অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন ২২টি রাজ্য এবং বেশ কয়েকটি নাগরিক অধিকার গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশগুলোর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছে। যার মধ্য অন্যতম হল, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল।
দ্যা গার্ডিয়ান জানিয়েছে, মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারি বোস্টনের ফেডারেল আদালতে দায়ের করা মামলায়, ২২টি রাজ্য ও কলম্বিয়া জেলা যুক্তি দিয়েছে যে, এই আদেশ মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর স্পষ্ট লঙ্ঘন। ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেকেই নাগরিকত্বের অধিকারী।
নিউ জার্সির অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাথিউ প্লাটকিন এক বিবৃতিতে বলেন, আজকের মামলাটি ট্রাম্প প্রশাসনকে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠায় যে, আমরা আমাদের বাসিন্দাদের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকারের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াব।
মামলাগুলো ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির অন্যতম বিতর্কিত পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এই আদেশে ফেডারেল সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, অবৈধ অভিবাসীদের বা অস্থায়ীভাবে অবস্থানরত মায়েদের সন্তানদের মার্কিন নাগরিকত্ব স্বীকৃতি না দেওয়া হোক। এমনকি যাদের পিতা-মাতা মার্কিন নাগরিক বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা নন, তাদের ক্ষেত্রেও এই নির্দেশ প্রযোজ্য।
ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বাধীন রাজ্যগুলো ছাড়াও আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ), অভিবাসী সংস্থা এবং একজন গর্ভবতী মা এই আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ম্যাসাচুসেটস অ্যাটর্নি জেনারেল আন্দ্রেয়া ক্যাম্পবেলের মতে, এই আদেশ কার্যকর হলে প্রতি বছর প্রায় ১,৫০,০০০ শিশু প্রথমবারের মতো নাগরিকত্বের অধিকার হারাবে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সংবিধান লঙ্ঘনের ক্ষমতা নেই।
মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৮৯৮ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম ওং কিম আর্ক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল যে অনাগরিক পিতা-মাতার ঘরে জন্মগ্রহণকারী শিশুরাও মার্কিন নাগরিকত্বের অধিকারী। নতুন এই আইনি চ্যালেঞ্জ বোস্টনের ফেডারেল আদালতে শুরু হলেও, যে কোনো সিদ্ধান্ত প্রথম মার্কিন সার্কিট কোর্ট অফ আপিলসে পর্যালোচনা করা হবে।
ট্রাম্পের অন্যান্য নির্বাহী আদেশগুলোর বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একটি আদেশ ফেডারেল কর্মচারীদের চাকরির সুরক্ষা দুর্বল করেছে, যা ন্যাশনাল ট্রেজারি এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন চ্যালেঞ্জ করেছে। ট্রাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী, সরকারি কর্মীদের বরখাস্ত করা এবং তাদের জায়গায় রাজনৈতিক অনুগতদের নিয়োগ করা সহজতর হবে।
মামলাকারীদের মধ্যে রয়েছেন ম্যাসাচুসেটসের এক ‘অস্থায়ী সুরক্ষিত মর্যাদায়’ থাকা গর্ভবতী নারী, যিনি মার্চে সন্তান জন্ম দেবেন। ‘অস্থায়ী সুরক্ষিত মর্যাদা’ ১৭টি দেশের ১০ লক্ষের বেশি মানুষকে সুরক্ষা প্রদান করে। এই আদেশের ফলে তাদের সন্তানদের নাগরিকত্ব অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই আদেশ এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো মার্কিন সংবিধান এবং অভিবাসন নীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করছে। আদালতের সিদ্ধান্ত শুধু এই আদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।
Leave a Reply