অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিবাদ’ সম্পর্কিত সংবাদ সম্মেলন যথাযথ তথ্যনির্ভর নয় বলে মনে করে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ। সংস্থাটি এক প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলনটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে তথ্য ও পরিসংখ্যান আরও যাচাই-বাছাই করতে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ নাগরিক সমাজ এ প্রতিক্রিয়া জানায়। এতে স্বাক্ষর করেছেন দেশের ৮১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। যারমধ্যে আছেন দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক আমলা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, পুলিশের সাবেক আইজিপি, সাবেক উপাচার্য, স্থপতি, রাষ্ট্রদূত, চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রকাশক, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক প্রমুখ।
বিবৃতিতে জানানো হয়, ৩১শে অক্টোবর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিবাদ’ শিরোনামের প্রেস ব্রিফিং আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নির্বিচার অগ্নিসংযোগ, পুলিশ হত্যা, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা এবং ভাঙচুরসহ সকল ধরনের সহিংসতাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিবাদ’- এর অন্তর্ভুক্ত করায় এই বিবৃতিটি অপরাধীদেরকে তাদের নৃশংস সহিংস কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে পারে।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারকের বাসভবনে হামলাকারী সকল দুষ্কৃতকারীকে বিএনপির কর্মী হিসেবে শনাক্ত করা হলেও বিবৃতিতে তার প্রতিফলন ঘটেনি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে-‘বিরোধী দলের কর্মীরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে- এ ধরনের মন্তব্যে প্রকৃত অপরাধীদের পার পেয়ে যাবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ১১ জনের মৃত্যুর খবরটি, বিশেষভাবে সহিংসতায় বিরোধী দলের ছয় সদস্য নিহত হয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, প্রায় ৩৫ জন সাংবাদিককে আহত করার ঘৃণ্য ঘটনাও জাতিকে উদ্বিগ্ন করেছে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে ইতিমধ্যে এ ঘটনায় জড়িত মুখোশধারী ও অন্য আক্রমণকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং বিএনপি’র সঙ্গে তাদের সুস্পষ্ট যোগসূত্র পাওয়া গেছে।
পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মারার এবং কুপিয়ে হত্যা করার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কিছু আক্রমণকারী মুখোশ পরে ছিল। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের অনুমান যে, মুখোশ পরা আক্রমণকারীরা ছিল ক্ষমতাসীন দলের লোক। তাদের এই অনুমান বিভ্রান্তিকর এবং বিষয়টি গভীর পর্যবেক্ষণের দাবি রাখে।
হামলাকারীদের যাদেরকে সরকারি দলের সমর্থক বলে মনে করা হয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্যের কারণে জনমনে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হতে পারে। পুলিশের তল্লাশি অভিযান ও নির্বিচার গ্রেফতার নিয়ে অভিযোগ বিষয়ে আমরা মনে করি পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ২৮শে অক্টোবর সর্বোচ্চ ধৈর্য্য প্রদর্শন করেছে।
আমরা ওএইচসিএইচআর-কে অনুরোধ করছি যে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারপতির বাসভবনে হামলা, সাংবদিকদের উপর ন্যাক্কারজনক আক্রমণ, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মারা, সেন্ট্রাল পুলিশ হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ, কয়েক ডজন গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, বাংলাদেশ পুলিশের সেন্ট্রাল ও বৃহত্তম পুলিশ লাইনে হামলা করা, নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা ঘটনার তীব্রতা ও নিষ্ঠুরতা- এ বিষয়গুলি যেন সংঘটিত ঘটনার বিপরীতে গৃহীত ব্যবস্থা মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়। উল্লিখিত বিষয় সম্পর্কে তথ্য ও পরিসংখ্যান আরও যাচাই-বাছাই করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়কে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশবিদ ডঃ কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারওয়ার আলী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান, সাবেক সচিব কে.এইচ. মাসুদ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জনাব মোহাম্মদ নুরুল হুদা, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান, অভিনেতা ও মঞ্চ পরিচালক রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক ড. কনক কান্তি বড়ুয়া, বাংলাদেশের সাবেক মহাপরিদর্শক পুলিশ ও রাষ্ট্রদূত ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও সাংস্কৃতিক কর্মী নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান, সাবেক চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইকবাল মাহমুদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক কর্মী পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়,স্থপতি ও লেখক ডঃ নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।