26 Dec 2024, 11:21 am

ক্যান্সার চিকিৎসায় বাংলাদেশে আসছে ‘যুগান্তকারী’ ওষুধ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

এম এ কবীর, ঝিনাইদহ : বাংলাদেশে প্রায় ১৮ লাখের মতো শিশু জটিল রোগ লিউকেমিয়ায় (অস্থিমজ্জার ক্যান্সার) আক্রান্ত। সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকায় প্রতিবছর শিশুসহ দেশের অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রে সুখবর নিয়ে এসেছে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস।
প্রথমবারের মতো অস্থিমজ্জার ক্যান্সারের ওষুধ আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশি শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি। যে ওষুধ তৈরি করেছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গবেষণাভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি সুইজারল্যান্ডের এফ. হফম্যান-লা রোশ। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠান দুটি বাংলাদেশে ক্যান্সার, চোখ ও মস্তিষ্কের জটিল সমস্যাজনিত মারাত্মক রোগের চিকিৎসার বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয় সাধনে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে।
রোববার (১২ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। পরে সাংবাদিকদের কাছে অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবায় বিশিষ অবদান রাখা ব্যক্তিত্ব ঝিনাইদহের কৃতি সন্তান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের রোগীদের কাছে ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত উন্নতমানের ওষুধ সরবরাহ করবে রোশ। এতে ক্যান্সার চিকিৎসা বৈশ্বিক মানে উন্নত হওয়ার পথে আরও এগিয়ে যাওয়ায় আশা করা হয়।
ঝিনাইদহের দাদা ভাই খ্যাত নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল বলেন, এই ‘যৌথ বিপণন’ এর সূচনাকে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে নতুন মাইলফলকে পৌঁছাল। রোশ আন্তর্জাতিকভাবে গবেষণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, যারা ১২৫ বছর ধরে নিজেদের গবেষণা ছাড়া কোনো ওষুধ তৈরি করেনি। বিশেষ করে ক্যন্সার, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিল রোগের ওষুধ তৈরি করছে।
তিনি বলেন, লিউকেমিয়া নামক একটি রোগের বিষয়ে সবাই জানেন। বিশেষ করে যারা ছোট শিশু, তারাই এই রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগের ফলে তাদের ব্লাড সেলগুলো ভেঙে যায়,ফলে তাদেরকে নানা ঔষধ দিতে হয়, ব্লাড ট্রান্সমিশন করতে হয়। আমাদের জানা মতে এরকম প্রায় ১৮ লাখের মতো শিশু বাংলাদেশে আছে, কিন্তু এতোদিন বাংলাদেশে এই রোগের কোন ওষুধ ছিল না। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক কোম্পানি রোশ সম্প্রতি একটি ওষুধ আবিষ্কার করেছে, যেটা এই লিউকেমিয়া রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।
বিশিষ্ট দানবীর এবং রেডিয়েন্ট চেয়ারম্যান মহুল বলেন, ওষুধটির যদি আপনারা আন্তর্জাতিক মূল্য দেখেন, তাহলে আমাদের অনেকের পক্ষেই এটা কেনা সম্ভব নয়। আমাদের দেশটা হলো এমন যেখানে প্যারাসিটামল থেকে শুরু করে ক্যান্সারের ঔষধ পর্যন্ত সমস্তটাই নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে কিনতে হয়। আমাদের কোন হেলথ ইন্স্যুরেন্স নেই বা অন্য কোন সহযোগিতা বলতে গেলে নেই। তাছাড়া এই রোগটিতে (লিউকিমিয়া) যেহেতু শিশুরা আক্রান্ত হয়, তাই এটি আমাদের কাছে একটি মানবীয় বিষয়। সেক্ষেত্রে দামের বিষয়টিও আমরা মানবীয় রাখার চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, আমরা সরকারের সাথে ওষুধটি নিয়ে কথা বলেছি, সরকারও লিউকেমিয়ার জন্য কাজ করছে। আমরা সরকারকে বলেছি, এই ওষুধটা যদি সরকারিভাবে ওনাদের কাছ থেকে নিয়ে সাধারণ মানুষদের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে দেয়া হয়, তাহলে রোশ সরকারের জন্য অত্যন্ত ন্যূনতম মূল্যে এটি সরবরাহ করবে।
