপির পাশাপাশি তারা হাতিয়ে নিচ্ছে টাকাও।
জানা গেছে, চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সাধারণ মানুষকে জড়ো করে। পরে সেখান থেকে শিক্ষিত ও স্মার্ট দেখে উপজেলাভিক্তিক বিশেষ করে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আর, সাধারণ মানুষকে বোঝানো হচ্ছে বাংলাদেশের যেসব কালো টাকা সুইস ব্যাংকে জমা পড়ে আছে সেগুলো কিছুদিনের মধ্যেই উদ্ধার করে গরিব-অসহায় কর্মমুখী মানুষের মধ্যে বিনা সুদে বিতরণ করবেন তারা।
এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে জনপ্রতি দেওয়া হবে এক লাখ টাকা। আর যারা মোটামুটি স্বাবলম্বী ও ব্যবসায়ী তাদের দেওয়া হবে এক লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা। আইডি কার্ড সংগ্রহের পাশাপাশি গোপনে কার্ড প্রতি ২০ টাকা থেকে শুরু হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে চক্রটির বিরুদ্ধে।
করিমগঞ্জ উপজেলার দরগাভিটা এলাকার গৃহবধূ সাফিয়া আক্তার বলেন, এক লাখ টাকার ঋণ দেওয়ার কথা বলে এনআইডি কার্ডের ফটোকপির সঙ্গে এক হাজার করে টাকাও নিয়েছে আমাদের এলাকা থেকে। আমাদের বাড়ির তিনজন এক হাজার করে টাকা দিয়েছে।
করিমগঞ্জের জাঙ্গাল গ্রামের কৃষক ফাইজউদ্দিন বলেন, এলাকায় আওয়াজ পড়ে গেছে বাবুল (পুলিশের সাবেক কনস্টেবল) সুইস ব্যাংক থেকে টাকা এনে মানুষের মধ্যে বিলি করে দেবে। আমরা গরিব মানুষ তাই এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি। ফটোকপি দিয়ে যদি ঋণ নাও পাই তাহলে ক্ষতি তো আর কিছু হলো না। তাই এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি।
এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক কনস্টেবল এ এম ফজলুল কাদের বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের নাম ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’। ঢাকা অফিস থেকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এলাকা থেকে এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে পাঠাতে। সুইস ব্যাংকের কালো টাকা দেশে এনে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেওয়া হবে। তাই আমরা এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাচ্ছি। আমি এরইমধ্যে করিমগঞ্জ উপজেলা থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষের এনআইডির ফটোকপি ঢাকা অফিসে পাঠিয়েছি।
জানা গেছে, তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের বাসিন্দা ফেরুনা এই সংগঠনে ঢাকা অফিসে কাজ করেন। ফেরুনা আর গুজাদিয়া গ্রামের বাবুল মোবাইলে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইডি কার্ডের ফটোকপি সংগ্রহ করছেন।
কথিত ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে সংগঠনটির কিশোরগঞ্জের দায়িত্বে থাকা ফেরুনা আক্তার জানান, তাদের সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ধানমন্ডি এলাকায় সিটি কলেজের পাশে। প্রতি শনিবার সেখানে বসেন তিনি। সংগঠনের চেয়ারম্যান তাকে কিশোরগঞ্জের দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপর তিনি বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে নারীদের মাধ্যমে আইডি কার্ড সংগ্রহ করেছেন। এখন আর নিজে মাঠ পর্যায়ে যান না। তার মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্তরাই কাজ করছেন। এ পর্যন্ত জেলা থেকে সবমিলিয়ে লক্ষাধিক আইডি কার্ড কেন্দ্রীয় অফিসে জমা দিয়েছেন। তারা সবাই কিছুদিনের মধ্যেই বিনা সুদে ঋণ পাবেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা সমবায় অফিসার উম্মে মরিয়ম বলেন, ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে কিশোরগঞ্জে কোনো সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নেই। তারা যদি সমবায় সমিতির নাম ভাঙিয়ে কাজ করে থাকে তাহলে বেআইনি।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। দ্রুতই চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা হবে।
Leave a Reply