28 Feb 2025, 03:57 pm

গরীব দেশগুলোর জন্য তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত ; সমঝোতা হয়নি অনেক কিছুতেই

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মিশরে কপ-২৭ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে একটি তহবিল গঠন করার বিষয়ে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে বিশ্বের দেশগুলো।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখতে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির ব্যাপারে কোন সমঝোতা হয়নি।

ফলে তহবিল গঠনে খুশি হলেও জলবায়ু মোকাবিলায় কোন চুক্তি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঝুঁকিতে থাকা দেশ এবং পরিবেশ কর্মীরা।

ক্ষতির শিকার দেশগুলোর জন্য তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত

মিশরের শারম-আল-শেখে রাতভর ব্যাপক আলোচনার পর ভোরের দিকে কপ-২৭ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট শামেহ শুউক্রি সম্মেলনের চূড়ান্ত এজেন্ডা উপস্থাপন করেন, কোন আপত্তি ছাড়াই সেটি মেনে নেন আলোচকরা।

এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার দেশগুলোকে সহায়তা দিতে একটি তহবিল গঠনে সম্মত হয় ১৯৮টি দেশ।

বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের এই ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে,  ধনী দেশগুলোর নিঃসরণ করা কার্বনের কারণে তৈরি হওয়া এই তহবিলের টাকা দিয়ে তারা ঝড়, বন্যা এবং অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজে লাগাবে।

বহুদিন ধরে ক্ষতির শিকার দেশগুলো ক্ষতিপূরণ হিসাবে নগদ অর্থ দেয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল।

যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্তের পর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘’ন্যায়বিচারের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।‘’

খুব দ্রুত এই সমঝোতা হলেও তহবিলে কোন দেশ, কীভাবে আর কত টাকা দেবে, সেসব বিষয় এখনো পরিষ্কার হয়নি। সামনের বছরের আগে সেই উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই।

কার্বন নিঃসরণ বন্ধে যে লড়াই ছিল, এই চুক্তির মাধ্যমে সেখানে সমঝোতা করা হল কিনা, রয়টার্সের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে মেক্সিকোর প্রধান আলোচক কামিলা জেপেদা বলছেন, ‘’হয়তো। কিন্তু সময় থাকতে অন্তত কোন একটা অর্জন নিয়ে নেয়া ভালো।‘’

আর জার্মান জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী জেনিফার মর্গান বলেছেন, ‘’এখানে যে সমঝোতার প্রস্তাব এসেছে, তাতে আমরা সম্মতি দিয়েছি, কারণ আমরা সবচেয়ে ক্ষতির শিকার দেশগুলোর সঙ্গে থাকতে চাই।‘’

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে তহবিল গঠন করার বিষয়ে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে বিশ্বের দেশগুলো।

জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে বিতর্ক

ইউরোপে যুদ্ধ, জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা এবং বিশ্ব জুড়ে ব্যাপক মূল্যস্ফীতির মধ্যে বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার একটি পরীক্ষা হিসাবে দেখা হয়েছে দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই সম্মেলনকে।

মিশরের এই সম্মেলন আখ্যা পেয়েছে ‘আফ্রিকান কপ’ হিসাবে।

ধনী, শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের ফলে গরীব দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের যে চ্যালেঞ্জ এবং ক্ষতির মধ্যে পড়েছে, সেবিষয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনার  প্রতিশ্রুতি দিয়েই সম্মেলন শুরু হয়েছিল।

কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি ইস্যুতে কোন উল্লেখযোগ্য সমাধান হয়নি।

উন্নত দেশগুলো বিশ্ব থেকে কয়লা ভিত্তিক জ্বালানি বন্ধ করতে চায়, কিন্তু ভারত এবং চীনের মতো দেশগুলো তাতে রাজি নয়।

বহু দরকষাকষির পর আলোচনা ঠেকেছিল একেবারে বাতিল করার পরিবর্তে কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনা।

কিন্তু ভারত এবং আরও কয়েকটি দেশ এখন চাইছে, জীবাশ্ম জ্বালানি সীমিত করার তালিকায় কয়লার সঙ্গে সঙ্গে যেন তেল ও গ্যাসও যুক্ত করা হয়।

এ নিয়ে বিতর্কে এই সম্মেলনে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে একমত হতে পারেনি বিশ্বের দেশগুলো।

জাতিসংঘের যেসব চ্যালেঞ্জ

জাতিসংঘের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ শতকে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির বেশি বাড়লে বিশ্বে মারাত্মক খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে। সংস্থাটির এই বছরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো তাপমাত্রা সেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ধরে রাখার মতো অবস্থায় নেই। বিশেষ করে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘একের পর এক রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি পরিষ্কার ও অন্ধকার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।”

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *