অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কয়েকটি মামলায় দণ্ড নিয়ে প্রায় দেড় দশক ধরে সপরিবারে লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘তারেক জিয়াকে বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। কীভাবে তাকে ফিরিয়ে আনা যায় সেই চেষ্টা আমরা করব। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা বাস্তবায়ন করব।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে এক যৌথসভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে আর কাউকে খেলতে দেব না। আওয়ামী লীগ বসে মাইর খাবে তা আর হবে না। আওয়ামী লীগ আর বসে থাকবে না। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে তার জবাব দিতে হবে।
১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজনের মৃত্যুসহ আহত হন কয়েক ডজন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে। পরে বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা করে দলটি।
উত্তপ্ত এই পরিস্থিতিতে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে যৌথসভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
এসময় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে যৌথসভায় উপস্থিতি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, কামরুল ইসলাম,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন,
দপ্তরসম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ছিল একটি স্বর্ণযুগ। সরকার জনগণের সেবক। ক্ষমতায় এসে সেটা প্রমাণ করেছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু যখন সুপরিকল্পিতভাবে দেশ গঠনে কাজ করছিল তখন তাকে হত্যা করা হয়। এরপরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেছিল।
২০০৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি ভোট চুরি করেছিল বলেই তাদেরকে জনগণ ২০০৮ সালে ভোট দেয়নি। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামী লীগ কখনো ভোট চুরি করে না, জনগণের ভোট সংরক্ষিত করে। আওয়ামী লীগকে ভোট চুরি করার অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি।
বিএনপির অত্যাচার নির্যাতনের কথা দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে অত্যাচারিত হয়নি, লাঠির বাড়ি খায়নি আওয়ামী লীগের এমন একজন নেতাও নেই। এমনকি চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভায় গুলি করা হয়েছিল। যে পুলিশ জনসভায় গুলি করেছিল খালেদা জিয়া তাকেই পুলিশের আইজিপি করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। কিন্তু নারী নিযার্তন থেকে শুরু করে এমন কোনো কাজ নেই যে তারা (বিএনপি) না করছে। ৯৬ এর পরে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপির আবারও সন্ত্রাসী করেছিল। সেই কথা ভুলে গেলে চলবে না।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনের ইশতিহার ছিল তা বাস্তবায়ন করেছ। কিন্তু বিএনপি কখনো দেখাতে পারবে না যে, তারা তাদের ইশতিহার বাস্তবায়ন করছে। আওয়ামী লীগ দেশে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে যে প্রতিশ্রতি দিয়েছে তার ব্যস্তাবায়ন করেছে।
তারেক জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, তারেক জিয়া রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে চলে গেছে। আওয়ামী লীগতো তাকে বিদেশে পাঠায়নি। তারেক জিয়ার যদি এতো সাহস থাকে তাহলে কেন দেশে আসে না। আমাকে (শেখ হাসিনা) অনেক বাধা দিয়েছিল দেশে না আসার জন্য, কিন্তু ঠেকাতে পারেনি। তারেক কেনো তার বাবাও (জিয়াউর রহমান) আমাকে দেশে আসা ঠেকাতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ করেছিল বলেই বিদেশে বসে ভার্চুয়ালি কানেক্টেড হয়ে কথা বলতে পারে তারেক জিয়া।
‘বিএনপি হলো শূন্য লতার মতো, যেই গাছে যায় সেই গাছই খেয়ে ফেলে। আর কোনো ফল ধরে না। বিএনপি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কোনো ভালো করতে পারেনি’—যোগ করেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের মানুষের সেবক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগেই দেশের মানুষের জন্য কাজ করে। আমরা মানুষের সেবক হয়ে করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছি। দেশের মানুষের সেবার জন্য কাজের বুয়া সেজে করতে হয়। দেশের মানুষের জন্য এমন মনমানসিকতা বিএনপির নেই। বিএনপি দেশের মধ্যে লুটপাট করতে এসেছিল। আর আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে দিতে এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে। দেশের আর উন্নয়ন হবে না। দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না। কেউ বিশৃঙ্খলা করে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না।
বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি আবারও বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। রাস্তায় পুলিশের ওপর হামলা করছে। চালডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খেয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে সরকার পতন করা যাবে না। সরকার পতন করা এতে সহজ কাজ নয়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হলে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না।
বিএনপি যে হাত দিয়ে মারতে আসবে সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারতে আসবে সেই হাতকে পুড়িয়ে দিতে হবে। আর তাদেরকে ছাড় নয়।
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। দেশের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা করতে দেব না। তাদেরকে (বিএনপিকে) আর কোনো ক্ষমা করা হবে না, তাদেরকে কিসের ক্ষমা। বিএনপির নেতাকর্মী শান্তিতে ব্যবসা করছে, আওয়ামী লীগ কোনো বাধা দিচ্ছে না।
এসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মীরা বিএনপি আমলে নির্যাতন মারধরের শিকার হয়েছে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আওয়ামী লীগের যেসব নির্যাতিত নেতাকর্মী আছে, তাদের বিষয়গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে হবে।
Leave a Reply