23 Feb 2025, 12:01 pm

টাঙ্গাইলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা ; সমস্যায় ভাসমান ও নিম্নআয়ের মানুষ 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  টাঙ্গাইল জেলায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। বিশেষ করে জেলার পশ্চিমের চরাঞ্চল ও  উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি এলাকায় সবচেয়ে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। ফলে নিম্ন-আয়ের মানুষ, গৃহহীন ভাসমান মানুষ ও কৃষকরা সমস্যায় পড়ছে সবচেয়ে বেশি।

টাঙ্গাইল আবহাওয়া অফিসের সূত্রে জানা যায়, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা কমেছে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সকল ৯টা জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রার পতন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে জেলা আবহাওয়া অফিস।

জানা গেছে, বুধবার ও বৃহস্পতিবার জেলায় সূর্যের দেখা মেলেনি। সেই সঙ্গে উত্তরের কনকনে হিমেল হাওয়ার কারণে জেলায় প্রচণ্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। এর ফলে জেলার পশ্চিমের চরাঞ্চলে খুব সকালে কৃষকদের সবজির ক্ষেতে গিয়ে সবজি তুলে শহরের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে আনতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও জেলার পাহাড়ি এলাকায় ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় কারণে সন্ধ্যার পরে স্থানীয় মানুষ জন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না।

স্থানীয়রা জানায়, শীতের দাপটে গ্রামাঞ্চলের অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টাও করছেন। তীব্র শীত উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে কাজের সন্ধানে বের হয়েছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। তাপমাত্রা কমার চেয়েও বেশি অসুবিধা হচ্ছে হিমশীতল বাতাসে। এর পাশাপাশি ঘন কুয়াশা থাকায় বাতাসে তা গায়ে কাঁটার মতো বিঁধতে থাকে। ঘরে ঘরে লেপ-কাঁথা নামানো হয়েছে। তবে গত কয়েকদিন থেকেই শীতের তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন জেলার নিম্নআয়ের মানুষজন। খড়-কুঠো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে নিম্নআয়ের মানুষ। সন্ধ্যার পর শহর খালি হয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড শীত থেকে বাঁচতে সন্ধ্যার পর ঘরে থাকছে শহরের মানুষ। যার প্রভাব পড়েছে শহরের ব্যবসা-বাণিজেও।

টাঙ্গাইল শহরের শহিদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে পান-সিগারেট বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ করেন লাইলি বেগম (৭০)। পরিবার-পরিজনবিহীন ভাসমান লাইলি বেগম থাকেন শহিদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে।  তিনি জানান, এ শীতে কাঁপছেন তিনি। গায়ের পাতলা চাদরটা তার শীত নিবারণ করতে পারছে না। তারপরও বাধ্য হয়ে এ প্রচণ্ড শীতে সকাল থেকে রাত অব্দি পান-সিগারেট বিক্রি করতে হচ্ছে জীবনধারণের প্রয়োজনে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের বাগুনটাল গ্রামের কৃষক শাহাদাত হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার খুব ভোরে তার কপি ক্ষেতে গিয়েছিলেন কপি কেটে টাঙ্গাইল পার্ক বাজারে নিয়ে যাওয়া জন্য। প্রচণ্ড শীতে কাঁপতে কাঁপতে তার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি নদীর পাড়ের তার এ কপি ক্ষেতে থাকার। ফলে কপি না কেটেই বাসায় চলে এসেছেন তিনি। এ দিকে নির্দিষ্ট সময়ে কপি না তুললে বাজারে সঠিক দাম পাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি। প্রচণ্ড শীত তাঁদের জীবনযাপনকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

শুকুর আলী টাঙ্গাইল পৌর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে জীবিকানির্বাহ করেন। তার গ্রামের বাড়ি জেলার মধুপুর উপজেলায় হলেও টাঙ্গাইল শহরের পশ্চিম আকুর-টাকুর পাড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি জানান, এ প্রচণ্ড শীতে শহরে মানুষজন বের হয় না। বিশেষ প্রয়োজনে যারা বের হচ্ছেন তারাও শহরে বেশি সময় থাকছে না। ফলে গত ৩ দিনে তার আয়-রোজগার প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী মাসে তার বাড়ি ভাড়া দিতে সমস্যায় পড়তে হবে। এছাড়া এ প্রচণ্ড শীতে তার রিকশা  চালাতে সমস্যা হচ্ছে, ফলে সন্ধ্যার পর রিকশা না চালিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *