হযরত আলী (রাঃ) বর্ণনা করিয়াছেন, একদা রসুলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীগণের এক মজলিসে বসিয়া ছিলেন, তখন ইহুদীদের একটি দল তথায় উপস্থিত হইয়া বলিল, হে মুহাম্মদ (সঃ)! আমরা আপনার নিকট কিছু প্রশ্ন করিব, যাহার উত্তর আল্লাহর নবী ব্যতীত অন্য কেহই দিতে সক্ষম নয়। তখন রসুলুল্লহ (সঃ) ফরমাইলেন, তোমরা তোমাদের প্রশ্ন করিতে পার। অতঃপর ইহুদী লোক প্রশ্ন করিয়া বলিল ‘আপনার উম্মাৎগণের জন্য যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করা হইয়াছে উহার উদ্দেশ্য ও কারণ কি ‘ তদ্দুত্তরে রাসুলুলাহ (সঃ) যথাবিহীত নিম্নের উত্তর দিলেন ঃ
ফজরের নামায ফরজ হইবার কারণ ও উদ্দেশ ঃ আদম (আঃ) যখন দুনিয়ায় আগমন করিয়াছিলেন তখন রাত্রির অন্ধকার ছিল। তিনি বেহেশতে থাকাবস্থায় অন্ধকার দেখেন নাই, তাই তিনি ভীতিজনক অবস্থায় রাত্রি যাপনের পরে যখন সুহহে সাদেক হইয়াছিল তখন তাঁহার অন্তর হইতে ভয়-ভীতি দূর হইয়া গিয়াছিল। তাই তিনি এই সময় আল্লহর শুকুর গুজারীর জন্য দুই রাকয়াত নামায আদায় করিয়াছিলেন। এই কারণে মহান আল্লাহ তা’আলা উম্মাতে মুহাম্মাদীর প্রতি সূর্য উদয়ের পূর্বে এই দুই রাকয়াত নামায ফজরের ওয়াক্তে ফরজ করিয়া দিয়াছেন। উম্মাতে মুহাম্মাদীগণ কবর ও হাশরের অন্ধকার হইতে মুক্তি পাইবার উদ্দেশ্যে এই নামায আদায় করিতেছে। আর ফররের নামাযের পরে যখন সূর্য উদিত হয় তখন উহা শয়তানের মস্তকের উপর দিয়া উদিত হইতে থাকে। এই সময় মুশরিক বে-দ্বীনরা তাহাদের উপাস্য মাটির মূর্তি দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে সিজদা করিয়া থাকে, আসলে তাহারা শয়তানের নামেই সিজদা করিয়া থাকে। তাই আল্লাহ তা’আলা উহার পূর্বেই ফজরের নামায আদায় করিতে হুকুম করিয়াছেন, যাহাতে আমরা মুশরিক বেঈমানের দলভূক্ত না হই।
যোহরের নামায ফরজ হইবার কারণ ঃ সূর্য যখন পশ্চিমাকাশে একটু হেলিয়া পড়ে, তখন ফেরেশতাগণ আসমানে থাকিয়া আল্লাহ তা’আলার ইবাদতে লিপ্ত হইয়া থাকে। এই সময় আসমানের দরজা উন্মুক্ত হইয়া যায় এবং ফেরেশতাদের সমস্ত ইবাদত আল্লাহ তা’আলার নিকট পৌছিয়া থাকে। এই কারণেই আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মদ (সঃ) ও উম্মাতে মুহাম্মাদীগণের প্রতি এই সময় জোহরের নামায ফরজ করিয়া দিয়াছেন। আর আমরা এই উদ্দেশ্যে এই সময় যোহর নামায আদায় করিতেছি যে, আমাদের ইবাদত ফেরেশতাদের ইবাদতের সঙ্গী হইয়া যেন আল্লাহর দরবারে পৌঁছিয়া যায়। (যেই ব্যক্তি যোহরের নামায আদায় করিবে তাহার জন্য আল্লাহ তা’আলা দোযখের আগুন হারাম করিয়া দিবেন। মাজালিসে ছানিয়া)
আসরের নামায ফরজ হইবার কারণ ঃ এই সময় বেহেশতে থাকিয়া শয়তানের ধোঁকায় পতিত হইয়া হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া (আঃ) নিষিদ্ধ গন্ধম ফল খাইয়াছিলেন। ইহার কারণে তাহারা বস্ত্রহীন হইয়াছিলেন এবং আল্লাহর হুকুম অমান্য করিবার কারণে বেহেশত হইতে বহিস্কৃত হইয়া দুনিয়ায় পতিত হইয়াছিলেন। এই কারণে আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মদ (সঃ) ও উম্মাতে মুহাম্মাদীর প্রতি আসরের নামায ফরজ করিয়া দিয়াছেন। আর আমরা শয়তানের ধোঁকা হইতে পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে এই আসরের নামায আদায় করিতেছি।
মাগরিবের নামায ফরজ হইবার কারণ ঃ আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কারণে হযরত আদম (আঃ) দুনিয়ায় নিক্ষিপ্ত হইয়া আল্লহর দরবারে যে দোয়া ও তওবা করিয়াছিলেন উহা মাগরিবের সময় তিনি কবুল করিয়াছিলেন। তাই আদম (আঃ) ইহার শুকুর গুজারীর জন্য যেই নামায পড়িয়াছিলেন, উহাই আল্লাহ তা’আলা আমাদের প্রতি ফরজ করিয়া দিয়াছেন। অতএব আমরা এই উদ্দেশ্যে মাগরিবের নামায আদায় করিতেছি ও দোয়া প্রার্থনা করিতেছি যে, হযরত আদম (আঃ)-এর দোয়া কবুলের উসিলায় আমাদের দোয়াও আল্লাহ কবুল করিবেন।
এশার নামায ফরজ হইবার কারণ ঃ হযরত মূসা (আঃ) দিনভর চার প্রকার চিন্তায় বিভোর হইয়া অস্থির হইয়াছিলেন। যথা ঃ (১) নীল নদ নিরাপদে পার হইবার চিন্তা, (২) তাঁহার কওমের (জাতির) নীল-নদ পার হইবার চিন্তা, (৩) ফেরাউনের কবল হইতে রক্ষা পাইবার চিন্তা এবং (৪) শত্র“দল তথা ফেরাউন ও তাহার দলবলের ধ্বংস হইবার চিন্তা। দয়াময় আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা (আঃ)-কে উক্ত চার প্রকার চিন্তা হইতে এশার সময় নীল নদ পার করাইয়া মুক্ত করিয়াছিলেন এবং ফেরাউন ও তাহার দলবলকে নীল নদে ডুবাইয়া ধ্বংস করিয়াছিলেন। হযরত মূসা (আঃ) নীলনদ পার হইয়া উক্ত চার প্রকার চিন্তা হইতে মুক্তি পাইয়া এই সময় আল্লাহর শুকুর গুজারীর জন্য চার রাকয়া’ত নামায পড়িয়াছিলেন। আল্লাহ তা’আলা এই চার রাকয়াত নামাযই আমাৎেদ প্রতি ফরজ করিয়া দিয়াছেন। তাই উম্মাতে মুহাম্মাদীগণ যাহাতে এই নামায আদায়ের বরকতে কেয়ামত পর্যন্ত হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করিয়া বিজয়ের গৌরব অর্জন করিতে পারে এবং আল্লাহর শুকুর গুজারী করিতে পারে সেই জন্য এই নামায আদায় করিতেছি।
Leave a Reply