30 Nov 2024, 06:37 pm

পেঁয়াজ সংরক্ষণে দেশের ৭ জেলার ১২ উপজেলায় নির্মাণ করা হচ্ছে ৩শত ‘মডেল ঘর’

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : পেঁয়াজ সংরক্ষণে দেশীয় পদ্ধতিতে ‘মডেল ঘর’ তৈরির কার্যক্রম চলছে। এর মাধ্যমে সফলভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে দেশে পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতা ও সংকট দূর হবে এবং পেঁয়াজ নিয়ে রাজনীতিও বন্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কৃষি বিপণন অধিদফতর নির্মিত এসব মডেল ঘরে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশে চাহিদার চয়েও বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু এক-তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁয়াজের ঘাটতি হয়, দাম অস্বাভাবিক হয়, নানান রকম রাজনীতি শুরু হয়। পাশের দেশ ভারত থেকেই আমদানি বেশি করতে হয়। ভারত অনেক সময় রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে, এতে চরম সংকট দেখা দেয়। সেজন্যই সরকার পেঁয়াজ সংরক্ষণে গুরুত্ব দিচ্ছে।

পেঁয়াজ খুবই পচনশীল ফসল। এটি সংরক্ষণ করে রাখা কঠিন। দ্রুত শুকিয়ে যায়, পচে যায়। এর ফলে কৃষকেরা মৌসুমে কম দামে দ্রুত পেঁয়াজ বিক্রি করে দেন। মৌসুম শেষ হলে পেঁয়াজের বাজার আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের হাতে চলে যায়। সেজন্য পেঁয়াজ সংরক্ষণের এই পরীক্ষামূলক ঘর চালু করা হয়েছে।

বিশেষ ধরনের এসব ঘরে চার থেকে পাঁচ মাস পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। এটিতে সফল হলে দেশে পেঁয়াজের সংকট হবে না। আমদানিও করতে হবে না। বরং রফতানি করা যাবে। পেঁয়াজ সংরক্ষণের মডেল ঘরে ব্যবহৃত বিদ্যুৎকে ভর্তুকি বা কৃষিখাতে বিবেচনা করার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

কেমন হবে এসব ঘর : পেঁয়াজ সংরক্ষণের দেশীয় মডেল ঘরে বাতাস চলাচলের জন্য ছয়টি বায়ু নিষ্কাশন পাখা সংযুক্ত রয়েছে। মূলত ভ্যান্টিলেশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকার কারণেই সংরক্ষিত পেয়াজ-রসুন পঁচবে না। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিমাপের জন্য প্রতিটি ঘরে হাইগ্রোমিটার রয়েছে। প্রতিটি ঘরের আয়তন প্রায় ৩৭৫ বর্গফুট। প্রতিটি ঘরে ২৫০ থেকে ৩০০ মণ (১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন) পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। তিনটি স্তরের এই সংরক্ষণ ঘরের স্থায়িত্ব কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ বছর।

২৫ কোটি টাকার প্রকল্প : কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের জুলাই থেকে জুন ২০২৬ সালের জুন। এ প্রকল্পের মোট বাজেট ২৫ কোটি টাকা। ঢাকা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা এই সাত জেলার ১২টি উপজেলায় ৩০০টি ঘর নির্মাণ করা হবে। এবছর ২০২২-২৩ সালে মোট ৮০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ২৫০-৩০০ মণ পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ করা যাবে।

পেঁয়াজের চাহিদা কত : কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। এবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদিত হয়েছে ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ। পেঁয়াজের সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে বিভিন্ন ধাপে অপচয় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাদে গত বছর নিট উৎপাদন হয়েছে ২৪ লাখ ৫৩ লাখ মেট্রিকটন। বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ লাখ মেট্রিক টন।

২০২১-২২ অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়ন করছে রোডম্যাপ। এতে ব্যাপক সাফল্য মিলেছে। গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টন। দুই বছরে আগে যেখানে উৎপাদন হতো ২৫ লাখ টনের মতো, এখন উৎপাদন হচ্ছে ৩৫ লাখ টনের মতো। বিপরীতে দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। এর ফলে দেশে পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকার কথা, আমদানির প্রয়োজন না থাকার কথা। কিন্তু উৎপাদিত পেঁয়াজের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায় বলে আমদানি করতে হচ্ছে। এছাড়া পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনও প্রযুক্তি বা কোল্ড স্টোরেজ দেশে নাই। তবে দেশীয় এই মডেল ঘরে কৃষকেরা তিন থেকে চার মাস পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা : জানতে চাইলে ফরিদপুরের পেঁয়াজ চাষি গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, এখন প্রতি বছরই পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হচ্ছে। কিন্তু পেঁয়াজ পচনশীল হওয়ায় সংরক্ষণ করা আমাদের জন্য অসম্ভব। সংরক্ষণের অভাবে মধ্যস্বত্তভোগীরা সুবিধা নেয় বলে মাঝেমধ্যেই পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। তবে পেঁয়াজ সংরক্ষণে যে সব মডেল ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলো সম্পন্ন হলে এই সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, সফলভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলে দেশে পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতা ও সংকট দূর হবে এবং পেঁয়াজ নিয়ে রাজনীতি বন্ধ হবে। সেজন্য পেঁয়াজ সংরক্ষণে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।

তিনি জানান, পেঁয়াজ সংরক্ষণের মডেল ঘরে ব্যবহৃত বিদ্যুৎকে ভর্তুকি বা কৃষিখাতে বিবেচনা করার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 5383
  • Total Visits: 1352854
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২৮শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৬:৩৭

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018