অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইহুদিবাদী ইসরাইল অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনির গাজায় একটি হাসপাতালে ধ্বংসাত্মক বোমা হামলা চালিয়ে খুব কম সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ অপরাধ ও পৈশাচিক গণহত্যা চালিয়েছে।
সোমবার রাতে আল-আহলি ব্যাপটিস্ট নামের ওই হাসপাতালে এমকে -৮৪ নামের মার্কিন বোমা দিয়ে আঘাত হানে ইসরাইল। এক হাজার টনের এই ধ্বংসাত্মক বোমার আঘাতে ৫০০ থেকে ১৫০০ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। বোমার আঘাতে বহু মানুষের শরীর ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাওয়ায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা বের করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। গত ১২ দিনে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা অন্তত সাড়ে তিন হাজার এবং আহতের সংখ্যা অন্তত ১২ হাজার বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে হামলার পর নেতানিয়াহুর ডিজিটাল মুখপাত্র এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছিলেন, হাসপাতালটির কাছে হামাসের ঘাঁটি আছে ভেবে ইসরাইল সেখানে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু পরে সেই বার্তা মুছে ফেলা হয়। ইসরাইল পরে এক বানোয়াট অভিযোগ প্রচার করতে থাকে যে ইসলামী জিহাদের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ওই হাসপাতালে আঘাত হানায় সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে। ইসলামী জিহাদ এই দাবিকে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। কারণ ইসরাইল এখানে বোমা হামলা চালাবে বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। মার্কিন সরকার ও তার পশ্চিমা মিত্র সরকারগুলো ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও নেতৃবৃন্দ গাজায় ইসরাইলের এই পৈশাচিক হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং একে যুদ্ধ-অপরাধ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কেবল নিন্দা প্রস্তাব পাস করাই যথেষ্ট নয়। মার্কিন ভেটোর কারণে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব ও গাজায় ত্রাণ সরবরাহের লক্ষ্যে যুদ্ধ-বিরতি ঘটানোর প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেছে। প্রশ্ন হল ইসরাইল কেন গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে গাজায়?
প্রথমত ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালিয়ে হামাসের সাম্প্রতিক নজিরবিহীন হামলার বিপর্যয় ও গ্লানি ঢাকার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত গাজার ব্যাপারে ইসরাইল পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করছে যাতে এই উপত্যকা ফিলিস্তিনিদের জন্য বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে এবং এর ফলে তারা বাধ্য হয়ে গাজা ছেড়ে মিশর বা অন্য কোনো স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। বলা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিশরের সিসি সরকারের ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি করছে যাতে তারা গাজার জনগণকে মিশরের সিনাই মরুভূমি বা অন্য কোনো স্থানে আশ্রয় দেন এবং এই লক্ষ্যে মার্কিন সরকার তার কাছে মিশরের ঋণ বা দেনাগুলো মাফ করে দেয়ার লোভ দেখাচ্ছে। গাজায় বেশ কিছু দিন ধরে পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। অন্যদিকে মিসরের সঙ্গে রাফাহ ক্রসিং পয়েন্টও খুলতে দিচ্ছে না যাতে গাজাবাসীর জন্য জরুরি ত্রাণ সাহায্য আসতে পারে।
ইসরাইল অতীতেও জেনে শুনে বেসামরিক অবস্থানে বহু গণহত্যা চালিয়েছে। ১৯৪৮ সালে দের ইয়াসিন গণহত্যা, ৮০’র দশকে সাবরা শাতিলা গণহত্যা এবং ৯০’র দশকে কানা ক্যাম্প বা গ্রামে চালানো গণহত্যা এসবের অন্যতম। আর সব সময়ই এইসব গণহত্যার শরিক ছিল মার্কিন সরকার বা ব্রিটেন এবং পশ্চিমা শক্তিগুলো ইসরাইলকে নির্লজ্জভাবে সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে গেছে। এখনও সেই অবস্থার অবসান হয়নি। দুঃখজনক বা তিক্ততম বাস্তবতা হল মুসলিম বিশ্বের অনৈক্য এবং প্রতিরোধমূলক সাহসী পদক্ষেপের অভাবে ইসরাইল বার বার ফিলিস্তিনি জাতির ওপর নৃশংস গণহত্যা চালানোর সাহস পাচ্ছে।
ইহুদিবাদী ইসরাইল পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদেরকেও সেখান থেকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে চায় ও তাদেরকে জর্দানে পাঠাতে চায় জোর করে যাতে ইসরাইলের নিরাপত্তার কোনো সংকট ফিলিস্তিন অঞ্চলে আর দেখা দিতে না পারে। মুসলিম বিশ্বের জনগণ ও এমনকি অমুসলিম বিশ্বের জনগণও ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের নৃশংসতম জুলুম এবং তাদের জবরদখলের বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম সরকারগুলোর উদাসীনতার কারণে মুসলমানদের প্রথম কিবলার দখলদারকে যথাযোগ্য শাস্তি দেয়া ও ফিলিস্তিনি জাতির স্বাধীনতা এবং অধিকারগুলো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি আজ পর্যন্ত। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ওআইসি ও আরব লিগ সক্রিয় হয়ে উঠলে এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষাকারী কয়েকটি প্রভাবশালী আরব ও মুসলিম সরকার ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকামী দলগুলোকে সাহায্য করতে না পারলেও প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান না নিলেও ইসরাইলের পতন ঘটানো খুব কঠিন হবে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
Leave a Reply