অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে দলমত নির্বিশেষ দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আসুন, সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে প্রিয় মাতৃভূমি থেকে সংঘাত-সংঘর্ষ এবং যেকোনো উগ্রবাদ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড হতে দূরে থেকে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে শামিল হই। গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তোলে এমন যেকোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রূখে দাঁড়াতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। ক্ষমতায় যাওয়া বা পরিবর্তন আনার একমাত্র উপায় নির্বাচন। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও হিংসার রাজনীতি কখনো দেশ, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। বরং তা রাজনৈতিক পরিবেশকে তমসাচ্ছন্ন করে তোলে। সংঘাত ভুলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে এসে গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে আমাদের সকলের সহায়তা করা উচিত।
‘রাজনীতি থেকে হিংসা-হানাহানি অবসানের মাধ্যমে একটি সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মহান সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের জনগণ নিরপেক্ষভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ ও বেগবান করবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।’
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুক্রবার (৭ মার্চ) জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি, সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শুরু হওয়া বিশেষ অধিবেশনে স্মারক বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, পৃথিবীর মানচিত্রে একটি আত্মমর্যাদাশীল, দেশপ্রেমিক জাতি হিসেবে আমাদের রয়েছে একটি অনন্য পরিচয়। সে পরিচয়কে আমাদের ঐকান্তিকতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা দিয়ে সমুন্নত রাখতে হবে। দেশের উন্নয়নে আমাদের চিন্তা, কর্মপদ্ধতি ও কৌশল ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু আমাদের মধ্যে সুগভীর ঐক্য থাকবে জাতীয় স্বার্থ ও দেশপ্রেমের প্রশ্নে। হিংসা-বিভেদ নয়, স্বার্থের সংঘাত নয়- আমাদের সামনে রয়েছে আজ দেশ গড়ার কাজ। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা গড়ে দিয়ে যাব একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ- এই হোক আমাদের সকলের অঙ্গীকার।
জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তীতে শুক্রবার (৭ মার্চ) বিশেষ অধিবেশনটি ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদসহ সরকার ও বিরোধী দলের অধিকাংশ সংসদ সদস্যরা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। মহান জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তির দিনকে স্মরণীয় রাখতে ভিভিআইপি গ্যালারীতে সস্ত্রীক নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, দেশের বুদ্ধিজীবীগণ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ, সামরিক- বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল তিনটায় সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। এর একটু পরেই বিউগলে রাষ্ট্রপতির আগম ধ্বনী বাজানো হয়। স্যুটকোর্ট পরিহিত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদ অধিবেশনে প্রবেশ করা মাত্রই অক্রেস্ট্রায় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়, সবাই দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরপর জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. আবদুল হামিদ তার শেষ ভাষণ দেন। প্রায় পৌণে এক ঘন্টার দীর্ঘ বক্তব্য শেষ করলে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা তুমুল টেবিল চাপিড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রপতি অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করলে স্পীকার বিশেষ অধিবেশনের অবশিষ্ট কার্যাদি সম্পন্ন করেন।