চুক্তির উদ্দেশ্য কেবল ওষুধ আমদানি কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, এটি খুবই হাইটেক একটি মেডিসিন, এটা বাংলাদেশে তৈরি করার মত এখনো উপযুক্ত প্রযুক্তি আমাদের গড়ে ওঠেনি। আমরা আপাতত এটি আমদানি করব। তবে যেহেতু আমরা রোশের সাথে চুক্তি করেছি, ভবিষ্যতে হয়তো আমরাও ওষুধটি তৈরির বিষয়ে চিন্তা করবো। একসময় কিন্তু আমাদের দেশে ক্যান্সারের কোন ওষুধ তৈরি হতো না সবই আমদানি হতো, এখন প্রচুর ক্যান্সারের ঔষধ তৈরি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কোভিড মোকাবিলায় রেডিয়েন সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে জটিল কোনো ওষুধের যাতে সংকটে না পড়তে হয় সেজন্য সরকারের সঙ্গে আমরা সমন্বয় করে কাজ করেছি। বর্তমানে অনেক জটিল রোগের জীবনরক্ষকারী বিশেষ ওষুধ আমরাই কেবলমাত্র সরবরাহ করছি। রোশের সঙ্গে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের পাশাপাশি বৃহত্তর অর্থে দেশ ও দেশের নাগরিক উপকৃত হবে।
এ সময় সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক রোশ ফার্মাসিউটিক্যালসের সেন্ট্রাল ইউরোপ, তুরস্ক ও ভারতীয় উপমহাদেশের আঞ্চলিক প্রধান আদ্রিয়ানো ট্রেভে বলেন, ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে। দিন দিন আরও উন্নত হচ্ছে। আরও আধুনিকতা আনতে সহযোগিতা করতে চাই আমরা। এ চুক্তির ফলে নতুন অনেকগুলো সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে এবং বাংলাদেশের রোগীদের জন্য রোশের উন্নতমানের ইনোভেটিভ ওষুধ পাওয়ার পথ সহজতর হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি এফ. হফম্যান-লা রোশ বিশ্বের অন্যতম গবেষণাভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। ১২৫ বছর যাবত এই কোম্পানি শুধুমাত্র নিজেদের গবেষণা ছাড়া কোন ওষুধ মার্কেটিং করেনি। তারা বর্তমান পৃথিবীতে কিছু কিছু জটিল রোগের এমন কিছু ওষুধ আবিষ্কার করেছে, যা গোটা মানব সভ্যতাকে উপকৃত করেছে। বিশেষ করে ক্যান্সার, কিডনি রোগ, কার্ডিয়াক ডিজিজের ক্ষেত্রে এবং সম্প্রতি চোখের রোগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে।
রোশ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্ক হীব বলেন, বাংলাদেশি যেসব হেমাটোলজিস্ট আছেন, তাদের সাথে আমরা ওষুধটি নিয়ে আলোচনা করেছি। এতদিন রোশ এবং রেডিয়েন্ট দুটি কোম্পানি পার্টনারশিপ ছিলো, তারা তাদের মত প্রমোশন করতো। আমরা মনে করি বাংলাদেশের মানুষকে যদি আরো ভালো সেবা দিতে হয়, তাহলে আমাদেরকে কো-প্রমোশনের আওতায় আমরা একসাথে রোগীদের কাছে যাবো এবং রোগীদের প্রতি আমাদের সেবার দায়িত্বটাকে ভাগ করে নেব। যাতে আমরা বাংলাদেশের মানুষকে আরো উপযুক্ত সেবার মাধ্যমে তাদেরকে আমরা সুস্থ রাখতে পারি এবং সুস্থ্য করতে পারি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 9573
  • Total Visits: 1433774
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1675

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ২৩শে জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১১:২১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018