23 Nov 2024, 10:59 am

গাজা আগ্রাসনে ইসরায়েলে বাড়ছে ক্ষোভ ; নেতানিয়াহুর বাড়ির বাইরে ব্যাপক বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে চলমান আগ্রাসনের মধ্যে ইসরায়েলজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ। হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগে ক্ষোভ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটির হাতে বন্দিদের নিরাপদে উদ্ধারের দাবিও জোরালো হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেছেন ইসরায়েলিরা। এসময় হামাসের কাছে বন্দি থাকা ইসরায়েলিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়।

রোববার (৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে গাজা উপত্যকার আশপাশের এলাকায় বসবাসরত ইসরায়েলিদের ওপর হামাসের মারাত্মক হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার দায়ে ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং এর মধ্যেই শনিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।

যদিও বাসভবনের আগেই বিক্ষোভকারীদের আটকে দেয় পুলিশ। ইসরায়েলি পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভকারীরা এসময় নানা স্লোগান দেন। এছাড়া জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের চারপাশে পুলিশের বাধা সত্ত্বেও শত শত বিক্ষোভকারী সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

এছাড়া ইসরায়েলি বাণিজ্যিক নগরী তেল আবিবেও হামাসের হাতে বন্দিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে তাদের আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবসহ কয়েক হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভ করেন।

রয়টার্স বলছে, শনিবারের এই বিক্ষোভ এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হয় যখন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ করা উচিত বলে তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি ইসরায়েলি বিশ্বাস করেন বলে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে। মূলত সমীক্ষার এই ফলাফলে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ওপর জনগণের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের বিষয়টিই উঠে আসছে।

প্রসঙ্গত, মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত ৭ অক্টোবর ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

হামাসের এই হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪০০ ইসরায়েলি। নিহতদের মধ্যে ২৮৬ জন সেনাসদস্য রয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। হামাসের হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি। এছাড়া সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকসহ আরও ২৩৯ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

অবশ্য নেতানিয়াহু এখনও পর্যন্ত এই ব্যর্থতার জন্য নিজের ব্যক্তিগত দায় থাকার কথা স্বীকার করেননি। তবে তিনি নিজেও ইতোমধ্যেই গাজায় আটক সব বন্দির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।

রয়টার্স বলছে, হামাসের হামলার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর ইসরায়েলি জনগণের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। গাজায় আটক বন্দিদের অনেকের পরিবার নেতানিয়াহু সরকারের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং তাদের আত্মীয়দের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবারের বিক্ষোভে তেল আবিবে হাজার হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী পতাকা নেড়ে এবং হামাসের হাতে বন্দিদের ছবি নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা ‘যেকোনও মূল্যে বন্দিদের মুক্তি দাও’ এর মতো স্লোগানসহ নানা দাবি সম্বলিত পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন। এছাড়া ‘বন্দিদের এখনই তাদের বাড়িতে নিয়ে আসুন’ বলেও অনেকে স্লোগান দেন।

ওফ্রি বিবাস-লেভি নামে এক নারীর ভাই, তার চার বছরের ছেলে এরিয়েল এবং ১০ মাসের ছেলে কেফিরকে বন্দি করেছে হামাস। রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, তিনি তার পরিবারের প্রতি সমর্থন জানাতে বিক্ষোভে এসেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না তারা কোথায় আছে, আমরা জানি না তাদের কী অবস্থায় রাখা হয়েছে। আমি জানি না কেফির খাবার পাচ্ছে কিনা, আমি জানি না এরিয়েল পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে কিনা। সে খুব ছোট বাচ্চা।’

অবশ্য গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। গাজার প্রশাসন জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই ৬ হাজার ৪০০ জন।

রয়টার্স বলছে, হামাসের এই যুদ্ধের আগেও ইসরায়েলিদের মধ্যে নেতানিয়াহু একজন বিভাজনকারী ব্যক্তিত্বই ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে, যদিও তিনি তা অস্বীকার করে আসছেন। এছাড়া বিচার বিভাগের ক্ষমতাকে রোধ করার পরিকল্পনার মাধ্যমে হাজার হাজার ইসরায়েলিকে আগেই রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছিলেন তিনি।

এদিকে শনিবার ইসরায়েলের চ্যানেল ১৩ টেলিভিশনের প্রকাশিত জরিপে নেতানিয়াহুর জন্য খারাপ বার্তাই উঠে এসেছে। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৭৬ শতাংশ ইসরায়েলি মনে করেন নেতানিয়াহুর এখনই পদত্যাগ করা উচিত এবং ৬৪ শতাংশ বলেছেন, যুদ্ধের পর অবিলম্বে ইসরায়েলে নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।

জরিপ অনুসারে, হামাসের হামলার জন্য কে সবচেয়ে বেশি দোষী তা জিজ্ঞাসা করা হলে, ৪৪ শতাংশ ইসরায়েলি নেতানিয়াহুকে দোষারোপ করেছেন। এছাড়া ৩৩ শতাংশ ইসরায়েলি ভূখণ্ডটির সামরিক প্রধান এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন। আর ৫ শতাংশ ইসরায়েলি দায়ী করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 8812
  • Total Visits: 1276322
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২০শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১০:৫৯

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018