28 Sep 2024, 09:11 pm

দুদকে হাজির হননি বেনজীর ; দিয়েছেন লিখিত বক্তব্য

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : পুলিশের আলোচিত সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ দুর্নীতি দমন কমিশনের দ্বিতীয় দফার তলবেও হাজির না হয়ে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন।

দুর্নীতি ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রোববার (২৩ জুন) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগের লিখিত বক্তব্য জমা দেন তিনি।

এ বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন গণমাধ্যমকে বলেন, বেনজীর আহমেদের মাধ্যমে গত ২১ জুন দুদক চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। এবারের চিঠিতে নতুন করে সময়ের আবেদন করেননি। লিখিত বক্তব্যে তার অভিযোগগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

দুদক সচিব সাংবাদিকদের আরও বলেন, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বেনজীরের বক্তব্য প্রদানের জন্য আজ দিন নির্ধারণ ছিল। কিন্তু তিনি যথাসময়ে উপস্থিত হবেন কি না সে বিষয়ে কমিশনকে কিছু জানাননি বা অবগত করেনি। আজ অফিস সময়ের মধ্যে কমিশনে উপস্থিত হয়ে তার বক্তব্য প্রদান না করলে অনুসন্ধান টিম আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তিনি বলেন, আগামীকাল সোমবার তার স্ত্রী ও কন্যাদের উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুসন্ধানকারী টিম নোটিশ প্রদান করেছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারাও উপস্থিত না হন তাহলে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান টিম আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

সচিব আরও জানান, গত ২১ জুন বেনজীর আহমেদ কমিশনে একটি চিঠি দিয়ে তিনি, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামের সম্পদ সম্পর্কে তাদের অবস্থান বর্ণনা করা হয়েছে। ওই চিঠিতে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় চাওয়া হয়নি।

বিভিন্ন সূত্রে তথ্যানুসারে বেনজীর আহমেদ সপরিবারে বিদেশে রয়েছেন, এখনও দেশে ফেরেননি। অন্যদিকে বেনজীরের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বেনজীর আহমেদকে ২৩ জুন এবং তার স্ত্রী ও দুই কন্যাকে ২৪ জুন জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। যদিও প্রথম দফায় তলবে তারা হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন করে।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন ও স্ত্রী জীশান মীর্জা ও দুই মেয়েকে ৯ জুন প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি বা তারা দেশে নেই। যদিও দুদক থেকে তাদের বিদেশ যাত্রায় কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।

গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

বিভিন্ন সূত্রে জানায়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের জব্দ জমি বিক্রি, হস্তান্তর বন্ধে আদালতের আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে। জমি অন্য কারোর নামে যাতে নামজারি না করা হয় সেজন্য আদালতের রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়। এ ছাড়া কোম্পানির মালিকানা হস্তান্তর বন্ধে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে আদালতের ওই আদেশ পাঠানো হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকে জমা থাকা টাকা উত্তোলন বন্ধে অবরুদ্ধের আদেশ সোনালী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

গত ২৩ মে আদালতের আদেশে সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত। অন্যদিকে গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্লাট জব্দের আদেশ দেন। গত ২৩ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৬২৭ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে।

এরই ধারবাহিকতায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ কার্যকর চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে।

৮ মে বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের মাছ গভীর রাতে চুরির সময় ৬০০ কেজি হাতেনাতে জব্দ করে।

দুদক গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের আইজি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব এবং র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাদের মধ্যে বেনজীরও ছিলেন বলে জানা গেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 2113
  • Total Visits: 1090152
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1639

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
  • ২৫শে রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ৯:১১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
30      
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018