অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করতে পার্বত্য এলাকায় যেসব তরুণকে ট্রেনিং দেওয়া হয়, তাদেরকে ব্যবসার মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রলোভনও দেওয়া হয়।
ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার বিষয়টি আকৃষ্ট করত তরুণদের। যার ফলে তারা সহজে বিপথগামী হতেন। তবে সেখানে যাওয়ার পর কেউ পালিয়ে আসতে চাইলে কিংবা প্রতিবাদী হলে ছিল কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা।
নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার’ দুই সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম সিটিটিসি।
পুলিশের বিশেষ ইউনিটটি বলছে, নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রধান ছিলেন শামীম মাহফুজ। ট্রেনিংয়ের সময় ক্যাম্পে তার থাকার গেটে সশস্ত্র পাহারা থাকত। তার নেতৃত্বে পাহাড়ে তরুণদের সামরিক কসরত, অস্ত্র চালানো, পিটি প্যারেড, সন্ধ্যার পর বয়ান শোনানো হতো।
বুধবার রাতে সিলেট ও রাজধানীতে পৃথক অভিযানে দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- সাইফুল ইসলাম তুহিন ও নাইম হোসেন। দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।
সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নতুন জঙ্গি দলে অনেকে স্ব-প্রণোদিত হয়ে জিহাদ করার জন্য যোগ দিয়েছে তেমনি অনেককে মিথ্যা প্রলোভনে নিয়ে যাওয়া হয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেকের বের হয়ে আসা সম্ভব হয়নি। আমরা যাদেরকে গ্রেপ্তার করেছি, তাদের মধ্যে তুহিন ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর হিজরতের উদ্দেশ্যে জঙ্গিবাদে জড়িত হয়। সে কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। স্থানীয় মসজিদের ইমামের মাধ্যমে সে জঙ্গিবাদে জড়ায়। এরপর তাকে পাহাড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। তবে সেখানে গিয়ে কি করা হবে সে বিষয়ে তুহিন অবহিত ছিল না। তবে বলা হয়েছিল, পাহাড়ে ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি ব্যবসাও করতে পারবে। এদিকে গ্রেপ্তার অপর জঙ্গি নাইম হোসেন শুদ্ধ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িত হয়।’
পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্ত এলাকায় ট্রেনিং সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল জানিয়ে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, মিজুরাম সীমান্ত বা মিজুরামের ভেতরে ট্রেনিং সেন্টার গড়তে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে তারা পিছু হটে। এরপর অন্য একটি পাহাড়ে ‘রাতলং ক্যাম্প’ গড়ে তোলে।
ট্রেনিং ক্যাম্পে বিদ্রোহ করলেই শাস্তি : দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যুবকরা ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার পর যখন সেখান থেকে চলে আসার চেষ্টা করলে তাদের শাস্তি দেয়া হতো। বিশেষ করে শাস্তি হিসেবে সারাদিন গাছের সঙ্গে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো। দোররা মারা হতো। প্রতিদিন কত দোররা মারা হবে সেই নির্দেশনা আমিরের কাছ থেকে নেয়া হতো। তাছাড়া শাস্তি স্বরূপ একবেলা খাবার দেয়া হতো এবং ক্যাম্পের সারাদিনের সব কাজ (কাপড় কাচা, রান্না বান্না) করানো হতো। অক্টোবরে পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অভিযান শুরু হলে গ্রেপ্তার দুই জঙ্গি দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এরপরই তারা গ্রেপ্তার হন।’
Leave a Reply